E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই

২০১৬ আগস্ট ২৯ ১০:৩৬:০০
রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই

রাজশাহী প্রতিনিধি : গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আর পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুনভাবে প্লাবিত হয়েছে শহরের বেশ কিছু এলাকা। সেই সঙ্গে শহর রক্ষাবাঁধও রয়েছে হুমকির মুখে।

রাজশাহীতে বর্তমানে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি শহরও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে তীব্র উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন নগরবাসী।

তবে, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সামনের দিনগুলোতে আর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। আর শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় তারা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পানি বাড়ার ফলে ইতোমধ্যে মহানগরীর জিয়া নগর, বুলনপুর, পঞ্চবটি ও শ্যামনগর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মহানগরীর সিমলা পার্ক, বিজিবি গার্ডেন, পদ্মা গার্ডেন, বড়কুঠি ও লালনশাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পানি বাঁধকে স্পর্শ করেছে।

এদিকে, মহানগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকা পবার হরিপুর ইউনিয়নের বশরী, হাড়পুর, নবগঙ্গা, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া ও খোলাবোনা এলাকায় পদ্মার পানি ঢুকে পড়েছে। নবগঙ্গা এলাকার বাঁধে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় ১২টি বাড়ি ভেঙে গেছে। পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ২৬০টি পরিবার।

পানি উঠেছে চর খিদিরপুর এলাকার খানপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে। ওই এলাকায় দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট। আর ডুবে গেছে এক থেকে দেড়শ বিঘার সবজির আবাদ।

অপরদিকে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে মহানগরী ছাড়াও জেলার চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ীর অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই এলাকার মানুষ। বাঘার ১১টি স্কুল এরই মধ্যে পানিতে ভেসে গেছে। সেসব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া, পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে গোদাগাড়ী চরে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুইদিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৪০টি বাড়ি। এ নিয়ে গত ১৫ দিনে ১২০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ৮ শতাধিক ঘরবাড়ি। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে হুমান্তনগর থেকে চর বয়ারমারী ঢ্যাংগাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে পদ্মা নদী ভাঙছে। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের হুমন্ত নগর, চর নওশেরা, ডাকরি পাড়া, খাসমহল আমতলা এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিলেও চর বয়ারমারীর নিচুপাড়া, হঠাৎপাড়া, আমিনপাড়া ও ঢ্যাংগা পাড়ায় পদ্মায় নদী বেশি ভাঙছে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ফিট করে নদীর পাড় ভাঙতে থাকায় নদী তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮ দশমিক ৩১ মিটার। শনিবার সকাল ৬ টায় পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৩৮ মিটার। ওই দিন বিকেলে পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৪০ মিটার। পরদিন রবিবার বিকেল পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ সেন্টিমিটার।

এদিকে, বাঁধের টপ লেভেলের সর্বোচ্চ উচ্চতা ২১ দশমিক ৫০ মিটার। এর আগে গত ২০১৩ সালে ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই দিন পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার।

তবে, গত বছর পদ্মার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত মহানগরীর বুলনপুর পুলিশ লাইন সংলগ্ন বাঁধের কিছু অংশ দেবে যাওয়ায় ওই অংশে রবিবার সকালে বালুর বস্তা ফেলা হয়। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের টিবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল ঠেকাতে ইতোমধ্যে বালুর বস্তা ফেলছে পাউবোর শ্রমিকেরা।

এ ব্যাপারে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, সামনের দুই একদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজশাহীর মাটি ভালো হওয়ায় সমস্যার কিছু নেই। বর্তমানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বাঁধের অংশে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। আর নদীর পানি মনিটরিংয়ের জন্য সব সময় তারা সতর্ক রয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সরকারি অনুদান রাজশাহীতে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test