E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে সরকারি বই চুরির অভিযোগ, মামলা নিতে গড়িমসি

২০১৬ সেপ্টেম্বর ০২ ২২:৩৩:৩৬
মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে সরকারি বই চুরির অভিযোগ, মামলা নিতে গড়িমসি

শরীয়তপুর  প্রতিনিধি : গোসাইরহাট শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার ২৫ মন সরকারি বই চুরি করে বিক্রির সময় জনতার হাতে ধরা পরে। ওই মাদ্রাসায় কর্মরত উপজেলা যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার সহায়তায় মাদ্রাসা সুপার বইগুলো বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থানায় একটি মামলা দায়ের করার ২০ ঘন্টা পার হলেও অদৃশ্য কারনে মামলা রেকর্ড করেনি থানা। বই চোরের বিচারের দাবিতে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় শত শত শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলা ইদিলপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালি গ্রামে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সুপার জামাত নেতা ফকরুল ইসলাম আনসারি বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদ্রাসার ২৫ মন সরকারি বই চুরি করে একজন পুরোনো কাগজ ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয়। বিক্রয়কৃত বই নিয়ে যাওয়ার সময় মাদ্রাাসা থেকে অন্তত ৮ কিলোমিটার দুরে সামন্তসার বাস স্ট্যান্ডের সামনে এলাকার লোকজন আটক করে। সংবাদ পেয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বইগুলো উদ্ধার করে। অনেকগুলো বস্তা ভর্তি বই খুলে দেখা যায়, এর মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত ২০১৬ সালের জন্য পাঠ্য ৭ শত ৫৫ টি নতুন বই রয়েছে।

মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কোন নতুন বই বিক্রি করার বিধান প্রতিষ্ঠান প্রধানের নেই। বই পুরনো হয়ে গেলে তা শিক্ষা অফিসে ফেরৎ দিতে হবে অথবা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিক্রি করা যেতে পারে। সেই বই খাতা বিক্রি বিক্রয়লব্ধ টাকা প্রতিষ্ঠান তহবিলে জমা দিতে হবে। স্থানীয় অভিভাবক ও মাদ্রাসার আরো কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত ৮ বছর যাবৎ ফকরুল ইসলাম আনসারি এই মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রকাশ্য একজন জামায়েতে ইসলামীর নেতা। মাদ্রাসায় কর্মরত শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষক ও গোসাইরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান মৃধার সহায়তায় সুপার আনসারি বিভিন্ন ধরনের অপরাধ অপকর্ম করেই চলেছে। যুবলীগ নেতার কারনে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায়না।

ফকরুল ইসলাম আনসারির বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায়। এর আগে তিনি চাটখিল মাদ্রাসায় চাকুরী করা অবস্থায় বিধি বহির্ভূতভাবে অর্থ আত্মসাতের দায়ে চাকুরীচ্যুত হয়েছিল। এর পর তিনি চাঁদপুর জেলার একটি মাদ্রাসায় চাকুরীর সময় চাঁদপুর জেলা জামাতের রোকন ছিলেন। অপকর্মের কারনে চাঁদপুর থেকেও তিনি চাকুরী হারান। এরপরে তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

চুরি হওয়া বই উদ্ধার হওয়ার পর শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার পরে মাদ্রাসা সুপারকে আসামী করে গোসাইরহাট থানায় একটি মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন। শুক্রবার বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সেই মামলা রেকর্ড করেনি থানা কর্তৃপক্ষ। এদিকে বার বার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি সুপার আনসারির সাথে। তার মুঠো ফোনটি বরাবরই বন্ধ পাওয়া যায়। বই উদ্ধার হওয়ার পর তিনি পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।

মাদ্রাসার একজন সহকারি শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আনসারি ৮ বছর যাবৎ এই মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই তিনি নানান ধরনের অপরাধ করে আসছেন। মাদ্রাসার শরীর চর্চা শিক্ষকের প্রভাবে তিনি সকল ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। এই বই বিক্রির বিষয়েও শরীর চর্চা শিক্ষক নুরুজ্জামান মৃধার হাত রয়েছে।

শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষক ও গোসাইরহাট উপজেলা যুলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, আমি এই বই বিক্রির বিষয়ে কিছুই জানিনা। বিষয়টি জানার পরে আমি সুপারকে মোবাইল ফোনে গালি গালাজ করেছি। নুরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করে বলেন, “ মাদ্রাসাটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে, সেহেতু সুপারের যেন কোন সমস্যা না হয় সেদিকে আপনারা একটু খেয়াল রাখবেন”।

গোসাইরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা বিক্রি হওয়া বইগুলো উদ্ধার করেছি। সুপারের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দিয়েছি। বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার পরে গোসাইরহাট থানায় একটি মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেছি।

গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি তদন্ত) সৈয়দ এমদাদুল হক বলেন, মাদ্রাসার বই বিক্রি বিষয়ে একটি এজাহার পেয়েছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

(কেএনআই/এএস/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬)


পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test