E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শত বছরের আছিরন বেগম

২০১৬ সেপ্টেম্বর ১৪ ২২:৩৫:৩৯
শত বছরের আছিরন বেগম

দেবাশীষ বিশ্বাস : রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে ২৩ কি.মি দূরে খামারমাগুরা গ্রামে ছোট্ট একটি পাটকাঠি দিয়ে ঘেরা ঘরে বাস করে আছিরন বেগম। স্থনীয়রা বলছে, আছিরন বেগমের ওরফে পাঁচকানির বয়স ১২০-১২৫ বছর কিন্তু ভোটার তালিকায় জন্ম তারিখে দেখা যায় জন্ম তারিখ ১৯ জানুয়ারী, ১৯০৮ ইরেজী। আজ ঈদের পরের দিন সকাল সকাল ৮.০০ টায় সময় আছিরন বেগমের বাড়ী গেলে দেখা যায় তিনি বাড়ী থেকে জীবিকার সন্ধানে ভিক্ষা করতে বের হয়েছেন। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর ভুমিহীন আছিরন বেগমকে পাওয়া যায় স্থানীয় একটি বাজারে ভিক্ষা করতে।

বাবা-মা নিজ হাতে বিয়ে দেয় আছিরন বেগমকে কিন্তু বিয়ের অল্প দিনেই বাবা-মাকে হাঁরিয়ে এতিম হয়ে যায় আছিরন বেগম কিন্তু নির্মমতা সেখানেই শেষ নয়। এর কিছুদিন পরেই কলেরায় মৃত্যু হয় স্বামী জনি উদ্দিন মোল্যার।

তিনি বলেন, কড়ি দিয়ে আমি এক সময় বাজার করে খেতাম কিন্তু সাহেবরা অবিশ্বাস করে আমার বয়স কম দেখিয়েছে। বর্তমানে নিঃসন্তান হয়ে জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে অসহায় হয়ে পড়েছে এক সময়ের সংগ্রামী আছিরন বেগম। তিনি আরো বলেন, এখন এক বাড়ী থেকে অন্য বাড়ী যেতে খুব কষ্ট হয়। রাষ্ট্র থেকে কি ধরনের সহযোগিতা দেয় এমন প্রশ্নের জবাবে আছিরন বেগম বলেন, গত বছর স্থানীয় মেম্বার একখানা বয়স্ক ভাতা করে দেয়। ভাতা এবং ভিক্ষার টাকা দিয়েই দিন পার করতে হয় অছিরন বেগমের।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ ইউসুফ শেখ বলেন, আমরা পরিষদ থেকে শুধুমাত্র বয়স্ক ভাতা এবং দুই ঈদে নামমাত্র কিছু সাহায্য ছাড়া অন্যকিছু দিতে পারি না। আছিরন বেগম এক সময় কান্না করতে করতে বলেন, মহান আল্লাহ্ আমার কপালে কষ্ট লিখে রেখেছে তাই কষ্টে আছি। তিনি আরো বলেন, আমার তো কোন জমি-জমা নেই, কোন সন্তান-সন্ততি নেই তাঁই কষ্ট করে ভিক্ষা করি। তিনি বলেন, এখন যদি মারা যেতাম তবে আমার আর কোন কষ্ট থাকত না। কিন্তু যদি মৃত্যুর আগে অসুস্থ্য হয়ে ঘরে পরে থাকি তখন কে দেখবে সেই প্রশ্ন তাঁকে বেশি কষ্ট দেয়।

কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আছিরন বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এমন মানুষ কি আর এই দুনিয়াতে আছে যে বৃদ্ধদের সাহায্য করবে।

স্থানীয় শিক্ষক তপন কুমার সরকার বলেন, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো এমন বয়সে আছিরন বেগমের এই কষ্ট দূর করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র থেকে বয়স্কদের সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা দরকার।

(ডিবি/অ/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test