E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কক্সবাজার ফিশারীতে জেটির অভাব, চরম ঝুঁকিতে মৎস্য শ্রমিকরা

২০১৬ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৭:৪৫:২৮
কক্সবাজার ফিশারীতে জেটির অভাব, চরম ঝুঁকিতে মৎস্য শ্রমিকরা

অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সবাজার : বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন’র আওতাধীন কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় শত শত মন সামুদ্রিক মাছ। লেনদেন হয় লাখ লাখ টাকা। কিন্তু যারা এসবের নেপথ্য নায়ক তারাই রয়ে গেছে জীবনের চরম ঝুঁকিতে। এমনটাই বলছেন মৎস্য ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ উঠা-নামার জেটি না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি।

এদিকে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ জেটি নির্মাণে উদাসীন। তাই শ্রমিকদের মাঝে পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ। শ্রমিকরা বলেছেন দাবি আদায় না হলে ঘটবে শ্রমিক বিস্ফোরণ। দাবী আদায়ে তারা রাজপথে নামতেও বাধ্য হবেন বলে জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর নাব্যতা না থাকায় এবং উজানের স্রোতের পানিতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মৎস্য উঠানামার একমাত্র জেটিঘাটটি ভেঙে সম্পূর্ণ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এ কেন্দ্রের জেটি দিয়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শ্রমিকরা আনলোড করে। কিন্তু ওই জেটিটি ভেঙে নদীতে বিলিন হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শ্রমিক ব্যবসায়ী সহ সংশ্লিষ্টদের। যার ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের চরম ঝুকি নিয়ে মাছ, বরফ সহ বিভিন্ন মালামাল পারাপার করতে হচ্ছে। এমনকি মাছ পারাপার করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বর্তমানে ট্রলার থেকে মাছ উঠানামার একমাত্র ঘাটে বালুর বস্তা, বাশের বেড়া দিয়ে কোন রকম মাছ উঠানামা করা হচ্ছে।

মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫-৬৬ অর্থ বছরে কক্সবাজারে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সাগর থেকে আনা বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরণ করে খোলা মাঠে রাখা হতো। তবে সাগর থেকে আহরণ করে আনা মাছ রাখার স্থান না থাকায় ১৯৯৮ সালে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। প্রতিষ্ঠা পর থেকে এ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর মাছের রয়েলিটি বা টোল, বরফ মিল থেকে উৎপাদিত বরফ বিক্রি ব্যবসায়ীদের জন্য ভাড়া ও লিজ সহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়।

অথচ এত টাকার রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের মৎস্য অবতরণের কেন্দ্র এর দুই তলা বিল্ডিংটির বৃহৎ একটি অংশ ইতিপূর্বে নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে। মাছ উঠা নামার যে জেটি ছিল সেটিও বিলিন হয়ে গেছে নদীতে। ফলে মৎস্য শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে ফিশিং বোট থেকে মাছ উঠা-নামা করতে গিয়ে যে কোন মুহুর্তে জীবনহানীর মত দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছে ভুক্তভোগী মৎস্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।

সদর উপজেলা লোড আন-লোড মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আবদু সালাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন সবুজ জানান, মাছ উঠা নামার কোন জেটি না থাকায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যে আমাদের মাছ আনলোড করতে হয়। আমরা ২শতাধিক শ্রমিক প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র থেকে আহরিত মাছ আনলোড করি। কিন্তু আমাদের জীবনের ঝুঁকির কথা কেউ চিন্তা করে না। একটি জেটি নির্মাণের জন্য বিএফডিসি ব্যবস্থাপকের কাছে অনুরোধ জানালে, তিনি উদাসিন আচরণ করেন আমাদের সাথে।

আমাদেরকে মানুষ বলেই তিনি মনেই করেন না। তার আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা ও জেটি নির্মাণের দাবিতে আমরা অচিরেই কর্মসূচী ঘোষনা করব। হয়তো মৎস্য উঠা-নামা বন্ধ করে দিব। তাই আমাদের দাবি শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবী একটি জেটি দ্রুত নির্মাণ করবেন।

মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সভাপতি ওসমান গণি টুলু জানান, এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে একটি জেটি নির্মাণ সময়ের দাবী। এখানে জেটি না থাকায় লোড আন লোড শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ উঠা-নামা করছেন। তাদের পাশাপাশি আমরা মৎস্য ব্যবসায়ীরাও একটি জেটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছি। যদি শ্রমিক ধর্মঘট সৃষ্টি হয়, তবে সবচাইতে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই শ্রমিক আন্দোলন হওয়ার আগেই যদি কর্তৃপক্ষ জেটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করেন তবে সকলের উপকার হবে।

বিএফডিসি ব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম জানান, আন লোড শ্রমিকরা আমার কাছে এসেছিল। তাদের দাবি আমি শুনেছি। জেটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমি কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।

জেলা মৎস্য ফিশিংবোট শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান বাহাদুর জানিয়েছেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফেশারীঘাটে উঠানামার একমাত্র জেটি ইতিপূর্বে ভেঙে গিয়ে নদীতে বিলিন হওয়ায় প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। তাই দ্রুততম সময়ে ওই জেটি নির্মাণ করার দাবী জানান তিনি।

(একেডি/এএস/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test