E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

লোহাগড়ায় ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র পাঁচ জন ডাক্তার!

২০১৬ অক্টোবর ১১ ১৫:৩১:৫৩
লোহাগড়ায় ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র পাঁচ জন ডাক্তার!

রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র ডাক্তার সংকট বিরাজ করছে। ফলে অত্র অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়েছে যে, ডাক্তার সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে এই কমপেক্সটি নিজেই রোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কাগজে কলমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল সংকটের কারনে বাস্তবে ৩১ শয্যার সেবা পাচ্ছে রোগীরা। এখানে মোট ২১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে হাসপাতালে মাত্র ৫ জন ডাক্তার কর্মরত। প্রতিদিন এই হাসপাতালে ২’শ থেকে ৩’শ রোগী সেবা নিতে আসেন। আগত রোগীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পাননা বলে এন্তার অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৩ জন ডাক্তার রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আউট ডোরে রোগীদের প্রচন্ড ভিড় থাকে। আউটডোরের ডাক্তার মহিউদ্দিন বলেন, আমার মুল কর্মস্থল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে হলেও চিকিৎসক স্বল্পতার কারনে একই সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গোপীনাথপুর গ্রামের রোজিনা খাতুন বলেন, ‘এতবড় হাসপাতালে ১ ঘন্টা অপেক্ষার পর লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে পেরেছি। এখন ৫০জন রোগীর পেছনে ছোট বাচ্চাকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছি’।

উপজেলার সত্রহাজারী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক সবুর কাজী ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে চিকিৎসা প্রত্যাশী মানুষজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলেও তারা প্রকৃত কোন চিকিৎসা সেবা পান না। কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাদেরকে ঔষুধের পরিবর্তে পরামর্শ দিয়ে থাকেন’।

পৌর শহরের লক্ষীপাশা গ্রামের শিক্ষক সোমা মুখার্জি বলেন, ‘লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার কারনে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে কেউই প্রয়োজনীয় সেবা পান না। এটি এখন পরামর্শ কেন্দ্র হিসেবে পরিনত হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, বিগত ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর থেকে কাগজে-কলমে হাসপাতালটি ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করেছে। এর পরে রোগীদের কাছ থেকে ৫০ শয্যার জন্য সেবামূল্য আদায় করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তিন তলা ভবনের নিচ তলায় টিকেট কাউন্টার এবং পাশ্ববর্তী কয়েকটি কক্ষে ডাক্তারদের চেম্বার রয়েছে। নতুন ভবনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন সিলিন্ডার, জরুরী ঔষধ, আলট্রাসনো মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি বিক্ষিপ্ত ভাবে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এ সব সরঞ্জামাদি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া সনোলজিস্ট না থাকায় আলট্রাসনো সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। যা দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বি এম কামাল হোসেন বলেন, উপজেলার মোট জনসংখ্যার তুলনায় হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আগামী সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।

এ ব্যাপারে সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন নাহারের সাথে তার কার্যালয়ে একাধিকবার এ প্রতিবেদক গেলেও তাকে কার্যালয়ে পাওয়া যায় নি। দুপুরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর তিনি বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজে বাইরে রয়েছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তর সংকট প্রসঙ্গে তিনি তার কার্যালয়ে এসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন’।

(আরএম/এএস/অক্টোবর ১১, ২০১৬)




পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test