E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

লোহাগড়ার ১৬৩ অসহায় পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই ‘গুচ্ছগ্রাম’

২০১৪ জুন ১২ ১৫:৪৪:৫৫
লোহাগড়ার ১৬৩ অসহায় পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই ‘গুচ্ছগ্রাম’

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতনিধি : লোহাগড়া উপজেলার ভূমিহীন, অসহায় ও দরিদ্র ১৬৩টি পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে নবনির্মিত গুচ্ছগ্রামে। বর্তমানে এইসব গুচ্ছগ্রামে হাসি-আনন্দে বসবাস করছেন তারা। ভূমিহীন এসব অসহায় মানুষগুলো এখন যেমন নিজ ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন, তেমনি তারা এখন বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারছেন। তারা ফিরে পেয়েছেন নতুন এক জীবন।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে নির্মিত গুচ্ছগ্রামে বেশ সুখে-স্বাচ্ছন্দে নিজ নিজ কর্মের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ভূমিহীন, অসহায় ও দরিদ্র পরিবার গুলো।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউপি’র মাইগ্রাম, নোয়াগ্রাম ইউপি’র রায়গ্রাম, ইতনা ইউপি’র পাংখারচর, মল্লিকপুর ইউপি’র মঙ্গলহাটা ও শালনগর ইউপি’র শিয়েরবর গ্রামে নির্মিত হয়েছে ৫টি গুচ্ছগ্রাম। মাইগ্রাম, রায়গ্রাম ও পাংখারচর প্রকল্পের কাজ প্রায় একবছর আগেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শিয়েরবর প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষের পথে এবং মঙ্গলহাটা প্রকল্পের প্রায় ৬০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে । মাইগ্রাম প্রকল্পে ৩০ টি পরিবার, রায়গ্রাম প্রকল্পে ৪০টি পরিবার, পাংখারচর প্রকল্পে ৩৩ টি পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে । শিয়েরবর ও মঙ্গলহাটা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেখানে ৩০টি করে পরিবার এ সুবিধা পাবেন ।
সম্প্রতি গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে সুবিধাভোগীদের সাথে নানা বিষয়ে কথা হয় । নোয়াগ্রাম ইউপি’র রায়গ্রাম গুচ্ছ গ্রামের ওলিয়ার মোল্যা (৪২) ও জহুর সরদারের স্ত্রী রুনা বেগম (৩৫) বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখানে আমরা ভাল আছি । বিনা পয়সায় ঘর পাইছি । বাড়ির আঙ্গিনায় শাক-সবজির চাষ করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারছি । আমাদের একটু জমিও ছিল না । সরকার আমাদের এ গুচ্ছগ্রামের বাড়ি দিয়েছেন। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখে-শান্তিতে গুচ্ছগ্রামে বসবাস করছি’।
ইতনা ইউপি’র পাংখারচর গুচ্ছগ্রামের মল্লিকা বেগম (২৬), স্বরূপজান (২৮) ও আবুল মোল্যা (৩৬) জানান, ‘নদী ভাঙ্গনে বাড়ি-ঘর চলে যাবার পর অসহায় দিন কাটাচ্ছিলাম। সরকার এখন মাথা গোজার ঠাঁই দিছে। এখানকার কেউ কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক, কেইবা পরের বাড়িতে কাজ করে, কেউ আবার ভ্যান চালায়, কেউবা আবার পরের জমিতে কামলা খাটে । তবে সকলেই বললেন, এখানে খেয়ে-পরে অনেক ভাল আছি । নিজ জমিতে শাক-সবজির চাষ করছি’।
মাইগ্রাম প্রকল্পের বাসিন্দা আকলিমা বেগম (২৮), বাহারণ নেছা (৪০), ওয়াহিদুল ইসলাম (৩৫) জানান, ‘মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে ভিটে-মাটি ছাড়া মানুষ আমরা। গাছতলায়, পরের বাড়িতে ছিলাম । গুচ্ছ গ্রামে ঘর পাইছি, নতুন সংসার পাইছি । দিন মজুরের কাজ করি। নিশ্চিন্তে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারছি। আমরা দারুন খুশি’।
অধিকাংশ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে, তাদের প্রধান সমস্যা তাদের অধিকাংশের জমি মেপে (৪ শতাংশ) সীমানা ঠিক করে দেয়া হয়নি । তাই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মধ্যে এ নিয়ে বিরোধ বাধঁছে। সব চেয়ে বড় সমস্যা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা প্রায়শই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সাথে জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ করেন ও হুমকি দেন । জমি দখলের পায়তারা দিচ্ছেন।
এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা আরো জানান, থাকার ঘর-রান্নাঘর, ল্যাট্রিন, পুকুর, উঠান, টিউবয়েল সবই পাইছি । কিন্তু আমাদের গুচ্ছগ্রামে একটি মসজিদ, স্কুল ও গোরস্থানসহ সব বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। এখানকার বাসিন্দাদের নামাজ পড়তে এবং ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করতে অনেক দূরের গ্রামে যেতে হয় । একটু স্বচ্ছল পরিবারের কেউ কেউ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এ প্রকল্পের ঘর পেতে কাউকে কোন টাকা দিতে হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।
লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু বলেন, অসহায়, গৃহহীন, ভূমিহীন ও দরিদ্রদের জন্য বর্তমান সরকারের এ প্রকল্প অবশ্যই প্রশংসনীয় । কোটকোল ইউপি’র চেয়ারম্যান খান জাহাঙ্গীর আলম ও ইতনা ইউপি’র চেয়ারম্যান শেখ সিহানুক রহমান বলেন, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি সফল প্রকল্প । এ প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় মানুষগুলো মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছে। লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকায় সফলভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেবেকা খান মুঠোফোনে বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটির সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতায় লোহাগড়ায় গুচ্ছগ্রাম দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সাফল্য অবশ্যই সরকারের। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে অসহায় ও ভূমিহীন পরিবারগুলো গুচ্ছগ্রামে বসবাস করে নতুন জীবন শুরু করেছেন।
(আরএম/এএস/জুন ১২, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test