E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জামায়াতের নয়া অামির মকবুলের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাত্তরে হত্যার অভিযোগ

২০১৬ অক্টোবর ১৮ ১৬:৩০:৪৪
জামায়াতের নয়া অামির মকবুলের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাত্তরে হত্যার অভিযোগ

সৈয়দ মনির অাহমদ,ফেনী থেকে :প্রথমবারের মতো দলের শীর্ষ নেতৃত্বে একাত্তরে সংঘটিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে মুক্ত হলো’-এমন আলোচনার মধ্যেই ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে অভিযুক্ত হলেন জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির মকবুল আহমাদ। পাশাপাশি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন বলে অভিযোগ এনেছেন ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান।

তিনি বলেন, ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মকবুল আহমাদ রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তারই নির্দেশে ফেনীর স্থানীয় রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা ওয়াজ উদ্দিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।’

দাগনভূঁঞা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা কমান্ডার শরিয়ত উল্যাহ বাঙ্গালী বলেন, ‘মকবুল আহমাদের নির্দেশে দাগনভূঁঞা উপজেলার জয়লস্কর ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আগুন দিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হয়।’ তিনি তদন্তসাপেক্ষে এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় জামায়াত নেতা মকবুল আহমাদের বিচার দাবি করেন।

কেন্দ্রীয় ও ফেনী জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, মকবুল আহমাদের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপূর ইউনিয়নের ওমরাবাদে। পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। ফেনী মডেল হাইস্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসরের পরই জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গ্রামের বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি। পারিবারিক জীবনে ৪ সন্তানের জনক মকবুল আহমাদ। রুকন থেকে পর্যায়ক্রমে দলটির অঞ্চলভিত্তিক পরিচালক, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতারের পর বিগত প্রায় ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় তিনি আত্মগোপনে থেকেই দল পরিচালনা করেছেন।

জামায়াতের নেতাকর্মীদের কাছে 'মুখলিস' (সৎ) চরিত্রের মানুষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন মকবুল আহমাদ। দলের নেতাকর্মীদের কাছে একাত্তরে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কোনও কিছু বলতে রাজি হননি।

রাজনৈতিক জীবনে ফেনী ২ আসন থেকে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান মকবুল আহমাদ। প্রচারণার আড়ালে থাকা জামায়াতের নতুন আমিরকে নিয়ে অন্যান্য দলের মধ্যেও আলোচনা কম। যদিও গত মাসে তার আমির হওয়ার খবর প্রকাশের পর তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বলেছিলেন, 'মকবুল আহমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের চিত্র খতিয়ে দেখা হোক।'

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে তার বিষয়ে তদন্ত করতেও আহ্বান জানিয়েছিলেন এমএ আউয়াল এমপি।

সোমবার রাতে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এম এ আউয়াল এমপি বলেন, ‘আমি আগেও এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। এখন যদি এ ধরনের অভিযোগ ওঠে, তাহলে আমার শঙ্কাই সত্যি হবে। আমি মনে করি, শিগগিরই মকবুলের একাত্তরের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত।’

ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান অভিযোগ করেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের কাজ চলমান থাকলেও ৭১-এর ঘাতক, তালিকাভুক্ত রাজাকার কেন্দ্রীয় জামায়াতের আমির মকবুলসহ ফেনীর দুই শতাধিক রাজাকার এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।'

জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে ফেনী শহীদ মিনার চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের তালিকাভুক্ত ২০০ জনের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়ে। ফেনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলেন।

ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান মনে করেন, 'একাত্তরের মুক্তিকামী মানুষের রক্তের দাগে রঞ্জিত এমন একজনকে দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বে বসিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের কলঙ্ককে অলঙ্কার হিসেবে ধরে রাখতে চাচ্ছে জামায়াত।'

দাগনভূঁঞা উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের উপজেলা কমান্ডার শরিয়ত উল্যাহ বাঙ্গালী বলেন, ‘মকবুল আহমাদের নির্দেশে রাজাকার মোশাররফ হোসেন মশা দাগনভূঁঞা উপজেলার খুশিপুর গ্রামের আহসান উল্লাহ নামে অন্য এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন। রাজাকার মশা জীবিত আছেন। তার বাড়ি একই উপজেলার সাফুয়া গ্রামে।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী দলের কেন্দ্রীয় আমিরের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার মতো একজন ইসলামি আন্দোলনের নেতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। তার মতো একজন সৎ ও আদর্শ রাজনীতিবিদকে এই ধরনের মিথ্যা কলঙ্ক দিয়ে আদর্শের পথ থেকে কেউ সরাতে পারবে না।’

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয়নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা প্রচারণা। ঘণ্টাখানেক আগেও এসব ছিল না। দায়িত্ব পাওয়ার পর এসব মিথ্য অভিযোগ উঠেছে। আমিরে জামায়াত ও জামায়াতের বিরুদ্ধে এগুলো ষড়যন্ত্র।’

সোমবার আমিরের শপথ গ্রহণের পর মকবুল আহমাদ বলেন, ‘দেশে বিরাজমান সমস্যা ও সংকটের সমাধান আমাদের সবাইকে মিলেই করতে হবে। কোনও একটি দলের পক্ষে কিংবা একা সরকারকে পক্ষ্যে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে চলমান সংকট ও সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। আর এ জন্য সব দল ও পক্ষের অংশগ্রহণে একটি সফল জাতীয় সংলাপের কোনও বিকল্প নেই। তবে জাতীয় সংলাপকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সংলাপের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।'




(এসএমএ/এস/অক্টোবর ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test