E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৪ বছর পর গোসাইরহাট চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নে নির্বাচন

২০১৬ অক্টোবর ২৮ ১৬:১৬:৪৬
১৪ বছর পর গোসাইরহাট চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নে নির্বাচন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চলের দুইটি ইউনিয়নে দীর্ঘ ১৪ বছর পর  নির্বাচন হতে চলেছে আগামী ৩১ অক্টোবর। সীমানা সংক্রান্ত  জটিলতা  নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষের বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের  বিদ্রোহী প্রার্থীদের  মধ্যে। সরকার দলীয় প্রার্থীরা আচরনবিধি ভঙ্গ করলেও সম্পূর্ন শান্তিপূর্ন পরিবেশে নিরপেক্ষ ভোট গ্রহনের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। 

জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সুদীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে, কোর্ট কাচারী আর নির্বাচন কমিশনের লাল ফিতার দৌড়াত্ম পেরিয়ে, অবশেষে ১৪ বছর পরে আগামী ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শরীয়তপুরের গোসাইহাটের দূর্গম চরাঞ্চলের ২টি ইউনিয়নের নির্বাচন। ইউনিয়ন দুটি হলো জেলার সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত পদ্মা-মেঘনার তীর ঘেষা আলাওলপুর ও কুচাইপট্টি ইউনিয়ন। ২০০৩ সালে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ইউনিয়ন দুইটিতে। আলাওলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বেপারী এবং কুচাইপট্টি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার মুন্সি বাদী হয়ে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার হাইমচর ইউনিয়ন ও নীলকোমল ইউনিয়নের সাথে সীমানা জটিলতা দেখিয়ে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়েরের কারনেই মূলত নির্বাচন বন্ধ ছিল দীর্ঘ দিন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশ উৎসব মূখরতার মধ্য দিয়েই চলছে নির্বাচনী প্রচারনা। প্রার্থী ও তাদের স্বজন-সমর্থকেরা বাড়ি বাড়ি মানুষের দোয়া ও সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে এলাকার হাট বাজার, গ্রাম মহল্লা। প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন উঠান বৈঠক করে। আলাওলপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ, বিএনপি উভয় দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেছেন। এরা হলেন, নৌকা প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, আ’লীগের বিদ্রোহী চশমা প্রতীকে মো. ওসমান বেপারী, ধানের শীষ প্রতীকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির স্ত্রী মিসেস কস্তুরুবা ইসলাম সাথী, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের গোলাম মোস্তফা বাচ্চু, আনারস প্রতীকে মো. জাকির হোসেন ও অটো রিক্সা প্রতীকে মো. রাসেল মিয়া। তবে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যেই শেষ লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন এলাকার ভোটার ও সাধারণ লোকেরা।

এদিকে কুচাইপট্টি ইউনিয়নে মাত্র ৩ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তারা হলেন, নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার মুন্সি, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকে মো. নাসির উদ্দিন স্বপন এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মো. আলমগীর হোসেন। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে বিএনপির শক্ত অবস্থান না থাকায় নৌকার সাথে আনারস প্রতীকের আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাসির উদ্দিন স্বপনের সাথেই মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ছারাও আলাওলপুর ইউনিয়নে ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ জন নারী প্রার্থী এবং কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ৩৪ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১০ জন নারী সদস্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

শুক্রবার আলাওলপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, আ’লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আমজাদ হোসেন বেপারীর সমর্থনে আচরনবিধি ভঙ্গ করে সহস্রাধিক লোক মিছিল করে গরীবেরচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করছে। এই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী কস্তুরুবা ইসলাম সাথী অভিযোগ করেছেন, নৌকা সমর্থিত লোকেরা তার কর্মীদের মাইকিং করা ও ব্যানার পোষ্টার লাগাতে বাধা দিচ্ছে, এমনকি তার ব্যবহৃত গাড়িটিও ভাংচুড় করেছে। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করে তিনি বলেন, ৩১ তারিখে কাউকে ধানের শীষে ভোট দিতে দেয়া হবেনা এবং বিএনপির ভোটারদের টেবিলের উপর ব্যালট পেপারে সিল মারতে বাধ্য করানো হবে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এদিকে কুচাইপট্টি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিন স্বপন জানান, আ’লীগ প্রার্থী আবুল বাশার মুন্সির মেয়ের জামাই গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোসাইরহাট উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসির উদ্দিন বিধি ভঙ্গ করে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার শশুড়ের পক্ষে গণসংযোগ করছে। এতে সাধারণ ভোটাররা ভীত ও আতংকিত হয়ে পরছে।

আলাওলপুর ইউনিয়নের আ’লীগ প্রার্থী আমজাদ হোসেন বেপারী বলেন, আমি কোন আচরনবিধি ভঙ্গ করিনি। এলাকার মানুষ নৌকার কথা শুনলে ঘরে বসে থাকতে পারেনা। তাই হাজার হাজার মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে মিছিল সমাবেশ করেছে।

গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসির উদ্দিন বলেন, আমি পার্টির সেক্রেটারী হিসেবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে যাওয়াটা আমার সাংবিধানিক অধিকার এবং দলীয় দায়িত্ব। আমার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও তা আমি এলাকায় গেলে সাথে বহন করিনা। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রনোদিত।

শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন অফিসার সেক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ১৪ বছর পরে গোসাইরহাটের দুইটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় মানুষ খুব উল্লসিত। যাতে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহন করা যায় সে জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমানে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও আর্মস ব্যাটেলিয়ানের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবেন। এমনকি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে সুষ্ঠ নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবেন।

(কেএনআই/এএস/অক্টোবর ২৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test