E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কে যোগাবে তার খাবার?

১০ দিনেও থামেনি নিহত পরিবারের কান্না

২০১৬ নভেম্বর ১৭ ১২:০৮:২২
১০ দিনেও থামেনি নিহত পরিবারের কান্না

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল(গাইবান্ধা) : ১০ দিনেও থামেনি শান্তিনা টুডুর (৫০) কান্না। স্বামীহারা অনাহারী এই বিধবার আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে। অথচ দেখার কেউ নেই। তার বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ১ নং বুলাকিপুর ইউনিয়নের দামোদরপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মঙ্গল মার্ডীর (৬৫) স্ত্রী।

৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি উদ্ধার নিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একদিন পর অর্থাৎ ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকার একটি ধানক্ষেতে মঙ্গল টুডুর লাশ পাওয়া যায়।

উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের চৌকিদার সখি চাঁনের ছেলে মোহন লাল জানান, এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় ৪২/১৬ নম্বর অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে সকালে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে পাঠায়।

নিহতের পরিবারের দাবি— পুলিশের গুলিতে মঙ্গল টুডুর মৃত্যু হয়েছে। তবে স্থানীয় থানা পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে যে যা দাবি করুক না কেন, গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

সরেজমিনে নিহতর স্ত্রী শান্তিনা টুডু জানান, তার কোনো ছেলে সন্তান নেই। তাদের আগাতা মার্ডী ও ওস্তান মার্ডী নামে দুটি মেয়ে আছে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে। স্বামীর রেখে যাওয়া বসতবাড়ির ৫ শতক জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই। সেখানে কোনোমতে দুটি ঘর তুলে আছেন। তার পরনে কাপড় নেই-ঘরের চালে খড় নেই।তার স্বামী ছিল একজন ভিখারি। সারাদিন ভিক্ষা করে যা পেত তা দিয়ে তাদের কোনোমতে দিন কাটত।

কিন্তু ১০ দিন আগে তার মৃতদেহ বাড়িতে দিয়ে যায় পুলিশ। সেই থেকেই তার ঘরে খাবার নেই। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, এখন কে যোগাবে তার অন্ন। বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পাচ্ছি না। এ অবস্থায় কেই কাজ করতেও নেবে না। সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে তার। এ চিন্তা করেও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না তিনি।

নিহতর বড় ভাই চুন্ডু মার্ডী (৬৮) জানান, শান্তিনা সবসময় কাঁদছে। শত বুঝিয়েও তার কান্না বন্ধ হচ্ছে না। তিনি সবসময় একই কথা বলছে, কে যোগাবে তার খাবার?

মঙ্গল মার্ডীর জামাতা আলম মুরমু জানান, শেষ সম্বল হিসেবে তার শ্বশুরের একটি গরু ছিল। গরুটি ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে। তিনি মাদারপুরে একবিঘা জমি পাওয়ার আশায় সেই টাকা তুলে দেন ‘সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির’ নেতার হাতে। নেতাদের সহযোগিতায় সেখানে এক চালা দুটি ঘর তোলা হয়। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে রিসিভ মূলে নেতারা নিয়েছে ১৫০ টাকা করে। এরপরও বাড়ির ৫ শতক জায়গা বিক্রি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই মাদারপুরে সহিংস ঘটনা ঘটে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের পরিমল মুরমু জানান, গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুরের রংপুর চিনিকলের জমি সাঁওতালদের দেওয়া হবে— মর্মে এ এলাকায় সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। তার প্রতিবেশী জগেন বাস্কের শেষ সম্বল হিসেবে বাড়ির মাত্র তিন শতক জায়গা ছিল। তিনি এই মাইকিং শুনে সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ১ একর জায়গা পাচ্ছেন মর্মে বাড়ির ৩ শতক জমি ৬০ হাজায় বিক্রি করে সেই টাকা ভূমি উদ্ধার কমিটির নেতাদের দেন। বিক্রিত জায়গায় এখনো আছে জগেন বাস্কের ভাঙা ঘর।

টাকা দেওয়ার পর জগেন বাস্কে মাদারপুর চিনিকলের জায়গায় দু’টি ডেরা ঘর তোলেন। কিন্তু রংপুর চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুড়ে দিয়েছে সেই ঘর।

একই গ্রামের দুর্গা হেমরমের ছেলে কেমো হেমরম জানান, শুধু জগেন বাস্কেই নয়। তার মতো ওই বস্তিতে গড়ে তোলা প্রায় ২ হাজার থেকে ২২ শ ঘরবাড়ি পুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সাঁওতালদের অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ‘সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার কমিটির’ কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। তবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের পণ্ডিতপুর গ্রামের মৃত বিশাল সরেনের ছেলে জোসেফ সরেন জানান, ৬ নভেম্বর সহিংস ঘটনার পর থেকে সব নেতারা আত্মগোপন করেছেন। এমনকি তাদের অনেকে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করছেন। আবার কেউ কেউ বন্ধ করে রেখেছেন।






(এসআইআর/এস/নভেম্বর ১৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test