E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজাকার ইদ্রিস আলীর মৃত্যুদন্ডের রায়ে শরীয়তপুরে আনন্দ মিছিল

২০১৬ ডিসেম্বর ০৫ ১৬:৪৮:১৯
রাজাকার ইদ্রিস আলীর মৃত্যুদন্ডের রায়ে শরীয়তপুরে আনন্দ মিছিল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় শরীয়তপুরের আলবদর নেতা পলাতক আসামী মৌলভী ইদ্রিস আলী সরদারের মৃত্যু দন্ডের রায় দেয়ায় আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরন করেছে শরীয়তপুরের মুক্তিযোদ্ধারা। স্বস্তি জানিয়ে পলাতক ইদ্রিস আলীকে আটক করে দ্রুত এ রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে ৭১এর শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন শরীয়তপুর সদর উপজেলার মধ্যপাড়া, কাশাভোগ, আঙ্গারিয়া ও রুদ্রকর এলাকায় একদিনে ৩ শত ৭২ জন নিরাপরাধ সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের লোকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এ বিষয়কে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২৬ মে শরীয়তপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ড আব্দুস সামাদ তালুকদার শরীয়তপুর কোর্টে একটি মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬ কুক্ষাত রাজাকরকে আসামী করা হয়। এর মধ্যে ৫ জনই ইতিপূর্বে মৃত্যু বরণ করেছে। একমাত্র জীবিত ইদ্রিস আলীর সোমবার রায় হলো। এতে তাকে মৃত্যু দন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।

ইদ্রিস আলী শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া কাশাভোগ গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতা ছিল। ৭১ এর যুদ্ধের সময় তিনি বদর বাহিনীর অন্যতম সহযোগি হিসেবে শরীয়তপুর-মাদারীপুরসহ দেশের ভিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। গত ১৪ জুন ২০১৫ তারিখে মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোলায়মান মোল্যাকে পুলিশ আটক করার পর থেকে ইদ্রিস আলী সরদার পলাতক রয়েছে। শুনা যাচ্ছে তার এক মেয়ের জামাই পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হওয়ায় তার সহায়তায় ইদ্রিস আলী বিদেশে পালিয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধিন তিন সদস্যের বেঞ্চ সোমবার ৪৮৬ পৃষ্ঠার রায় ঘোষনা করেন। রায়ে বলা হয় প্রসিকিউশনের আনা চার অভিযোগের সব ক’টি অভিযোগ প্রমানীত হওয়ায় ইদ্রিস আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। চার অভিযোগের প্রথম অভিযোগে ২ শত জনকে হত্যা, দ্বিতীয় অভিযোগে বহু সংখ্যক মানুষকে হত্যাকান্ড ও নারী নির্যাতন প্রমানিত হওয়ায় তার ফাঁসির রায় এসেছে। তৃতীয় অভিযোগে চার জনকে বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার ঘটনায় আমৃত্যু কারাদন্ড ও চতৃর্থ অভিযোগে পরিকল্পিতভাবে দমন-পীড়ন ও হত্যাকান্ড চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু সংখ্যক লোককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করানোয় আরো সত বছরের কারাদন্ডের রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর অভিযুক্ত সোলায়মান মোল্যা মামলা বিচারকালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মাস্টার আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, ৭১ এর ঘৃন্য অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তার্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর ২০১০ সালের মে মাসের ২৬ তারিখে আমি বিবেকের তাড়নায় ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। মামলার প্রধান আসামী সোলায়মান মৌলভীসহ অপর ৫ জন ইতিপূর্বে মারা গেছে। সোমবার মামলার রায় হয়েছে। একমাত্র জীবিত আসামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ হয়েছে। আমি এতে অত্যন্ত আনন্দিত। ইদ্রিস আলী পলাতক রয়েছে। তাকে খুঁজে বের করে অতি তারাতারি এ রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

৭১ সালে মধ্যপাড়া গ্রামে ইদ্রিস আলীদের পাষবিক নির্যাতনের শিকার ও এই মামলার অন্যতম স্বাক্ষী যোগমায়া বলেন, আমি এ রায় শুনে খুব খুশি হয়েছি। এখন এই রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর দেখে মরতে পারলে শান্তি পেতাম।

একই গ্রামের ৭১ এর ২২ মে তারিখে নির্যাতনের শিকার বীরাঙ্গনা যুগল বালা পোদ্দার ও গৌরাঙ্গ পোদ্দারের পূত্র রতন কুমার পোদ্দার বলেন, আমরা ৭১ সালে সব হারিয়েছি। এই রাজাকারেরা আমাদের সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার বাবা ও কাকাদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এতকাল অসম্মান নিয়ে বেচে রয়েছি। রাজাকারের ফাঁসির রায় শুনে খুব খুশি হয়েছি।

শহীদ পরিবারের সন্তান বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ১৯৭১ সালের ২২ মে আমাদের এরাকার ৩ শত ৭২ জন নারী, পুরষ, শিশুকে রাজাকারের সহায়তায় পাক সেনারা নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে। আমার ঠাকুর দাদা, কাকা ও ছয় মাসের শিশু এক কাকাতো ভাইকে সেদিন মেরে ফেলেছে। প্রায় ৯০ জন পুরুষ ও ৭০ জন যুবতি নারীকে মাদারীপুর এ, আর হাওলাদার জুট মিলে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তাদের কাউকেই আর আমরা খুঁজে পাইনি। পাক সেনাদের দোষর এক রাজাকারের ফাঁসির রায় শুনে খুব আনন্দিত হয়েছি। তবে, এই রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন বলেন, াামি ৭১ রনাঙ্গনের একজন সৈনিক । আমার বাড়ি শরীয়তপুরে। আমি এই মামলার টিম লিডার ঋষিকেশ বাবুকে সহযোগিতা করেছি। মামলার চারটি অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমানিত হওয়ায় ইদ্রিস আলীর মৃত্যুদন্ডের রায় হয়েছে। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।


(কেএনআই/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test