E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উল্লাপাড়ায় ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

২০১৪ জুন ১৬ ১১:০৫:০৮
উল্লাপাড়ায় ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : অপহরনের জনপদ খ্যাত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আবারও এক কলেজ ছাত্র অপহরণ হয়েছে।  অপহরণকারীরা তার মুক্তির জন্য অহৃতার পরিবারের কাছে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এর আগে এ উপজেলার দিন মজুর পরিবারের অপহৃত স্কুল ছাত্র মুক্তিপণ দিয়েও গত ৩ মাসে উদ্ধার হয়নি।

জানা যায়,গত মঙ্গলবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার বাঘলপুর গ্রামের আলহাজ ছাইদুর রহমানের কলেজ পড়ুয়া পুত্র মাসুদ রানা (১৭) কলেজে যাওয়ার পথে অপহৃত হন। অপহরণকারীরা মাসুদ রানার পরিবারের কাছে তার মুক্তির জন্য ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এ ঘটনায় অপহৃতার পরিবার উল্লাপাড়া থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করলেও থানা পুলিশ গত ৬ দিনেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।

এ ঘটনার পর মাসুদ রানার পরিবার চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। এদিকে গত ৩ মাস হল উপজেলার বেতবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র স্কুল ছাত্র ছিদ্দিক (১২) মুক্তিপণ দিয়েও উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় ছিদ্দিকের পরিবার কৌশলে এক অপহরণকারীকে ধরে থানায় মামলা দায়ের করলেও রহস্য জনক কারণে থানা পুলিশ মামলাটি নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। ছিদ্দিকের পরিবার অভিযোগ করেন,মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে অপহরণকারীদের চেয়ে তদন্তের নামে দফায় দফায় বেশি টাকা নিলেও তাদের সন্তানকে উদ্ধার করতে পারেনি। টাকা দিতে না পারায় মামলাটি স্থবির হয়ে পড়েছে বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

উল্লাপাড়া থানায় গত ২ বছর হল অপহরণ বাণিজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেড় বছরে এ উপজেলায় প্রায় শতাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে অপহরণকারীরা উপজেলার তেবাড়ীয়া গ্রামের স্কুল ছাত্র হারুনকে অপহরণ করে তার কিডনী কেটে নিয়ে হত্যা করে। গত বছরের শেষ দিকে উপজেলার ভেংড়ী গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা সেরাজুল ইসলাম মাষ্টার ও কয়ড়া হোরপাড়া গ্রামের সাবেক রেল কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন অপহৃত হয়। কয়ড়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের পাশে মাঠ থেক শ্যালো প্রজেক্টের মালিক আব্দুস ছোবাহান (৪৮) কে শ্যালো ঘরে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন সন্ধার দিকে ছোবাহানের পরিবারের সদস্যদের কাছে মুঠোফোনে তাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ হিসাবে ৬ লাখ টাকা দাবি করে অপহরনকারীরা। সোবাহানের পরিবার অপহরণকারীদের সাথে অনেক দেন-দরবার শেষে ৫ লাখ টাকা দিয়ে শাহজাদপুর থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।

কয়ড়া মিনারপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ির কলেজপড়–য়া ছেলেকেও একই কায়দায় অপহরণ করে অপহরণকারীরা। ওই কলেজ ছাত্রের পরিবার ৫ লাখ টাকায় তাকে মুক্ত করেছে। এর পরই কয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ৩ ছাত্রী দত্তপাড়া গ্রামের শুকুর মাহমুদের মেয়ে সুমি খাতুন (১৪),খামারপাড়া গ্রামের আব্দুস ছালামের মেয়ে সোনিয়া খাতুন (১৩) ও বাঘলপুর গ্রামের জয়নাল মন্ডলের মেয়ে জুলেখা খাতুন (১৪) অপহৃত হয়। কয়ড়া হরিশপুর এলাকার এ্যাডভোকেট বরাত আলীর স্কুল পড়–য়া ছেলেকে অপহরণ করতে গিয়ে জনতার ধাওয়ায় পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। একই এলাকার কাঠমিস্ত্রী নিপেন কে অপহরণের সময় এলাকাবাসীদের কাছে অপহরণকারীদের পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এলাকায় তাদের নিয়ে সালিশ বসায়।

গত বছর ৩০ নভেম্বর উল্লাপাড়ার লাহিড়ীমোহনপুর বাজারের গবাদিপশুর খাদ্য ব্যবসায়ি বড় কোয়ালিবেড় গ্রামের আজিজুল হকের পুত্র ফরহাদ আলী ঝন্টু (৩৫) কে অপহরণ করা হয়। ৮/১০ জন অপহরণকারী মারপিট করে তার কাছে থাকা ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরা ঝন্টুকে চোখ বেঁধে শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ উত্তরপাড়া গ্রামের আরেক অপহরণকারী আবুল কাশেমের বাড়ীতে আটকে রেখে মারপিট করে তার পরিবারের কাছে মুঠোফোনে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গ্রামবাসী বিষয়টি টের পেয়ে থানা পুলিশ কে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঝন্টুকে উদ্ধার ও অপহরনকারী চক্রের সদস্যকে আটক করে। গত ১ মে পৌর শহেরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড থেকে অপহৃত হন বোয়ালিয়া গ্রামের কলেজ ছাত্রী লিমা। পরে সে উদ্ধার হলে পরিবারের দায়ের করা মামলাটি নিয়েও নীরব রয়েছে থানা পুলিশ। এভাবে উল্লাপাড়া থানায় অব্যহত ভাবে নীরব অপহরণ বানিজ্য হলেও থানা পুলিশ তা স্বীকার করে না।

দু একটি পরিবার চাপাচাপি করলেও মামলা নেওয়ার পর শুরু হয় টাল বাহানা। অপহৃতাকে উদ্বারের সময় আটক অপহরণকারীদের নিয়ে শুরু হয় বানিজ্য। এ থানায় দায়ের করা বেশিরভাগ অপহরণ মামলার দূর্বল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় অপহরণকারীরা আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ছে একই বাণিজ্য। উল্লাপাড়ায় লাগাতার অপহরণ বাণিজ্য ভাবিয়ে তুলেছে সাধারন মানুষকে।

(ওএস/জেএ/জুন ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test