E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাজিরায় ককটেলের আঘাতে একজনের মৃত্যু, ৫ দিন পরেও চলছে লুটপাট

২০১৭ জানুয়ারি ১৪ ১৬:১৬:২৩
জাজিরায় ককটেলের আঘাতে একজনের মৃত্যু, ৫ দিন পরেও চলছে লুটপাট

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বোমার আঘাতে হোসেন খা নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ৫ দিন পার হলেও থামেনি আসামী পক্ষের বাড়িতে লুটপাট-ভাংচুর। গত ৫ দিনে প্রতিপক্ষের প্রায় দেড়শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর, লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিন ইউনিয়নে অন্তত ২০টি গ্রাম প্রতিপক্ষের হামলা ও পুলিশি গ্রেফতার আতংকে পুরুষ শুন্য হয়ে পরেছে। নিজেদের সম্ভ্রম বাাঁচাতে বাড়ি ঘর ছেরে অন্যত্র পালিয়ে গেছে অনেক পরিবারের উঠতি বয়সের নারী সদস্যরা। । এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও কাটেনি আতংক।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারী ভোরে জেলার জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিজদ্দিন শফি খলিফা ও বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ সরদারের সমমর্থক স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এতে ককটেল বোমার আঘাতে শফি খলিফার সমর্থক হোসেন খান (৩২) নামে এক যুবকের মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরো ১০ জন আহত হয়। হত্যাকান্ডের পরের দিন ১১ জানুয়ারী চেয়ারম্যান সিরাজ সরদারকে প্রধান করে ৬৫ ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামী করে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকেই সিরাজ সরদারের সমর্থক বড়কান্দি, পার্শবর্তী পালেরচর ও জাজিরা ইউনিয়নের ২০ গ্রাম পুরুষ শুন্য হয়ে যায়। এ সুযোগে শফি খলিফার সমর্থকরা বড়কান্দি ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি, চেরাগ আলী সরদারের কান্দি, কাদের বক্স সরদারের কান্দি, ছৈয়াল কান্দি, মীর আলী মাদবর কান্দি, হাজী তাইজদ্দিন মাদবর কান্দি, আব্দুল বেপারীর কান্দি, মৃধা কান্দি, কোতোয়াল কান্দি, পালেচর ইউনিয়নের ফকিরকান্দি, রহম মুন্সির কান্দি, রজ্জব আলী সরদারের কান্দি, আলেপ সরদারের কান্দি, রাড়ি কান্দি, জাজিরা ইউনিয়নের পাতালিয়া কান্দি, হাওলাদার কান্দি, পূর্ব দুর্বাডাঙ্গা ও পশ্চিম দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের শতাধিক বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাংচুর করে।

শফি খলিফার সমর্থিত হামলাকারিরা তোতা মিয়া সরদার, মজিবর সরদার, রহমান সরদার, সোলাইমান সরদার, রতন বেপারী, জামান মুন্সি, মোস্তফা মোল্যা, সাজু খা, আবু সরদার, জসিম বেপারী, বিল্লাল সরদার, দুর্বাডাঙ্গা হাওলাদার কান্দি, এসকান্দার সরদার, রুপাই হাওলাদার, বারেক হাওলাদার, সেরাজুল হাওলাদার, মোহাম্মদ আলী হাওলাদার, রহমান কেরানী,মজিবুর রহমান হাওলাদার, রতন হাওলাদার, মফিজুল মাদবর, মিজানুর রহমান মাদবর, দিদার মাদবর, ধলু মাদবর, চুন্নু মাদবর, মেহবুব বেপারী, খবির হাওলাদার, ইউছুফ মেম্বার, আলী হোসেন বেপারী, মজিবুর হাওলাদার, হামেদ সরদার, ফারুক মাদবর, দিল মোহাম্মদ বেপারী, জালাল বেপারী, আলী আহমদ বেপারী, ইসমাইল মাদবর, সামেদ আলী মাদবর, বাবুল মেম্বার, আলমগীর মেম্বার, ফয়জুল মেম্বার, দীলু মেম্বার, দেলোয়র ছৈয়াল, নুরুল হক ছৈয়াল,হামেদ সরদার, দানেশ ছৈয়াল ও জুয়েল ছৈয়ালের বাড়িঘরসহ প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে ।

ঘটনার পর থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব জঘন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছেন অপ্রীতিকর কোন ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার হোসেন খান নিহত হওয়ার কিছুক্ষন পরে এই প্রতিবেদককে নিহত হোসেন খানের মা ইয়ারুন নেছা, বোন জহুরা বেগম ও সাহেদা বেগম জানিয়েছিলেন, সোমবার রাতে হোসেন ঢাকা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ি আসে। মঙ্গলবার ভোর বেলা মেম্বার বাবুল বেপারী, সাবেক মেম্বার দিলু বেপারী ও তার ভাইয়েরা, জালাল বেপারীর ছেলেরা, হযরত আলী বেপারী, আজিজ ফকির ও মোক্তার বেপারী হোসেন খানকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে মাথায় বোমা মেরে খুন করেছে। তারা হোসেন খানের খনিদের ফাঁসি দাবি করেছেন।

একাধিক মহিলা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা তো কোন অপরাধ করিনি। আমাদের মেয়েরা বাড়ি থাকতে পারছে না, মুখোশ পরে এসে সন্ত্রাসীরা আমাদের মেয়েদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে এবং শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করছে। এক দিক দিয়ে পুলিশ টহল দিয়ে চলে যাচ্ছে, অপর দিক দিয়ে সন্ত্রাসীরা এসে বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর লুটপাট করছে। বাঁধা দিলেই মেয়েদের শ্লীলতাহানীর ভয় দেখায় আর মহিলাদের মারধর করছে। আমরা নিরাপত্তাহীনাতায় ভুগছি। আমরা পুলিশের কাছে নিরাপত্তা জোরদারে দাবি জানাচ্ছি।

বড়কান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন খলিফা বলেন, কিছু কিছু এলাকায় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি। তবে শ্লীলতাহানীসহ মহিলাদের সাথে দূর্ব্যবহারের ঘটনা আমার জানা নেই। যাতে সামনে আর কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য এলাকায় মিটিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আসামী ধরার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। তারা কেউ এলাকায় নেই বলে ধারনা করছি। বর্তমানে এলাকা শান্ত আছে। কোন স্থানে ভাংচুর বা লুটপাটের সংবাদ পাওয়া গেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে শ্লীলতাহানীর কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাইনি। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(কেএনআই/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test