E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সড়ক এখন মরণ ফাঁদ, যোগাযোগ বিছিন্ন এক গ্রামের মানুষ

২০১৭ জানুয়ারি ২৬ ১৭:০৯:১৪
সড়ক এখন মরণ ফাঁদ, যোগাযোগ বিছিন্ন এক গ্রামের মানুষ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : বর্তমানে দেশের সর্বত্রই বইছে উন্নয়নের জোয়ার, কিন্তু এখন দেশের অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া! মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে চলাচলের প্রধান সড়ক প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। স্কুলে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তি ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা যায়। কৃষকরা ফসল নিয়ে পড়ছেন বিপাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় মাঠে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ফসল!

এমনি একটি গ্রাম হল নোয়াখালীর জেলার সুবর্ণচর উপজেলার ০১নং চরজব্বর ইউনিয়নের চর পানাউল্ল্যাহ গ্রাম। স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাতায়াতের জন্য ১ফুট রাস্তাও অবশিষ্ট নেই। ভারী যান চলাচল তো দূরের কথা একটি সাইকেল চলার জায়গা নেই সড়কটিতে। নোয়াখালী সদর সোনাপুর হয়ে স্টিমারঘাট মুখী প্রধান সড়কের আব্দুল্ল্যাহ মিয়ার হাট হয়ে পশ্চিমমুখী এই সড়কটি রামগতি প্রধান সড়ক রব রোডের সাথে মিলিত হয়।

আব্দুল্ল্যাহ মিয়ার হাট থেকে কাঞ্চন বাজার ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলেও কাঞ্চন বাজার হয়ে ইমান আলী বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক এখন মরণ ফাঁদে পরিণত। চর পানাউল্ল্যাহ গ্রামের বাসিন্দা মনির জানান, ১৯৮৫ সালে জনবহুল এই গ্রামের মানুষের কথা ভেবে স্থানীয় কিছু সমাজসেবক উক্ত সড়কটি নির্মাণ করেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর কোন উন্নয়ন হয়নি সড়কটিতে। গত ২০১০-১১ অর্থ বছরে স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ইমান আলী বাজার থেকে একই সড়কে অবস্থিত নূর ইসলাম মেম্বারের দোকান পর্যন্ত মাত্র ১কিলোমিটার পাকা করে দেন। কিন্তু সড়কটির পাশে রামগতি মুখী ১টি খাল বয়ে যাওয়ায় মাত্র ২বছরে সড়কটির ৯০% ভেঙ্গে যায়, যা এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে চরপানাউল্ল্যাহ গ্রামের মানুষ অনেকটাই যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ছেন। গ্রামটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতি রাতেই কেউ না কেউ সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। উক্ত গ্রামের কৃষক মৃত আব্দুল কাইয়ূমের পুত্র কামাল উদ্দিন জানান, সড়কটি সম্পূর্ণ যাতায়াতের অনুপযোগী হওয়ায় তাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শীতকালে সবজি বিক্রি করতে পারছেন না ফলে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে তাদের স্বপ্ন। ঐ গ্রামের সাবেক মেম্বার নুরুল ইসলাম জানান, চরজব্বর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তরিকুল্লাহ বি,এস,সি কে সড়কটি মেরামতের কথা বারবার বলা হলেও তিনি তা আমলে নেন নি। তিনি আরো বলেন রামগতি হয়ে সুবর্ণচর উপজেলার ইমান আলী সড়ক নামে পরিচিত সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত সুবর্ণচর-রামগতি প্রায় দশ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সড়কটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঐ সড়কটি ভুতুড়ে সড়ক নামে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে।

এই সড়কের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে দক্ষিণ চর পানাউল্ল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে রয়েছে চার শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী, জামেয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমাখানায় রয়েছে তিন শতের ও অধিক শিক্ষার্থী। যাদের চলাচলের একমাত্র সড়ক হল ইমান আলী বাজারের এই সড়কটি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, সড়কটিতে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। তাই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগন তাঁদের সন্তানকে বিদ্যালয় কিংবা মাদ্রাসা পাঠাতে চান না। ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। তিনি আরো বলেন, গত ১ বছরে ঐ সড়কে দুইশত শিক্ষার্থী দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। গত তিন মাস আগে রামগতি হয়ে ঐ সড়ক দিয়ে আসা একটি পণ্যবাহী ট্রাক খালে পড়ে ড্রাইভার হেলপার সহ আহত হয় ছয় জন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মাইজদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে উক্ত ইউয়িনের চেয়ারম্যান তরিকুল্লাহ বি,এস,সি এর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় মেম্বার আইয়ূব আলীর সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা এলজিডি কর্মকর্তা মোঃ তাশিউর জানান সড়কটির ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তবে কবে নাঘাত ঐ সড়কটি মেরামত হবে তা সঠিক ভাবে তিনি বলতে পারেন নি। দীর্ঘ দিন চেষ্ঠা তদবির করেও কোন সুফল না হওয়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা অতি দ্রুত সড়কটি মেরামত ও পুল কালভার্ট নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

(এমআইইউ/এএস/জানুয়ারি ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test