E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোহাগড়ায় ১২ মাসে ১৩ খুন

২০১৭ জানুয়ারি ৩০ ১৫:০৪:২৫
লোহাগড়ায় ১২ মাসে ১৩ খুন

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কোন্দল আর পুলিশের দু’একজন কর্মকর্তার অবহেলার কারণে নির্যাতিত মানুষ বিচার পাচ্ছে না বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। দাগি আসামিদের গ্রেপ্তার না করে মাদকাসক্তদের গ্রেপ্তার নিয়ে ব্যস্ত থাকছে পুলিশ। থানায় মামলা করতে আসার পরও রহস্যজনক কারণে মামলা রেকর্ড না করাসহ নানা কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে থানার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

থানা সূত্রে পাওয়া যায়, ২০১৬ সালে ১২ মাসে লোহাগড়া থানায় ২৪৭টি মামলা রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে খুন ১৩টি, ১টি ডাকাতি, ৬টি চুরি, শিঁধেল চুরি ১০টি, মাদক দ্রব্য আইনে ৪১টি, শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইনে ৩২টি, দস্যুতা ১টি, অস্ত্র আইনে ৫টি, সড়ক দুর্ঘটনায় ১টি, ধর্ষণ ৩টি এবং অন্যান্য ১৩৫টি মামলা রেকর্ড করা হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ আগষ্ট পারমল্লিকপুর গ্রামে দু পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নুর ইসলাম মৃধা ও ইকবাল মৃধা খুন হয়। জোড়া হত্যার ঘটনায় নিহত নূর ইসলাম মৃধার স্ত্রী রোকছানা বেগম বাদি হয়ে ৪৫জন কে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

নিহত ইকবাল মৃধার স্ত্রী ফাতেমা বেগম অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষের লোকজন এ হত্যাকান্ড ঘটায়। পুলিশ আন্তরিক হলে এহেন হত্যার ঘটনা ঘটতো না। তিনি আরও বলেন, আমার ৩টি সন্তানের বাবাকে যারা খুন করেছে তাদের ফাঁসি চাই’। নিহত নুর ইসলামের মেঝ ভাই মফিজ মৃধা বলেন, ‘হত্যার পর দীর্ঘ ৫ মাসেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ঘটনার চার্জশীটা (চুড়ান্ত প্রতিবেদন) পর্যন্ত দাখিল করে নাই।

উপজেলার দিঘলিয়া ইউপির কুমড়ি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ২৩ আগষ্ট দুপুরে প্রতিপক্ষের শটগানের গুলিতে সৈয়দ ইলিয়াস আলী নৃশংস ভাবে খুন হন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সৈয়দ হেদায়েত আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। বাদী অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ আগে থেকেই ঘটনা স্থলে উপস্থিত থাকলেও তেমন কোন ভুমিকা নেয় নি। যদি নিত তাহলে আমার ভাইকে আজ হারাতে হত না।

উপজেলার কোটাকোল ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ জুন ২০১৬ তারিখে ভাটপাড়া গ্রামের মিশান মুন্সী প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে খুন হন। এ বিষয়ে নিহতে মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা করে এলাকায় টিকে থাকতে পারবনা বুঝতে পেরে নিরুপায় হয়ে হত্যাকারীদের সাথে আপোষ করে কেস মিটিয়ে ফেলেছি।

১৪ নভেম্বর ২০১৬ উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউপির দেবী গ্রামের ইকবার মোল্যার ছেলে মামুন মোল্যা নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিন দিন পর ১৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ওই গ্রামের একটি ধান ক্ষেতে মামুনের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে থানায় ১৫জনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে মামলা করেন নিহতের বাবা। এ বিষয়ে মামুনের বড় ভাই মঞ্জুর মোল্যা বলেন, প্রায় দুই মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ মাত্র একজন আসামীকে গ্রেফতার করেছে।

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখ রাতে শালনগর ইউনিয়নের শিয়রবর গ্রামে ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি জিয়াউল হাসান প্রতিপক্ষে হামলায় খুন হন। এ ঘটনায় মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী কাকলি বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সহযোগীতা করছে। থানা থেকে চার্জশীট দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমিই পুলিশকে দেরিতে চার্জশীট দিতে বলেছি’।

পারিবারিক কোন্দলের জেরে লুটিয়ায় ভাইয়ের হাতে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে খুন হন অভিজিত ঘোষ। এ ঘটনায় নিহতের অন্তসত্বা স্ত্রী শ্রীমতি কাঞ্চন ২২ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা করেন।

এছাড়া ২০১৬ সালে উপজেলার দিঘলিয়ায় রাকিব ডাকাত খুনের ঘটনায় হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে ১১ জুন, উত্তর পাংখারচর হাসান মুন্সী খুনের ঘটনায় আবুল হোসেন মুন্সী বাদি হয়ে ৪ জুলাই, চর-আড়িয়ারা গ্রামে নুর হোসেন খুনের ঘটনায় ইদ্রিস শেখ বাদি হয়ে ১১ জুলাই, দিঘলিয়ায় অলকা সাহা খুনের ঘটনায় দিলিপ কুমার সাহা বাদি হয়ে ৯ এপ্রিল, লাহুড়িয়া দিনোনাথপাড়া পারভিন আক্তার খুনের ঘটনায় তারা বিবি বাদি হয়ে ২০ জানুয়ারী এবং ইতনা গ্রামে ইসমাইল হোসেন (ঠান্ডু) হত্যার ঘটনায় গোলাপী বেগম বাদি হয়ে ২৪ জানুয়ারী লোহাগড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

উপজেলা দুর্নিতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অরবিন্দু আচার্য বলেন, বেশির ভাগ হত্যাকান্ড নির্বাচন সংক্রান্ত। নির্বাচনে জয় লাভ করবার জন্য অথবা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার রাগ প্রশমনের জন্য অধিকাংশ খুনগুলো করা হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এরুপ অপকর্ম করার আগে যথাযথ প্রশাসনের সাথে গোপন আঁতাত করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও এরুপ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এসব বিষয়ে কথা হয় লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি জানান,‘ এখানে যোগদানের পর ৩ টি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যা কান্ডের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে লোহাগড়ার অইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক।

উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বলেন, গ্রাম্য কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে এসব হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে। মানুষের সচেতনতাই পারে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির বলেন, এলাকায় কর্তৃত্ব ও গত ইউপি নির্বাচন নিয়ে এসব হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে। জনপ্রতিনিধিরা নিরপেক্ষ ও সচেতন হলে হত্যাকান্ড রোধ করা সম্ভব।

(আরএম/এএস/জানুয়ারি ৩০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test