E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারি কলেজের দখলে থাকা জমি ব্যক্তি মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ায় মানববন্ধন

২০১৭ জানুয়ারি ৩১ ১৯:৩০:০৭
সরকারি কলেজের দখলে থাকা জমি ব্যক্তি মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ায় মানববন্ধন

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : হাইকোর্টের নির্দেশে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের দখলে থাকা জমি ব্যক্তি মালিকদের দখল বুঝিয়ে দেয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন, মানববন্ধন এবং কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে।

পাবনা জেলা প্রশাসন গতকাল সোমবার বিকেলে পাবনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল মাহমুদ ও জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বিপুল কুমার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) শিমূল আক্তার কোর্টের মাধ্যমে মালিকানাস্বত্ত্ব অর্জনকারীদের দখলি স্বত্ত্ব বুঝিয়ে দেন। এসময় ঈশ্বরদী থানার ওসি আব্দুল হাই তালুকদার, পাবনা র‌্যাব-১২ এবং পাবনা পুলিশ লাইনের বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ পুলিশ এবং স্থানীয় জনসাধারণ এসময় উপস্থিত থাকলেও কলেজের পক্ষে কাউকে দেখা যায়নি। দখল বুঝিয়ে দেয়ার সময় যেসব সীমানা পিলার এবং মালিকানার সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল গায়েব হয়ে গেছে।

কলেজের সামনের এই জমি কলেজের প্রাণ। এই জমির দখল হস্তান্তরিত হওয়ায় ঘটনায় শিক্ষার্থিসহ ঈশ্বরদীর সর্বস্তরে তীব্র প্রতিক্রীয়া ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ থাকায় এসময় কেউ কোন বাঁধা দিতে এগিয়ে আসেনি। শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ম্ঙ্গলবার ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী ফুঁসে উঠে। শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু একাত্বতা প্রকাশ করে বলেন, জন্মের পর হতে দেখছি এই সম্পত্তি কলেজের অধীনে। হঠাৎ করেই এই সম্পত্তির দখল অন্যজনকে বুঝিয়ে দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানান তিনি। বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও ওসির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদীতে এই কলেজটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এলাকার একমাত্র এই সরকারি কলেজে বর্তমানে নয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। অনার্স শ্রেণীতে ১২টি বিভাগ রয়েছে। ১.২৭ একর এই জমিটি কলেজের সামনের অংশ এবং কলেজের প্রাণ। ব্যক্তি মালিকরা এই জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করলে কলেজ তার সৌন্দর্য্য হারানোর পাশাপাশি জমির পরিমান কমে যাবে।

জমির চার মালিকের পক্ষে গোলাম মহিউদ্দিন জানান, ১৯৬০ সালে তারা আর এস ২৯৭ ও ২৯৯ দাগের জমি জনৈক রাবেয়া খাতুনের নিকট হতে ক্রয় পূর্বক খাজনা-খারিজ করে ভোগ দখল করতে থাকেন। নিয়মিত ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় ১৯৮০ সালে ঈশ্বরদী ভূমি অফিস অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভূক্ত থাকায় তার খাজনা নেয়া বন্ধ করেন।
এসময় মালিকপক্ষ জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগকে বিবাদী কওে নিম্ন আদালতে রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা দায়ের করে ১৯৯৪ সালে ডিগ্রী অর্জন করেন। জেলা প্রশাসন পরে জজকোর্টে আপীল করলে আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। এরমধ্যে এই সম্পত্তি ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অনুকূলে লীজ প্রদান করেন। এই লীজ ১৯৯০ হতে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, ১৯৯৬ সালে জজকোর্টের রায়ের পর এডিসি (রাজস্ব) হাল নাগাদ খাজনা গ্রহনের আদেশ দেন। খাজনা তিনি নিয়মিত পরিশোধ করলেও দখল পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ করেন। এই অবস্থায় বর্তমান সরকার অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত ও দখল মুক্ত করার পরিপত্র জারী করেন। এসময় দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন জানালে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে তিনি হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ২৭/১১/১৪তারিখে ১৬৮০/১৮ নং আদেশে দখল হস্তান্তর বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসককে আদেশ দেন। এই আদেশ বাস্তবায়ন না হলে বাদী পক্ষ কমটেম্টন্ট আবদেন করলে মহামান্য হাইকোর্ট তা গ্রহণ করে জেলা প্রশাসককে স্বশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক এসময় এক মাস সময় প্রার্থনা করেন। এই সময়ের মধ্যেই সোমবার দখলী স্বত্ত্ব মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষেও কাউকে এসময় পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দখল হস্তান্তরের বিষয়ে আমাকে প্রশাসনের পক্ষ হতে জানানো হয়নি। যেকারণে আমরা এসময় উপস্থিত ছিলাম না। তবে তিনি আরো জানান, গত সোমবার পাবনায় তিনি কলেজের দীর্ঘদিনের দখলকৃত সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়া সংক্রান্ত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং ইনজাংশনের আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এটি আদালতে দাখিল হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল মাহমুদ বলেন, কলেজের দখলে থ্াকা জমি হাইকোর্টের নির্দেশক্রমে দখল বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাপারে একাধিকবার অধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন তারা অস্বীকার করলে আমার কিছু বলার নেই। এই জমি চলে যাওয়ায় কলেজের যে বিপুল ক্ষতি হবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, কলেজের জন্য যেটা ভাল হয় আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।

জমির মালিকরা এই জমিতে কি করবেন বলে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন,৩৫ বছর ধরে মামলা চালানোর পর আজ নিজেদের জমির দখল পেলাম এটাই আমাদের স্বস্তি। আমরাও বুঝি এই জমি কলেজের দরকার এবং প্রাণ। কলেজের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা জমি কলেজকে দিতে রাজী। তবে সেটি সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে বলে তারা জানিয়েছেন। যদি সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই জমি অধিগ্রহণ করা হয় তবে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।

দীর্ঘ ৩৫ বছর এই জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চললেও কলেজ প্রশাসনের কোন ভূমিকা না থাকায় এই সম্পত্তি কলেজ দখল দারিত্ব হারিয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

(এসকেকে/এএস/জানুয়ারি ৩১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test