E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩ টি কুমির চুরি, তদন্ত কমিটি গঠন

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৮:৪৩:৫৩
সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩ টি কুমির চুরি, তদন্ত কমিটি গঠন

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে সরকারি ভাবে বন বিভাগের তত্তাবাধানে একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়েছে। কুমির চুরি বা পাচারের ঘটনায় করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে।

এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করেছে। কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ২৭৭টি কুমিরের মধ্যে চুরি বা পাচার হবার পর এখন ২৩৪ টি কুমির রয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। চুরি বা পাচার হবার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।

সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মেহেদীজ্জামান জানান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়ে গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই দুইটি প্যানে থাকা কুমিরের বাচ্চা গণণা করে ৪৩টি কম পাওয়া যায়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিষয়টি জানানোর পর ওই দিন দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। গঠিত তদন্ত কর্মকর্তা চাদপাই রেঞ্জের এসিএফ মো: মেহেদীজ্জামান আরও বলেন, কোন হিংস্র প্রাণীভোগী প্রাণী যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করতো কিংবা খেয়ে ফেলতে তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। এমন কোন আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক বছর বয়সী এই কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি কিংবা পাচার করে দেয়া হয়েছে। চীন- মিয়ানমার- লাওস ও থাইল্যান্ড সীমান্তের গোল্ডেন ট্রাংগল নামের আর্ন্তজাতিক চোর বাজার কুমিরের বাচ্চার চড়া মূল্য থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই চুরি ও পাচার কাজের সাথে জড়িত রয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম এঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মনে সুন্দরবনের সম্পদ চুরির পিছনে বড় কোন ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এটা ছোট করে দেখার কোন কারণ নেই। চুরি যাওয়া কুমিরগুলো উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি করে গঠন করে এর সাথে যে সব গডফাদার জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এধরনের প্রবনতা কমে আসবে।

সুুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি সকালে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি যাবার বিষয়টি জানতে পেয়ে আমি ওইদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ভাবে এঘটনায় জড়িত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে। এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার দোষিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test