E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনের কুমির চুরির ঘটনায় মামলা, তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ-র‌্যাব

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৮:৪৩:৪২
সুন্দরবনের কুমির চুরির ঘটনায় মামলা, তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ-র‌্যাব

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি ও হত্যার ঘটনায় সুন্দরবন বিভাগের বরখান্ত বনকর্মী লস্কার মাহাবুব আলম ও অস্তায়ী কর্মচারি জাকির হোসেনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের নামে মামলা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান রহমান বাদী হয়ে দাকোপ থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় পরিকল্পিত ভাবে প্রজনন কেন্দ্রের কুমির চুরি ও ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে নাশকতা করে ৯টি কুমির মেরে ফেলাসহ বন্যপ্রাণির ক্ষতি সাধনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কুমির চুরি ও হত্যার ঘটনা অধিকতর তন্দন্তে বন বিভাগ ৩ সদস্যের আরো একটি কমিটি গঠন করেছে।

শুক্রবার সকালে কুমির চুরি ও হত্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সুন্দরবন বিভাগের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। একই সাথে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। অন্যদিকে প্রজনন কেন্দ্রের ভিতর থেকে ৬টি মৃত কুমিরের বাচ্চা ও ৩টি কুমিরের বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত পাচার হওয়া অবশিষ্ট ৩৪টি কুমিরের বাচ্চা উদ্ধার হয়নি। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে চুরি বা পাচারের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপর ২ সদস্য হলেন, চাদঁপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ও করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান। এই তদন্ত কমিটি সদস্যরা শুক্রবার সরেজমিনে করমজল প্রজনন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। দাকোপ থানার এসআই ওমর ফারুক দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুমির চুরি ও কুমিরের বাচ্চা মেরে ফেলে রেখে ওই চুরি ভিন্ন খাতে নিতে পরিকল্পিত নাশকতার বিষযটি নিশ্চিত হয়েছেন। চুরির পর প্রজনন কেন্দ্রের ভিতর থেকে ৬টি মৃত কুমিরের বাচ্চা ও তিনটি কুমিরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত পাচার হওয়া অবশিষ্ট ৩৪টি কুমিরের বাচ্চা উদ্ধার হয়নি।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, করমজল প্রজনন কেন্দ্রের বরখাস্তকৃত লস্কার মাহাবুব আলম ও অস্তায়ী কর্মচারি জাকির হোসেন দুজনই বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করতে ষড়যন্ত্র করে প্রথমে ৩৪ টি কুমিরের বাচ্চা পাচার করে। পরে তারা বিষয়টি অন্য খাতে নিতে ৯টি কুমিরের বাচ্চা মেরে ফেলে রাখে। র‌্যাবও সুন্দরবনের কুমির চুরির ঘটনায় জড়িতদের আটকে মাঠে নেমেছে। এঘটনার পরপরই করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান দাকোপ থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। তবে অভিযুক্ত ওই দুই কর্মচারির মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তাদের কারো সাথে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা এমনকি কোন সংবাদকর্মীও যোগাযোগ করতে পারেনি। সুন্দরবন বিভাগ বলছে ওই দুই কর্মচারির এখন পলাতক রয়েছে। বন বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রধান সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মেহেদীজ্জামান বলেন, ‘শুক্রবার থেকে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। তদন্ত শেষে রোববার পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১ ফেব্রুয়ারি করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়ে যায়। এখবর পেয়ে সুুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব আলমকে সাময়িক বরখান্ত এবং জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকুরী চ্যুত করেন।

সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্র্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। চুরি বা পাচার হবার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test