E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সাড়ে ৪লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৯ ১৬:৫৬:৪৫
মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সাড়ে ৪লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা

নওগাঁ প্রতিনিধি : চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। ২১ চিকিৎসক পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৮টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাও নেই এখানে। মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগসহ পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে আউট ডোরের বৈকালিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। উপজেলার সাড়ে ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা ৩ জন ডাক্তার দিয়ে চালানোর চেষ্টা যেন এলাকাবাসীর সঙ্গে উপহাসের মত। সব কিছু মিলিয়ে নওগাঁ জেলার বৃহৎ উপজেলা মান্দার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এখন বেহাল দশা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ ২২ জন নবীণ চিকিৎসক এ উপজেলায় যোগদান করেন। এদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭জন ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১২ জনকে পোস্ট দেয়া হয়। এছাড়ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওএসডি ৩ জনকে পদায়ন করা হয় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দুই বছর পূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৮ জন চিকিৎসক বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কালী কিশোর দাস অবসরে গেলে এ পদটিও শুন্য হয়ে পড়ে। আবাসিক চিকিৎসকের পদটিও শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। চিকিৎসা কর্মকর্তা ভাস্কর চন্দ্র মন্ডল বর্তমানে এ দুটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

সূত্রটি আরো জানায়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ছাড়াও জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ রয়েছে দশটি। এগুলো হচ্ছে মেডিসিন, শিশু, গাইনি, সার্জারি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজি, এ্যানেসথেসিয়া, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে এসব পদগুলোর সবই শুন্য। শুন্য রয়েছে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ১৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের পদগুলোও।

বর্তমানে জরুরি বিভাগে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন ডা.মনোরঞ্জন মন্ডল, ডা. ফজলে রাব্বী ও ডা. মিজানুর রহমান রাজু। চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঞ্চন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ফারহানা শিরিন ও ভালাইন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে নাহিদ আক্তারকে সাময়িকভাবে পদায়ন করা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে (সকাল) ৭০ হাজার ৯২ জন এবং বৈকালিক চিকিৎসা সেবায় ১০ হাজার ৪ জন রোগি সেবাগ্রহণ করেন। চলতি বছরে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সকালে ৪ হাজার ১৩২ জন ও বিকেলে ৫৭১ জন রোগি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। রোগিদের অভিযোগ, চিকিৎসক সংকটে এখন আর প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না তারা।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও হাসপাতালের পর দেশে প্রথম শুরু হওয়া এ চিকিৎসা সেবায় এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে। চিকিৎসা নিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন বিভিন্ন বয়সী রোগি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই চিকিৎসাসেবায় পাল্টে যায় উপজেলার চিত্র। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসক সংকটে ভাটা পড়েছে বৈকালিক চিকিৎসা সেবায়। জরুরি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক দিয়ে একই সঙ্গে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে দুই বিভাগের কাজ। যাতে কোন বিভাগেই পুরো কাজ হচ্ছেনা।

উপজেলার গোটগাড়ী হাইস্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জানান, নওগাঁ জেলার বৃহত্তম উপজেলা মান্দা। প্রতিদিন কয়েকশ’ রোগি সেবা নিতে আসেন উপজেলার এই একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। এ সংকট উত্তরণে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি ও স্থানীয় সাংসদ বস্ত্র ও পাটমস্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামানিকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভাস্কর চন্দ্র মন্ডল জানান, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জনঅধ্যুষিত এলাকায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে বৈকালিক চিকিৎসা সেবার কাজ। এলাকাবাসির সুবিধার্থে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিনা পারিশ্রমিকে এ সেবা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। অচিরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক পদায়ন করা না হলে আউটডোর বৈকালিকসেবা চালু রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test