E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে নেই পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে উপকূলের মানুষ

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৫:৪৯:৪৫
বাগেরহাটে নেই পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে উপকূলের মানুষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে ওঠে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মানুষ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান জেলার সহস্রাধিক মানুষ। বেসরকারি হিসাবে নিহতের এ সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। বিধ্বস্ত হয় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। মারা যায় লক্ষাধিক গবাদি পশু। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় স্বাস্থ্য ঝুকিঁতে পড়ে এলাকাবাসি। সিডরের সময়ে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এই জেলায় এতো বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই উপকূলবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ।

শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিডরের পর সাউথখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার হলেও এতে ধারণ ক্ষমতা অনেক কম। একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬-৭ শ লোকের ধারন ক্ষমতা থাকলেও সেখানে আশ্রয় নিতে হয় ২ থেকে আড়াই হাজারের অধিক। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই শেল্টারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকে শেল্টারে জায়গায় পান না। একই স্থানে একাধিক শেল্টার রয়েছে, আবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শেল্টার নেই। অনেকগুলো আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক স্থানে শেল্টারে যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ।

সিডরের পর শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নে বেশকিছু স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে রাস্তাঘাট। সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য ট্যাঙ্কি, টিউবওয়েল, বাথরুম টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগি হওয়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা চরম আকার ধারন করেছে। ওই সকল সাইক্লোন সেল্টারে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। উদ্বিগ হয়ে পড়েছে অভিবাবকেরা।

মধ্য সাউথখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির, ডালিয়া, নাজমুল বলেন, এতবড় ভবনে টিউবওয়েল আছে পানি নেই। আমরা স্কুলে আসার পর টয়লেটে যেতে পারি না। অন্যের বাড়ির টয়লেটে যেতে হয়। তারপর খাবার পানি খেতে পারি না।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিস জাহান বলেন, পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে প্রতিনিয়ত দুইশ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা বিড়ম্বনায় পড়ছি। অনেক সময় দুর থেকে বালতিতে পানি এনে ভবনের দোতালায় উঠাতে হয়। এরপর বাথরম পরিষ্কার করতে হয়। এই ভবন নির্মানের তিন বছর পার হলে বিদ্যুত না থাকায় আলো, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় আছি।

পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা সাউথখালীতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস এর মহড়া প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, আমরা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে কাজ করছি। সাউথখালী ইউনিয়নে মাত্র ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে পানি ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যা অপ্রতুল। এছাড়া জনসংখ্যার দিক থেকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র কম।

শরণখোলা উপজেলার লাকুড়তলা সাইক্লোন শেল্টার ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আলী খান বলেন, সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলায় প্রয়োজনের তূলনায় সাইক্লোন শেল্টার এখনও অনেক কম। দ্রুত এই এলাকায় নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার। পানির অভাবে বাথরুম নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রলোকে সংস্কার করা জরুরী’।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে নতুন করে আরও ১৯টি নির্মান করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যেতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধারসহ গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার সুব্যবস্থা থাকে এখন থেকে এমন ডিজাইনে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে জোর দিয়েছে সরকার।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test