E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোসাইরহাটে মেঘনা নদী থেকে ৩ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

২০১৭ মার্চ ০৪ ১৯:৪৬:০০
গোসাইরহাটে মেঘনা নদী থেকে ৩ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের কুচাইপট্রি ও নলমুড়ি ইউনিয়নের সীমানায় মেঘনা নদী থেকে তিন জন মাটি কাটা শ্রমিকের ভাসমান গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে গোসাইরহাট থানা পুলিশ। নিহত শ্রমিকদের দুই জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও বাকি একজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের হয়ে নদীর তীর থেকে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটতে এসে এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে মারা গছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

স্থানীয় ও গোসাইরহাট থানা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন যাবৎ গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ও কুচাইপট্টি ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত মেঘনা নদীর তীর থেকে রাতের অন্ধকারে একটি সিন্ডিকেট ইট ভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করে আসছিল। এ নিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও প্রশাসনিক তৎপরতার পরেও মানুষের ফসলী জমির মাটি কাটা বন্ধ করেনি ওই সিন্ডিকেট। সন্ধ্যা পার হওয়ার সাথে সাথে ১০-১৫টি বড় ট্রলার নিয়ে মুন্সিগঞ্জের বক্তাবলি ও নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন ইট ভাটায় মাটি নিতে আসত শ্রমিকরা। কোদালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা নাসির দেওয়ানের নেতৃত্বে ওই সিন্ডিকেট তাদের কাছে প্রতি ট্রলার মাটি ৮ হাজার ধেকে ১০ টাকা মুল্যে বিক্রি করে। চক্রটি রাতের আধাঁরে মানুষের জমি থেকে ফসলসহ মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় প্রশাসনিক কোন বিচার না পেয়ে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে ১০-১২ টি ট্রলারের শ্রমিকদের ধাওয়া করে। এসময় এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে তিন জন শ্রমিক নদী পরে গিয়ে মৃত্যু বরণ করতে পারে বলে ধারনা করছে এলাকাবাসী। নিহত শ্রমিকরা হলেন পাবনা জেলার চাটমোহল থানার ছাইকোলা উত্তর পাড়া গ্রামের মাহবুবুর রহমান (৩৫) ও সিরাজগঞ্জর জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার উদনিয়া চায়রা গ্রামের হাফিজুল সরকার (৩০)। অপর ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে ১০/১২ টি ট্রলার নিয়ে অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিক গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্রি ইউনিয়নের আনুয়াকঠি এলাকার মেঘনা নদীর পাড়ে মাটি কাটতে যায়। এ সময় স্থানীয় শত শত লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে বেশীরভাগ লোকই যে যেভাবে পারছে ট্রলারে উঠে জীবন নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ২৪ জন অবৈধ মাটি কাটার শ্রমিকসহ একটি ট্রলার আটক করে নিয়ে যায়। পরে মুসলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। এদের মধ্যে ২/৩ জন নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে তাদের সাথে থাকা শ্রমিকরা স্বজনদের খবর দেয়। খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা ওই এলাকায় খোজাখুজি করে তাদের সন্ধান পায়নি। শুক্রবার রাতে গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্রি খেজুরতলা নামক স্থানে মেঘনা নদীরপাড়ে একটি হেলে পড়া তালগাছের সাথে দুই ব্যক্তির ভাসমান লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানা পুলিশ দুই জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে উভয়ের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে আজ শনিবার দুপুরে একই উপজেলার মেঘনা নদীর নলমূড়ি ইউনিয়নের হাটুরিয়া লঞ্চঘাটের সামনে পাঁচকাঠি চরের মধ্যে স্থানীয় লোকজন অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তির গলিত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। তার আনুমানিক বয়স ৩০ বছর। গায়ে ফুল হাতার সাদা গেঞ্জি ছিল। পড়নে কিছুই পাওয়া যায়নি।

পাবনা জেলার মাটিকাটা শ্রমিক আব্দুল মতিন মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার গোসাইরহাটের কোদালপুর এলাকায় রাতে ১০/১২টি ট্রলারে প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক শ্রমিক মাটি কাটার জন্য যায়। সেখানে ওই এলাকার শত শত লোকজন ঘেরাও করে তাদের উপর হামলা চালায়। পরে শ্রমিকরা যে যেভাবে পারে পালিয়ে আসে। এ সময় দুই/তিন জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়। তাদের অনেক খোজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি।

নিহত মাহবুবের ভাই কামাল ও হাফিজুলের ভাই সবুজ সরকার বলেন, আমরা শুনেছি মাটি কাটতে গেলে এলাকার শত শত লোক তাদের উপর হামলা করে। এ সময় হাফিজুল ও মাহবুব নিখোঁজ হয়। আমরা খবর পেয়ে এসে অনেক খোজাখজি করে তাদের পাইনি। তবে কিভাবে মারা গেছে আমরা বলতে পারছি না।

কুচাইপট্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন স্বপন বলেন, গাসাইরহাটের কোদালপুরের একটি প্রভাশালী সিন্ডিকেট নেতা নাসির দেওয়ানের লোকজনের নেতৃত্বে উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকরা মাটি কাটতে আসার পর কয়েকশত লোক তাদের মাটি কাটতে বাধা দিয়ে শোর চিৎকার দেয়। এ সময় শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে শুনে, আমি তাৎক্ষনিক পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ট্রলার ও ২৪ জন শ্রমিককে আটক করে নিয়ে যায়।

গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী রাতে মাটি কাটা শ্রমিকরা ট্রলার নিয়ে গোসাইরহাটের কুচাইপট্রি আনুয়াকাঠি এলাকায় মাটি কাটতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করে। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে ২৪জন শ্রমিকসহ একটি ট্রলার আটক করি। পরে শ্রমিকদের কাছ থেকে মুসলেকা রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। আটকের ঘটনায়ওই দিন একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। সেদিন কোন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছে মর্মে কেউ মৌখিক বা লিখিত ভাবে অভিযোগ করেনি। লাশ উদ্ধার হওয়ার পর তাদের আত্মীয় স্বজনরা এসে সনাক্ত করার পর মাটিকাটা শ্রমিক নিখোঁজের বিষয়টি যানতে পারি। এ বিষয় অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাঁচকাঠি চরের থেকে আরো একজন অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধা করা হয়েছে।

(কেএনআই/এএস/মার্চ ০৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test