E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: চিকিৎসক সঙ্কটে সেবা ব্যাহত

২০১৭ মার্চ ১৩ ১১:২০:০৫
মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: চিকিৎসক সঙ্কটে সেবা ব্যাহত

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে সেবা নিতে আসা শত শত রোগী দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অনেককে আবার চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র পাঁচজন। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

এদিকে বৈকালিক চিকিৎসা সেবাও বন্ধের পথে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।

জানা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ৫ লাখ লোকের বসবাস। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে ২১ জনসহ ১৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৫ জন ও মোট ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। এছাড়া ১৪টি ইউনিয়নের ১৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১৫ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন। তবে তিনিও ডেপুটেশনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। সেবিকা ২০ জনের স্থলে রয়েছেন ১৬ জন।

এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ২৫০-৩০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এলাকার অনেক গরিব ও অসহায় রোগী ডাক্তার না পাওয়ায় তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেয়াও সম্ভব হয় না।

২০১৪ সালে একসঙ্গে ২২ জন চিকিৎসককে অত্র উপজেলায় নিয়োগ দেয়া হলেও সময়ের ব্যবধানে একে একে সবাই নানা কারণে বদলি হয়ে শহরমুখী হয়ে যান। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলায় নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসক শহর থেকে এসে কর্মস্থলে অফিস করলেও সময়ের ব্যবধানে সবাই শহরমুখী হয়ে যান।

এছাড়া অনেক চিকিৎসক উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেন। এ নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। কিছু ডাক্তার বিভিন্ন ট্রেনিং বা ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত থাকায় পদশূন্য রয়েছে। ফলে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে নানাভাবে হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় দায়িত্ব প্রাপ্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এছাড়াও বৈকালিক চিকিৎসা সেবায় অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে। বৈকালিক চিকিৎসা সেবাও চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বৈকালিক চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক স্বল্পতা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া হাসপাতালের ভিতরে খাবারের কোনো তালিকা টাঙানো হয়নি। নার্সিং রুমে ছোট্ট একটি কাগজে হাতে লিখে দেয়ালে লাগানো আছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের যে খাবার দেয়া হয় প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র সূত্রে জানা যায়, অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদ শূণ্য রয়েছে ১৭ জন ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৪ জন। শূণ্য পদগুলো হলো জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), মেডেকেল অফিসার ২ জন ও মেডিকেল অফিসার (হোমিও) একজন।

এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) হিসেবে রয়েছেন ডা. মনোরঞ্জন মন্ডল, আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ভাস্কর চন্দ্র মন্ডল, মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) ডা. ডিএইচএম ফজলে রাব্বী রেহান, সহকারী সার্জন (অ্যানেসথেসিস্ট) ডা. আল মাসুদ মিজানুর রহমান রাজু ও ভালাইন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. নাহিদ আখতারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (ডেপুটিশনে) নিয়ে কোনো মতে ধুঁকে ধুঁকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ডেন্টাল সার্জন ডা. সাকিব ইবনে মজিব বর্তমানে দুই মাসের ফাইন্ডেশন প্রশিক্ষণে থাকায় সেটিও খালি রয়েছে।

প্রায় তিন মাস যাবৎ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ শূণ্য ছিল। নওগাঁ সিভিল সার্জন সপ্তাহে ২/১ দিন এসে অফিস করছিলেন। তবে সিভিল সার্জন অবসরে যাওয়ায় নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (টিএইচএ) অত্র উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। গত ১মার্চ থেকে (টিএইচএ) হিসেবে পদোন্নোতি হওয়ায় ডা. মনোরঞ্জন মন্ডল এ পদে যোগদান করেন। ফলে আরো একজন চিকিৎসকের পদ শূণ্য হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ছোটবেলালদহ গ্রামের রোজিনা বেগম, বিজয়পুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, প্রসাদপুর গ্রামের মাজেদা বিবি বলেন, ছোট-বড় নানা অসুখের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসি। কিন্তু ডাক্তার তেমন না থাকায় ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাকমো) ও অ্যাসিটেন্টরাই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা। চিকিৎসক কম থাকায় আমরা চরম সমস্যা ভোগ করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনোরঞ্জন মন্ডল বলেন, টিএইচএ ডা. কালি কিশোর দাস গত ডিসেম্বরে অবসরে যান। এরপর থেকে পদটি শূন্য। দীর্ঘদিন থেকে টিএইচএর পদ শূন্য থাকায় অফিসিয়াল নানা রকম কাজে বিঘ্ন ঘটছে।

আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. ভাস্কর চন্দ্র মন্ডল বলেন, চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test