E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনাজপুরে ফতোয়ার শিকার এক পরিবার ৪০ দিন ধরে গৃহবন্দী

২০১৪ জুন ১৮ ১৮:১৪:০৯
দিনাজপুরে ফতোয়ার শিকার এক পরিবার ৪০ দিন ধরে গৃহবন্দী

দিনাজপুর প্রতিনিধি : ফতোয়ার শিকার হয়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর পল্লীতে এক পরিবার একঘরে রয়েছেন। ৪০ দিন ধরে সমাজচ্যুত পরিবারটি নিদারুণ দুর্ভোগ ও কষ্টের মুখে পড়েছে। এমনকি নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে ফতোয়াবাজরা। ২ অবুঝ শিশুকেও অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দেয়া হচ্ছে না। চক্রান্তের নায়ক আব্দুল মজিদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধই ফতোয়ার সাজানো নাটক।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের আন্ধারমুহা গ্রামের পীরপাড়ায় ফতোয়ার শিকার হয়েছে পরিবারের ৪ জন। এরা হচ্ছেন শফিকুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মোসলেমা বেগম (২৭), আন্ধারমুহা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র মিতাহুল ইসলাম ও ২য় শ্রেনীর ছাত্রী শরিফা আক্তার। ব্যাভিচার, অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে সমাজপতিরা ফতোয়াজারী করেন। ফতোয়ার কারণে ৪০ দিন ধরে পরিবারটি গ্রামে একঘরে হয়ে নিদারুণ কষ্ট ও দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। তাদের সমাজচ্যুত করে ৪ জনকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। অবুঝ ও নিরপরাধ ২ শিশুকেও খেলতে, পড়তে কিংবা মিশতে দেয়া হচ্ছে না গ্রামের অন্য শিশুদের সাথে। ওই শিশু এখন একাকি বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করছে।
বুধবার সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত শফিকুল ইসলাম বগুড়ায় কাজ করতে যায়। গত ৪মে রোববার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোসলেমা তার স্বামীর বন্ধু ঘুঘুরাতলী এলাকার মোজাম্মেলের ভাংরির দোকানে স্বামীর খোজখবর নিতে গেলে পার্শ্ববর্তী দোকানের মালিক আব্দুল মজিদ তাদেরকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে মজিদ প্রচার করে এই দুইজন ঘরের ভেতরে অনৈতিক কার্যকলাপ করছিল এবং সে এই কার্যকলাপের ভিডিও করে রেখেছে। পরে সেখান থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরের শুক্রবার জুমার নামাজের পরে পীরপাড়া গ্রামের মসজিদে উক্ত ঘটনার বিচারের জন্য শালিস-বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে মসজিদের সরদার সলিমুলল্লাহ আহমেদ, ইমাম এরশাদুল ইসলাম, হাফিজউদ্দিনসহ গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়ে ওই পরিবারটির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন। অভিযুক্ত পরিবারের অনুপস্থিতিতেই শালিস বৈঠকে বিচার করে একতরফা ফতোয়া ঘোষনা করা হয়।
এলাকার লোকজনের সাথে কথা বললে তারা সবাই মোসলেমা বেগমের দোষ ধরলেও ওই ভিডিওটি দেখেননি বলে জানান। শুধুমাত্র ওই ভিডিও যে তৈরী করেছে অর্থাৎ আব্দুল মজিদের নিকট ওই ভিডিও আছে বলেই তারা জানেন এবং ভিডিওটিতে খারাপ ছবিও আছে।
এ বিষয়ে মসজিদের সরদার সলিমুল্লাহ আহমেদ বলেন, ওই নারী অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত। তাই ইসলামী আইন অনুযায়ী তাদেরকে একঘরে থাকার সাজা দেয়া হয়েছে। তবে তিনি জানান, ওই ভিডিওটি তিনি দেখেননি। এলাকার সবাই বিষয়টি জানে এবং এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদেরকে ওই সাজা দেয়া হয়েছে। তার নিকট ফতোয়ার বিষয়ে ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি জানান, তাদের পীর নাজিমুল হকের নিকট তারা এই ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফতোয়ার শিকার মোসলেমা বেগম জানান, তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী হাফিজউদ্দিনের সাথে তাদের জমিজমা নিয়ে বিবাদ রয়েছে। ঋণ নিয়ে বাড়ি করলেও এখন বাড়ির প্রাচীর উঠাতে দিচ্ছে না। আর কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে মতপার্থক্য হওয়ায় আমাদেরকে বিপদে ফেলার জন্য এই মিথ্যা কথা রটানো হয়েছে। তিনি জানান, স্বামীর বিষয়ে খোজ নিতে গিয়ে আমাকে আর ওই দোকানদার মোজাম্মেলকে একটি ঘরে তালা মেরে রাখা হয়। পরে কথা রটানো হয় যে, আমরা খারাপ কাজ করেছি। যদি তাই হবে তাহলে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ না থেকে বাইরে থেকে তালা মারা হলো কেন?
আব্দুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দিন শাহ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পরই আমি তাদেরকে এই ফতোয়া তুলে নেয়ার জন্য বলেছি। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ব্যভিচার কিংবা অনৈতিক কার্যকলাপের কারনে ফতোয়া দেয়ার কোন আইন নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামী ব্যভিচারের অভিযোগ না দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আইনী কোন কার্যকলাপ করা যাবে না। তাছাড়া যদি অনৈতিক কার্যক্রমের কেউ ভিডিও করে রাখে তাহলে সে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে প্রমাণিত হয়। ফতোয়াবাজদের আটক ও যত দ্রুত সমস্যার সমাধান হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহনের কথা জানান তিনি।

(এটি/এএস/জুন ১৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test