E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীনতা মেলার নামে ফটিকছড়িতে চলছে জুয়া ও অশ্লীল নাচ-গান!

২০১৭ মার্চ ২১ ১৭:৪৯:৩৮
স্বাধীনতা মেলার নামে ফটিকছড়িতে চলছে জুয়া ও অশ্লীল নাচ-গান!

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে বানানো হয়েছে ব্যানার। ব্যানারে ব্যবহার করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও। এদের ছবি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের চারাবটতলে চলছে স্বাধীনতা মেলা।এই মেলা শুরু হয়েছে গত ১৭ মার্চ। কিন্তু এই মেলা শেষ হবে কবে, সেটা জানেনা কেউ!

মেলার নাম স্বাধীনতা মেলা হলেও, ওই মেলায় নেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনও আলোচনা কিংবা ছবির প্রদর্শনী। মাইকে বাজে না মুক্তিযুদ্ধের গান কিংবা দেশাত্ববোধক গান। তবে কিসের স্বাধীনতা মেলা! হ্যাঁ সেখানে স্বাধীনতা মেলার নামে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর, মঞ্চে চলছে অশ্লীল নৃত্য ও প্রতিদিনের অবৈধ লটারি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে স্বাধীনতা মেলার নামের এই উদ্ভট আয়োজন। চারাবটতলের ওই স্বাধীনতা মেলা সফল করতে পুরো ফটিকছড়ি ও আশেপাশের এলাকায় সিএনজিতে মাইক লাগিয়ে চলছে কান ঝালাপালা করা প্রচার ও ২০ টাকা মূল্যের অবৈধ লটারির টিকেট বিক্রি। সব কিছুই চলছে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের নাকের ডগায়। চারাবটতলের মানুষ অতিষ্ঠ হলেও প্রশাসন-পুলিশ নির্বিকার। কেউ কেউ এই অশ্লীল মেলার প্রতিবাদ করায় তাদের দেওয়া হয়েছে খুনের হুমকি। অতিষ্ঠ মানুষ চোখ-কান বুজে সয়ে যাচ্ছেন সব।


চারাবটতলের মানুষ জানিয়েছেন, দুই বছর ধরে মার্চ মাসে স্বাধীনতা মেলার নামে জুয়া, অবৈধ লটারি, অশ্লীল নৃত্য চলছেই। আয়োজকরা প্রায় সকলেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় টু শব্দ করবার উপায় নেই কারোরই। স্বাধীনতা মেলা আয়োজক কমিটির নামে এই মেলা পরিচালিত হচ্ছে। সেই কমিটির নেতৃত্বে আছেন থানার দালাল হিসেবে পরিচিত কাঞ্চন, সুন্দরপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফিউল আজম, এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন, পার্শ্ববর্তী পাইন্দং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মালেক, পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নুরুল ইসলাম গুন্নু প্রমুখ।

চারাবটতলের স্বাধীনতা মেলাস্থল সকাল থেকেই সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও লোকসমাগম শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। বিকেল ৫ টায় মেলা জমজমাট হয়ে ওঠে। আর এই জমজমাট মেলা চলে প্রতিদিন রাত ২ টা পর্যন্ত। মেলা চত্বরে একাধিক জুয়ার আসরে ভিড় জমায় অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীরা। প্রায় সকলেই পকেট ফাঁকা করতে এক জুয়ার আসর থেকে অন্য এক জুয়ার আসরে যায়। বাড়ির গাছ, অলংকার বিক্রি ও জমি বন্ধক রেখেও কেউ কেউ প্রতিদিন আসেন জুয়ার আসরে, আজ বুঝি খুলবে কপাল তার, এই আশায়!


স্বাধীনতা মেলায় জুয়ার আসর চলতেই থাকে। সন্ধ্যা নামলে মেলার মঞ্চে শুরু হয় মেয়েদের অশ্লীল নৃত্য। সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ওই মঞ্চের সামনে। যাদের বেশিরভাগই কিশোর-তরুন। নৃত্য থামিয়ে শুরু হয় ২০ টাকার অবৈধ লটারির টিকেট বিক্রি। যদিও সকাল থেকেই গোটা দশেক সিএনজিতে মাইক লাগিয়ে পুরস্কার হিসেবে ওয়ালটন মোটর সাইকেল, রঙিন টেলিভিশন সহ নানান ইলেকট্রনিক পণ্য, এমনকি গরু, গাভি, ছাগলের উল্লেখ করে ২০ টাকার লটারির টিকেট বিক্রি হয় সারাদিন ফটিকছড়ি ও সংলগ্ন এলাকায়। সন্ধ্যায় শুরু হয় অশ্লীল নৃত্যের তালে তালে টিকেট বিক্রি। এ সময় অনেক তরুণ নর্তকীদের সাথে নাচেও অংশ নেয়। নৃত্য থামিয়ে আবার শুরু হয় টিকেট বিক্রি। আয়োজকদের টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মঞ্চে চলতে থাকে মেয়েদের অশ্লীল নৃত্য ও অবৈধ লটারির টিকেট বিক্রি। এমন আয়োজনে আসক্ত হয়ে পড়ছে এলাকার কিশোর ও তরুণরা। দেখার কেউ নেই!

সুন্দরপুর ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করবার শর্তে বলেন, এলাকার একটি দুষ্ট চক্র স্বাধীনতা মেলার নামে দুই বছর ধরে জুয়া, অবৈধ লটারি ও অশ্লীল নৃত্যের আসর বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সেই সাথে বিপথগামী হচ্ছে এলাকার কিশোর-তরুণেরা।

স্বাধীনতা মেলার নামে চারাবটতলে যে জুয়া, অশ্লীল নাচগান ও অবৈধ লটারি চলছে, এ ব্যাপারে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের পক্ষ থেকে ফোনে ফটিকছড়ি থানার অফিসার-ইন-চার্জ মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'জঙ্গি পাকড়াও নিয়ে আমরা খুব ব্যস্ত। সেখানে স্বাধীনতা মেলা চলছে বলে জানি। কিন্তু সেখানে মেলার নামে জুয়া, অশ্লীল নৃত্য ও অবৈধ লটারি চলে, এটা আমার জানা নেই। আমি এখনই সেখানে পুলিশ পাঠাচ্ছি। স্বাধীনতা মেলার নামে কাউকেই কোনও ধরণের অপকর্ম করতে দেওয়া হবে না।'

(পিএস/এএস/মার্চ ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test