E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরীপুর রেল কাউন্টারে দ্বিগুন দামে টিকিট বিক্রি

২০১৭ মার্চ ২৫ ১৫:২৪:০৬
গৌরীপুর রেল কাউন্টারে দ্বিগুন দামে টিকিট বিক্রি

শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের গৌরীপুর জংশনে চলছে তুঘলকি কারবার। টিকিট কালোবাজারী ও কাউন্টার থেকেও আদায় করা হয় টিকেটে মুদ্রিত নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া! রেলমন্ত্রীর বাড়ি কুমিল্লা যেতেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া!

বুকিং কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, এলাকার চি‎ি‎হ্নত সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে রাখতেই অতিরিক্ত ভাড়া নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। বৃটিশ আইনে ১৪৪ধারার অধিনে রয়েছে ২৪ঘন্টাই রেলওয়ে জংশন। কেউ মানছে না এ বিধান!

গৌরীপুর পৌর শহরের কালিপুরের অমিত সরকার মৃত্যুঞ্জয় জানান, নেত্রকোনার টিকেটে ৫টাকা লেখা থাকলেও স্টেশনের বুকিং মাস্টার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ২০টাকা দাম চান। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হলে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেন ওই কর্মকর্তা।

অন্যান্য যাত্রীরা জানান, বারহাট্টার টিকেটে ১২টাকার স্থলে ২৫টাকা, পুর্বধলার ৭টাকার টিকেটের স্থলে ১০টাকা নেন বুকিং মাস্টার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। এটি শুক্রবার ১৭মার্চের ঘটনা।

এ দিনেই পুর্বধলার জালশুকার রমিজ উদ্দিনের পুত্র আবুল হাসিম (৩০) জানান, রেলমন্ত্রীর বাড়ি কুমিল্লায় যাবো। সেখানেও ৭৫টাকা টাকার স্থলে ১২০/১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। গৌরীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মোঃ মঞ্জুরুল আলম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন ঈশ্বরগঞ্জের ২টি টিকেটের ১০ টাকার স্থলে ৩০ টাকা নিয়েছে বুকিং মাস্টার। চট্টগ্রামের ভাড়া ১২০টাকার স্থলে ১৫০টাকা নেয়া হচ্ছে। এ যেন লোকাল ট্রেনে চলছে আন্তঃনগরের ভাড়া আদায়! তবু ট্রেনের ভিতরে মিলছে না ঠাঁই। বাধ্য হয়ে বাদুড়ঝোলা হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা ছাদে ভ্রমনে বাধ্য হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মকর্তা জানান, শুধু ভাড়া ভাড়িয়েও মান্তান ভাতা সামাল দেয়া যাচ্ছে না। বেতনের সিংহভাগ টাকাও দিতে হচ্ছে। এ দিকে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী সিন্ডিকেটের কাছে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে।তাদের দাবি, সরকার দলীয় লোকজনের ছত্রছায়ায় চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নওশেদ আলম সজিব এ প্রতিনিধিকে জানান, রাতেও আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেসের টিকেট পাইনি। অথচ ট্রেন ছাড়ার ১০মিনিট পূর্বে চায়ের দোকান থেকে ৩শ টাকায় মিলছে শোভন চেয়ারের টিকেট। বেসরকারি ট্রেনেও টাকা ছাড়া মিলছে না সিট। চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেসে টিকেট ছাড়াই যাত্রী উত্তোলনের বড় হাট ‘গৌরীপুর জংশন’। স্টুয়ার্ডম্যানের সাথে স্থানীয় একটি মহলের যোগসূত্রে প্রতিদিন দেড়/দু’শ যাত্রী যাচ্ছে বিনাটিকেটে।

জনৈক স্টুয়ার্ডম্যান বলেন, আমরা সারাজীবন বেতনের সিটে স্বাক্ষর করি, বেতন পাই না। এ যাত্রী নিয়েই পেট চালাতে হয় এবং পথেপথে গুনতে হয় ‘উৎকোচ’। ঢাকাগামী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেসেও একই অবস্থা। যাত্রীদের নামাজখানা, ইঞ্জিন, দু’বগির মাঝখানে দাঁড় করিয়ে, টোল/চেয়ার পেতে চলছে বিনাটিকেটের বাণিজ্য। অপরদিকে গভীররাতে ঢাকাগামী আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে যাত্রীরা যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই সর্বস্ব হারাচ্ছে।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ট্রেনের ব্যবস্থাপক নারায়ন চন্দ্র আদিত্য জানান, ট্রেনটি ঢাকা যখন প্রবেশ করে, তখন একদম নীরব থাকে। তাই এসময় ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়শঃ ঘটচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সময় পরিবর্তন হলেই এ অবস্থা থাকবে না।

গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন সূত্র জানায়, এ জংশনে ৩১০টি স্টেশনের টিকেট বিক্রি হয়। ৬টি আন্তঃনগর, ৪টি কমিউটারসহ প্রতিদিন ৩০টি ট্রেনের প্রায় ১০/১২ হাজার যাত্রী উঠানামা করে। যাত্রী যেখানেই যাক, গুনতে অতিরিক্ত ভাড়া।

এ বিষয়ে বুকিং মাস্টারের দায়িত্বে থাকা মোঃ আনিছুর রহমান জানান, প্রতিটি টিকেটে ভাংতি না থাকায় ৩/৪ টাকা বেশি নেয়া হতে পারে। তবে জোরপূর্বক অতিরিক্ত কোন ভাড়া আদায় করা হয়না।

স্টেশন মাস্টার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রমোদ দাস জানান, কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসআইএম/এসপি/মার্চ ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test