E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নববর্ষকে সামনে রেখে ফুল তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

২০১৭ এপ্রিল ০৮ ২০:৪৩:৫৩
নববর্ষকে সামনে রেখে ফুল তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

নওগাঁ প্রতিনিধি : আসছে শুক্রবার বাংলার নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালী জাতির প্রাণের উৎসব চলে এই দিনে। আর এই বৈশাখকে বরণ করার জন্য শহর, বন্দর এমন কি প্রত্যন্ত গ্রামেও চলছে নানান প্রস্তুতি। আর এই বৈশাখকে সামনে রেখে নানান রঙের ও প্রকারের কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে কৃত্রিম বাহারী ফুল তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার জামগ্রামের এই কুঠির শিল্পের ছোট-বড় কারিগররা। এই গ্রামে গোলাপ, স্টার, সূর্যমুখি, কিরনমালা, মানিক চাঁদ, জবা, বিস্কুট, গাঁদা সহ বিভিন্ন নামের ফুল তৈরি করা হয়।

পহেলা বৈশাখে শহর-বন্দর ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামে অনুষ্ঠিত মেলায় এসব কৃত্রিম ফুলের কদর আগে থেকেই রয়েছে।

জানা গেছে, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের একেবারেই নিভৃত অবহেলিত একটি গ্রাম ‘জামগ্রাম’। নেই কোন পাকা রাস্তা। রাতের আধাঁরে এই গ্রামবাসীদেরকে বিদ্যুৎবিহীন ঘুমোতে হয়। অথচ বাংলাদেশের মধ্যে এটিই একমাত্র গ্রাম, যেখানে কাগজ, কাপড় ও শোলার রঙ্গিন বিভিন্ন রকমের কৃত্রিম বাহারী ফুল তৈরি করা হয়। এখানকার তৈরি ফুলই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উৎসব, ঈদ ও মেলাতে পুরুষরা নিয়ে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করে। লাভও হয় ভাল। কিন্তু যোগ্য পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনো এই হস্ত শিল্পটি আধুনকিতার দোর গোড়ায় পৌঁছেনি।

গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে গাছের ছাঁয়া ভেজা বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন মিলে বসে বসে তৈরি করছে এই ফুলগুলো। বাংলাদেশের মধ্যে নানান রঙ্গের মন কাড়ানো এই সব বাহারী রঙ্গিন ফুল তৈরিতে এই জামগ্রামই একমাত্র গ্রাম। শুধুমাত্র এই গ্রামেই তৈরি করা হয় এই সব ফুল। তৈরির পর পরিবারের পুরুষরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করে ফুলগুলি। তবে দুই ঈদে, বিভিন্ন পূজা, মেলা ও বিশেষ করে পহেলা বৈশাখে বাংলার নববর্ষের দিনে এই সব ফুলের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। প্রায় ৫০-৬০ বছর পূর্বে ওই গ্রামের কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ এই ফুল তৈরির কাজ শুরু করেন । এখন তা পুরো গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকা ও আয়ের একমাত্র উৎসে পরিণত হয়েছে। এই ফুলে লাভ অনেক বেশি। বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ৭শ’ পরিবার এই বাহারী ফুল তৈরি করার কাজে নিয়োজিত। সংসার দেখভাল করার পাশাপাশি গ্রামের নারী, পুরুষ ও ছোট-বড় সকলেই এই ফুল তৈরি করার কাজ করে থাকেন।

ওই গ্রামের হোসেন আলী জানান, এক সময় গ্রামটি খুবই অবহেলিত ছিল। রাস্তা-ঘাট কোনটিই ছিলো না। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে একটু হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। তবে গ্রামে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। তাই এই সব কারিগররা শত ইচ্ছে থাকলেও রাতে এই ফুল তৈরির কাজ করতে পারেন না। তাই আমাদের এই শিল্পটিকে আরো গতিশীল করার জন্য আমাদের প্রয়োজন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ।

গ্রামের মোছাঃ রুখসানা আখতার জানান, আমরা আমাদের সংসারের সব কাজ সম্পন্ন করে পরিবারের পুরুষদের এই ফুল তৈরিতে সাহায্য করি। এই ফুলগুলোতে লাভ অনেক বেশি। আগে পুরুষরা বাইরে গেলে দুবৃর্ত্তরা মাঝে মাঝে সবকিছু ছিনতাই করে নিতো। কিন্তু এখন আর তা হয় না। এখন শুধু আমাদের এই গ্রামটিকে আধুনিক মান সম্মত গ্রামে পরিণত করা প্রয়োজন।

মোঃ জনি ইসলাম জানান, ফুল তৈরিতে পরিবারের গৃহিণীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা করে আসছে। তাই মাস শেষে লাভের বেশি ভাগই দিতে হয় ওই সব এনজিওতে। তাই সরকারভাবে যদি এই শিল্পর সঙ্গে জড়িতদের জন্য বিনা সুদে বা সহজ শর্তে ঋণ দেয়, তাহলে এই হস্ত কুঠির শিল্পটি আগামীতে আরো বেশি সম্প্রসারিত হতো। তাই এই গ্রামবাসী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি মোঃ ইসরাফিল আলম প্রতিবেদককে জানান, এটি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প। যার কদর সারা দেশে। সৌখিন মানুষ ও শিশুদের কাছে এই বাহারী কৃত্রিম ফুলগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। এই শিল্পটিকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য সরকারের কাজ করা উচিত। এই গ্রামের মানুষদের আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে পারলে তারা এই শিল্পটিকে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। এতে সরকার এই শিল্প থেকে অনেক অর্থ রাজস্ব হিসাবে আয় করতে পারবে। এই সব কারিগরদের জন্য যদি হস্ত শিল্পটির ওপড় উন্নত মানের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে এই শিল্পটি আরো আধুনিক মান সম্মত হতো। আমি চেষ্টা করবো এই গ্রামের মানুষদের কে আরো বেশি বেশি সহযোগিতা করার জন্য।

(বিএম/এএস/এপ্রিল ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test