E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বদলগাছীতে সড়কের গাছ কাটতে না দেয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ!

২০১৭ এপ্রিল ০৮ ২০:৫০:৪৮
বদলগাছীতে সড়কের গাছ কাটতে না দেয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ!

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ছোট যমুনা নদীর ওপর নবনির্মিত সেতুর এপ্রোচ সড়ক সীমানায় থাকা গাছ কাটতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের বিরুদ্ধে। সড়ক ও জণপথ বিভাগ বলছে, গাছটি তাদের আর ওই ম্যাজিষ্ট্রের দাবি করছেন, গাছটি তাদের। সাঠিকভাবে পরিমাপ না করেই গাছে অবৈধভাবে হাত দিচ্ছে সরকার। এমন অবস্থায় গাছ কাটতে না পারায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ওই প্রকল্পটির কাজ। সড়ক বিভাগ বলছে, সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ১২ কোটি টাকার প্রকল্পটি কোনভাবেই বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে জনভোগান্তি বাড়ছেই।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার বদলগাছী উপজেলার ছোট যমুনা নদীর ওপর সেনপাড়া মৌজায় প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রীজটির পূর্বপাশ্বে দুটি এপ্রোচ সড়ক রয়েছে। যার একটি বদলগাছী থেকে সেতু পার হয়ে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার আর অপরটি পাশ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে গিয়ে পৌঁচেছে। কিন্তু আক্কেলপুর যাওয়ার সড়ক সংলগ্ন ডান পার্শ্বে ১৩২ নং দাগে একটি বহু বছরের পুরনো কড়ই গাছ রয়েছে। আর ওই গাছ সংলগ্ন মৃত বদির উদ্দিনের পুত্র দবির উদ্দিনের (৬৫)একটি বাড়ি আছে। এতদিন সকলেই চুপচাপ থাকলেও ব্রীজ নির্মানকালীন সময়ে দবির উদ্দিন গাছটি তার দাবী করে জেলা পরিষদে আবেদন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মাপজোখ শেষে জেলা পরিষদ লিখিতভাবে ২০১৫ সালের ২৮ জুন তারিখে (স্মারক নং- নজেপ/প্রশা:/০২-০৭/১১-১২/২০১৫/৪৭২) তার দাবি সঠিক নয় বলে জানিয়ে দেয়। তার পরও দবির উদ্দিন গাছটি তার নিজের দাবি করে তার পুত্রবধু ময়মনসিংহ জেলায় কর্মরত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট পারুল আখতারের ক্ষমতা দেখিয়ে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন বলে সওজ কর্তৃপক্ষ দাবী করেন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গাছাটি কাটতে গেলেই দবির উদ্দিন তার লোকজন নিয়ে বাধা দেন। একপর্যায়ে শুক্রবার সকালে আবারও গাছটি কাটতে গেলে ম্যাজিষ্ট্রেট পারুল আখতার নিজে এসে বাধা প্রদান করে লোকজন দিয়ে গাছের খনন করা যায়গাটি বন্ধ করে দেন।

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, জেলা পরিষদ, ভূমি অফিস ও সড়ক বিভাগ সম্মিলিত জরিপে দেখেছে গাছটি সরকারের। আর তাই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারকে গাছটি কাটার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এ বিষয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট পারুল আখতার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বললেও তার শ্বশুর দবির উদ্দিন ও স্বামী এমরান হোসেন জানান, গত ৩৭ বছর ধরেই তারা ওই জায়গাটি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই অবৈধভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জেলা পরিষদ গাছটির অনেকাংশ কেটে নিয়ে গেছেন। এখন শুধু কান্ডটি দন্ডায়মান আছে। তাদের দাবী জনস্বার্থে সরকারী কাজ হচ্ছে বলেই তারা এতদিনেও বড় ধরনের আইনী সহায়তা নেননি। তবে আগামী সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে সুরাহা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবেনা বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলাম বলেন, জরিপ অনুযায়ী দবির উদ্দিনের বাড়ির দেয়ালসহ ওই গাছটি জেলা পরিষদের গেজেটভুক্ত জায়গার মধ্যে পড়েছে। আর তাই রাস্তার কাজের স্বার্থে গাছটি কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু দবির উদ্দিন তার ম্যাজিষ্ট্রেট পুত্রবধূকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে গাছকাটার কাজে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন।

শনিবার এ ব্যাপারে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ হামিদুল হক প্রতিবেদককে বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ওই গাছ কাটতে না পারায় এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজটি শেষ করা যাচ্ছেনা। যার কারণে ব্রীজটি সাধারনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজটি বুঝিয়ে দিতে হবে বলেও জানান তিনি।

(বিএম/এএস/এপ্রিল ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test