E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রানা প্লাজায় নিহতদের সন্তানরা বেড়ে উঠছে গাইবান্ধার আরকা-হোমসে

২০১৭ এপ্রিল ১২ ১৫:৩২:৪৯
রানা প্লাজায় নিহতদের সন্তানরা বেড়ে উঠছে গাইবান্ধার আরকা-হোমসে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের শিশু সন্তানরা মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে গাইবান্ধায়। বাবা-মা হারানো বিভিন্ন জেলার এসব শিশুদের লেখাপড়াসহ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে জেলার অরকা-হোমস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানেই পরিবার হারিয়েও পরিবারের আদর-যত্নেই লেখাপড়া, বিনোদন ও খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে শিশুরা। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিকার শিশুদের জন্য এই হোমসটি তৈরি করেছে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন অরকা (ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন)। আর এখানে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

গাইবান্ধার অরকা-হোমস কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে অরকা-হোমস প্রতিষ্ঠিত হয়। গাইবান্ধা-বালাসিঘাট সড়কের তেঁতুলতলা থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে এই প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে একটি তিনতলা ভবন, খেলার মাঠ, লাইব্রেরি ও বিনোদনের ব্যবস্থা। পাশেই রয়েছে হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি। স্বাস্থ্যসম্মত ও ঘরোয়া পরিবেশেই এখানে বেড়েছে উঠছে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো পোশাক শ্রমিকদের ৪৪টি শিশুসন্তান।

এর মধ্যে কেউ কেউ আড়াই বছর ধরেই রয়েছে অরকা-হোমসে। আর স্কুলে যাওয়ার উপযোগী শিশুগুলোর পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে পাশের হোসেনপুর মুসলিম একাডেমিতে।
অরকা-হোমসে অবস্থানরত এসব শিশুদের একজন এগার বছর বয়সী স্বপন ইসলাম। তার বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার খারমি গ্রামে। তার বাবা নেই। মা ফিরোজা খাতুন পোশাক শ্রমিক ছিলেন। তিনি (ফিরোজা) রানা প্লাজা ধসে মারা যান। মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে স্বপন। বাবা-মা না থাকলেও অরকা-হোমসে সেই অভাব অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে সে।

স্বপন বলে, ‘বাবা-মা না থাকরেও এখানে পড়ালেখার সুযোগ আছে, বিনোদনের সুযোগ আছে, পারিবারিক আবহ-ও আছে। বাবা-মায়ের মতো আদর-যত্ন করেই আমাদের এখানে রাখা হয়।’রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অভিরাম গ্রামের আল আমিনের ঘটনাও ঠিক স্বপনের মতই। তারও বাবা নেই। মা ফাতেমা খাতুন রানা প্লাজার একটি কারখানায় চাকরি করতেন। রানা প্লাজার দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তার প্রাণ। বাবা-মা হারানো আল আমিনের ঠাঁই হয় অরকা-হোমসে। খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটানো আল আমিন এখন সঙ্গীদের নিয়ে ভালোই আছে।

একইভাবে মা দুলালি বেগমকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ধানঘড়া গ্রামের আলিফ হাসান। সে-ও এসে জুটেছে গাইবান্ধার এই কেন্দ্রে। অন্য শিশুদের মতো আল আমিন আর আলিফও অরকা-হোমসেই খুঁজে পেয়েছে নিজেদের পরিবার।

শুধু স্বপন, আল আমিন বা আলিফ হাসানই নয়, তাদের মতো রানা প্লাজার ভবন ধসে বাবা-মা হারানো বিভিন্ন জেলার ৪৪টি শিশু এখন মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে আরকা-হোমসে। তাদের লেখাপড়াসহ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে অরকা-হোমস নামের গাইবান্ধার এই প্রতিষ্ঠানটি।

অরকা-হোমসের তদারকির দায়িত্বে থাকা হোসেনপুর মুসলিম একাডেমির উপাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাত জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে শিশুদের তদারকির দায়িত্বে আছে। হোমসে অবস্থানরত শিশুদের লেখাপড়া শেষ হলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে। পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও কর্মসংস্থান এবং প্রয়োজনমতো বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘শিশুরা যেন বাবা-মায়ের স্নেহের অভাব বুঝতে না পারে, আমরা সেই চেষ্টাই করছি। ওদের জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, একটি শিশু নিজের পরিবারে যেভাবে লালিত-পালিত হয়ে থাকে, আমাদের এখানেও তেমনটিই হচ্ছে।’

(এসআইআর/এসপি/এপ্রিল ১২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test