E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পীরগঞ্জ গণহত্যা দিবস আজ

২০১৭ এপ্রিল ১৭ ১২:৫১:৪৬
পীরগঞ্জ গণহত্যা দিবস আজ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : আজ ১৭ এপ্রিল পীরগঞ্জ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নির্বিচারে চালায় গণহত্যা। শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ কেউই রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে।

বেলা ১১টার দিকে ১৭টি সাজোয়া গাড়ি পীরগঞ্জ থানা শহরের পূর্ব চৌরাস্তার একটি পুরাতন বটবৃক্ষের নিচে থামে। পাকিস্তানি বাহিনী দেখতে পায় পীরগঞ্জ থানা শহরের প্রতিটি সরকারি বেসরকারি অফিসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে।

এ দৃশ্য দেখে তারা প্রথমে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজাউদ্দীনের চেম্বারে ঢুকে তাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানি পতাকা উড্ডয়নের নির্দেশ দিলে ডা. সুজাউদ্দীন তা করতে অস্বীকার করেন। এসময় তাকে এক পাকসেনা রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে। তাতেও তিনি বিচলিত না হয়ে উচ্চকণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন।

পরে তার হাত বেঁধে সাজোয়া গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। এরপর পীরগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মফিজুল হক, হোটেল ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন, পীরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার ও ধনাঢ্য কৃষক আতাউর রহমানসহ ৪০/৫০ জনকে সাজোয়া গাড়িতে তুলে নেয়া হয়।

পীরগঞ্জ বাজার, পশ্চিম চৌরাস্তাসহ তার আশপাশ এলাকার মানিক মিয়ার হোটেল সংলগ্নে বিপুল সংখ্যক নারী দলবদ্ধ হয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে নিয়ে জয়বাংলা স্লােগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে। এ দৃশ্য দেখে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা থমকে যায় এবং কয়েকটি গুলিবর্ষণ করে। গুলিবর্ষণেও নারীরা স্লােগান দিতে থাকেন।

প্রায় ৩ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর আটকদের নিয়ে পাক সেনারা ঠাকুরগাঁও মহকুমা শহরের দিকে চলে যায়। পরে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের জামালপুর ইক্ষু খামারের (ভাতারমারী ফার্ম) তেঁতুল গাছের নিচে আটক ৫০ জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

৪৬ বছর যাবৎ শহীদদের পরিবার দিবসটি নানাভাবে পালন করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ উল্লিখিত শহীদদের জন্য কোনো স্মরণ সভা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজাউদ্দীনের পরিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাসহ অন্যান্য শহীদদের নামে গড়ে উঠেনি স্মৃতিসৌধ। তবে পৌরসভার কয়েকটি রাস্তার নাম কয়েকজনের নামে করা হলেও সাইবোর্ডগুলো হারিয়ে গেছে। এসব দেখাশোনারও কেউ নেই। পীরগঞ্জবাসী মনে করেন যাদের রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীন দেশ তাদের প্রতি এত অবজ্ঞা কেন? বর্তমান শহীদ পরিবারগুলো কে কিভাবে অবস্থান করছেন।

কথা হয় শহীদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফর ছেলে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, স্থানীয় ডিএন কলেজে প্রভাষক পদের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তাকে নিয়োগ না দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবির নেতা বোমা বানাতে গিয়ে যার হাতের কবজি উড়ে যায় তাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে সেই বোমারু আবুল কাশেম পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের টিকিটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

শহীদ শিক্ষক মফিজুল হকের ছেলে আজগর আলী পীরগঞ্জ থানা শহর হতে ১৮ কিলোমিটার দূরেএকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। তিনি পীরগঞ্জ পৌরসভার সবুজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসার জন্য বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইতোমধ্যে শহীদ পরিবারের সন্তানসহ স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণ ৫০ শহীদের একটি কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বর্তমান সরকারের আমলে গড়ে তোলার জোর দাবি জানিয়েছেন। শহীদ ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বারের ছেলে এনামুল হককে আহ্বায়ক করে প্রজন্ম-৭১ নামে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test