E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাটির বদলে বালু দিয়ে বাঁধ!

২০১৭ এপ্রিল ২০ ১৪:৪৫:৩৯
মাটির বদলে বালু দিয়ে বাঁধ!

গাইবান্ধার প্রতিনিধি : জেলার ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে মাটির বদলে বালু দিয়ে ভরাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন শ্রমজীবী মানুষরা কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে পানির চাপে বাঁধটি আবারও ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে বন্যার পানির চাপে ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৮০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ভেঙে যাওয়া অংশের সংস্কার কাজ শুরু হয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা। এই কাজে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৭৮৮ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ফেনী জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বাঁধ সংস্কার কাজে শতকরা ৩০ ভাগ কাঁদামাটি, শতকরা ৪০ ভাগ পলি এবং শতকরা ৩০ ভাগ বালু দিয়ে ভেঙে যাওয়া অংশ ভরাট করার কথা। শুধু তাই নয়, শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ভরাট করতে হবে। এছাড়া বাঁধটি মজবুত করতে ভেঙে যাওয়া অংশ ভরাট করার পর দুই পাশেই স্যান্ড সিমেন্টের বস্তা দিতে হবে।

কিন্তু বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সিংড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো শ্রমিক নেই। দুইটি স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু কাটা হচ্ছে। সেই বালু একটি চেইনড্রেজার মেশিন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অংশে ফেলা হচ্ছে।

সিংড়িয়া বাজার এলাকার পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গতবছর বন্যার সময় বাঁধটিতে গর্ত দেখা দেয়। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো গুরুত্ব দেয়নি। ফলে গত বছরের আগষ্ট মাসে বাঁধটি ভেঙে ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবার সেই বাঁধ বালু দিয়ে নির্মাণ করা হলে তা টিকবে না। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বাঁধটি আবারও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

একই গ্রামের দিনমজুর কাশেম মিয়া নিজের ভাষায় বলেন, ‘শুনচি কামলা দিয়া মাটি কাটার কতা। গায়োত কাম হবার নাগচে, কিনতো হামারঘরোক কাউয়ো কামোত নেয় না। খ্যায়া না খ্যায়া দিন যাবার নাগচে।’

ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, ‘বাঁধটি গতবছর প্রবল পানির চাপে ভেঙে যায়। এবার বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটা এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসবে না। শুধু সরকারের টাকা অপচয় হবে। শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও সেটাও করা হচ্ছে না।’

এসব বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. জুয়েল মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাকে যেভাবে কাজ করতে বলেছেন, সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ভরাট করতে হবে ঠিক। কিন্তু সামনে বর্ষাকাল আসছে। তাই হাতে সময় কম থাকায় ঠিকাদারকে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’

(এসআইআর/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test