E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘জান দিমু তবুও শনির হাওরের বাঁধ ভাঙ্গতে দিমো না’

২০১৭ এপ্রিল ২৩ ১৪:৪৩:৩৩
‘জান দিমু তবুও শনির হাওরের বাঁধ ভাঙ্গতে দিমো না’

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ : হাওরে প্রতিটি বাঁধের সমান সমান পানি এখন ঘন্টায় ঘন্টায় পানি বাড়ার কারনে বাঁধের উপর দিয়ে হাওরে পানি ডুকতাছে। আর আমরা বস্তায় বালু ভইড়া সেই খানে প্রতিরোধ ও নতুন নতুন বুরুংঙ্গা বন্ধ কইরা বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টায় করতাছি।

প্রতিটি বাঁধে পুকুর চুরি না করে একবারেই ডাকাতি করছে যার জন্য হাজার হাজার কৃষক ২৪দিন ধরে সেচ্ছা শ্রমে একমাত্র বোরো ফসল রক্ষার বাঁেধ কাজ করতাছি আমরা সবাই। কিন্তু এ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে দেখা পাইনি। এই ফসল ফলাতে আমরা এনজিও,ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে নেওয়া ঋন নেওয়ায় পরিশোধ নিয়ে হতাশায় ভুগতাছি হাওর পাড়ের কৃষকরা শেষ হাওর রক্ষায় “জান দিমু তবুও শনির হাওরের একটা বাঁধ ভাঙ্গতে দিমু না”। শেষ রক্ষা করমুই আমরা কথা গুলো বলছিলেন তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের লালুরগুয়ালা বাধেঁ কাজ করা একমাত্র নারী বেহেলি ইউনিয়নের (৭,৮,৯ ওয়ার্ড মেম্বার) মনেছা বেগম ও মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বাদল মিয়া,মিয়া হোসেন,তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন,উপজেলা আ,লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সহ হাজার হাজার শ্রমিকরা।

তারা আরো জানায়,সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সর্ব শেষ শনির হাওর রক্ষায় ২৪দিন ধরেই প্রতিদিন সকাল হলেই হাজার হাজার শ্রমিক বাঁধে কাজ করতাছি আর রাতে বাড়ি যাই। বাঁধ রাতে পাহাড়ায় থাকছে আরেক দল। তার পরও সবার একটাই চাওয়া শনির হাওর রক্ষা। উপজেলার সব হাওর ডুবে গেছে তাই শেষ সম্পদ জীবন বাচাঁর একমাত্র এ হাওরটি রক্ষায় নিজের জীবন বাজিঁ রেখেই যুদ্ধ করতাছি দিন রাত বাধেঁ পানির সাথে।

জামালগঞ্জ,বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার হাজার হাজার শ্রমিকরা পালা ক্রমে হাওরের বাঁধে কাজ করছে ও রাতে বাঁধে পাহাড়ায় নিয়োজিত রয়েছে তারা। এ হাওরে তাহিরপুর উপজেলা বাসীর জমির পরিমান বেশী থাকায় তারা রয়েছে সবার আগে। উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরে উৎপাদিত ২শ কোটি টাকার অধিক ফসলের উপর নির্ভর করেই জীবন জীবিকা চলে হাজার হাজার কৃষক পরিবারের। কিন্তু এপর্যন্ত ২২হাওরেই পানিতে তলিয়ে গেছে। শনির হাওরটিই শেষ ভরসা।

শনি হাওরের বগিয়ানী,লালুরগোয়ালা,ঝালখালি,আহমখখালি,নান্টুখালি,গুরমা বাঁধ গুলোতে নতুন নতুন বুরুংংগা (পানি প্রবেশের ছোট ছোট শুরঙ্গ) তৈরী হচ্ছে আর এ দিয়ে হাওরে প্রবেশ করছে পানি ফলে আতংকে রয়েছে হাজার হাজার কৃষক।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, এ উপজেলার প্রতিটি বাঁধে সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি কিন্তু দূনীর্তির কারনে ২২টি হাওরেই পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে। এখনও শনির হাওরটি রক্ষায় শুরু থেকে সবার সহযোগীতায় নিয়ে কাজ করছি। এই হাওর রক্ষায় যতক্ষন বাঁচি শেষ না দেখে পিছু হাটব না। হাওরের বাঁধ নির্মানের কাজে আর পাউবো কে না দেওয়ায় দাবী ও সুনামগঞ্জ জেলা কে দূর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি জানাই।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম গত শুক্রবার শনির হাওরের লালুরগোয়ালা বাঁধ সহ বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ২০হাজার বস্তা বাঁধ নির্মানের দায়িত্বে থাকা লোকজনের হাতে তুলে দেন। তিনি এ উপজেলা সর্ব শেষ শনির হাওর রক্ষায় সেচ্ছা শ্রমে কাজ করায় শ্রমিক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল সহ বাঁধে কাজ করা সকল শ্রমিকদের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন,এই শনির হাওরের প্রতিটি বাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে সেচ্ছা শ্রমে সবার একান্ত প্রচেষ্টায় এখনো এই হাওরটি ঠিকে আছে। এই হাওরটি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার্তœক সহযোগীতা করা হবে।


(জিএভি/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test