E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ের প্রেম, ১২০ হিন্দু পরিবার ঘর ছাড়া

২০১৪ জুন ২১ ০৮:৪৬:০২
হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ের প্রেম, ১২০ হিন্দু পরিবার ঘর ছাড়া

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী বেতমারী গ্রামে হিন্দু ছেলের সঙ্গে মুসলিম মেয়ের প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের ১২০ হিন্দু পরিবার এখন বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ২০ জুন শুক্রবার বিকেলে হামলার শিকার ৫ টি পরিবারের লোকজন শহরের জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কার্যালয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেতমারী উত্তর পাড়ার পুনি রবিদাসের ছেলে রতন রবিদাসের সঙ্গে একই গ্রামের মৃত রশিদ মিয়ার এইচএসসি পড়ুয়া মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিগত ১০ জুন গার্মেন্ট কর্মী রতন ওই মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ১৬ জুন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছেলে-মেয়েকে উদ্ধার করে এক সালিসী সভা করেন। সেই সভায় মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় ছেলের সাথে বেড়িয়ে গেছে বলে স্বীকার করে। ছেলেটিও ধর্মান্তরিত হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজী হয়। তবে মেয়ের মামা শহিদুল মেম্বারসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোক এতে রাজী না হয়ে ওই ছেলের শাস্তি দাবি করে।

এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে চেয়ারম্যান ছেলে-মেয়ে দু’জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শতাধিক লোকজন ১৭ জুন তারিখ রাতে ওই এলাকার রবিদাস সম্প্রদায়ের বাড়ী ঘরে হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে। এসময় গোয়ালের গরু-টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

এতে আতঙ্কিত নারী-পুরুষসহ প্রায় শতাধিক পরিবার শেরপুর ও জামালপুর জেলা শহরে আত্মীয়-স্বজনের কাছে এবং কিছু পরিবার বর্তমানে শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ১০-১৫টি পরিবারকে তাদের বাড়ীতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ২০ জুন শুক্রবার পুলিশের একটি দল পরিস্থিতি দেখতে বেতমারী গ্রামে গেলে তাদের সামনেই দুই হিন্দু পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। পুলিশ চলে এলে দুটি বাড়ীতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। এত দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের অফিসে আশ্রয় নেওয়া স্থানীয় তুফানু রবিদাসের স্ত্রী শান্তি রানী বলেন, ‘আমগরে কি অপরাধ জানিনা। প্রেম করছে রতন-সীমা। অত্যাচার চলতাছে আমগরে উপরে। দেশ ছাইড়া যাবার জন্য হুমকি দিতাছে। আমগরে বাঁচান’। একই গ্রামের গৃহবধু দুলালী বলেন, পুলাপান নিয়া তিন দিন ধইরা এলাকা ছাড়া। আমার স্বামী সেলুনে কাজ করে, সেলুন বন্ধ। পুলাপান না খাইয়্যা আছে। এলাকার ধানু চৌকিদার বলেন, আমারে ধইরা মারছে। ভয়ে বাড়িতে যাবার পাইতাছিনা।

বেতমারী- ঘুঘরাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ছেলে-মেয়ে দু’জন দু’জনকে ভালবাসে। ছেলে মুসলমান হতে চায়। তবে এলাকার কিছু দালাল বাটপার এতে বাধা দিচ্ছে। তারা এ ঘটনাকে অন্যরকম রং দিয়ে সুবিধা নিতে চায়। তিনি বলেন অ্যাকশানে না গেলে হিন্দুরা এলাকায় থাকতে পারবে না।

শেরপুর সদর থানার ওসি মাযহারুল করিম বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। আমরা ৫৪ ধারায় ছেলে মেয়েকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছি। মেয়েটি ছেলেটিকে ছাড়া বাঁচবেনা বলে হুমকি দিয়েছে। ছেলে মেয়ের আত্মীয়স্বজন কেউ সমাধানের জন্য আসছে না।

এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা মানাবাধিকার সংস্থা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক কানু চন্দ বলেন, আমরা এ ঘটনায় দারুণভাবে উদ্বিগ্ন। প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

(এইচএমএ/জেএ/জুন ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test