E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে জন্মেছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপের বাচ্চা

২০১৭ মে ১২ ২১:০১:১৮
সুন্দরবনে জন্মেছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপের বাচ্চা

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে এই প্রথম ‘বিলুপ্তপ্রায়’ প্রজাতির বাটাগুর বাসকা’র কচ্ছপের ডিম থেকে ২৬টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক চারটি কচ্ছপের মধ্যে একটির ৩১টি ডিম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ‘হোলনেসট’ প্রয়োজনিয় তাপমাত্রায় রেখে প্রথমবার কচ্ছপের বাচ্চা ফুটানো হলো।

সুন্দরবনে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতির কচ্ছপের প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে করমজলে কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। গড়ে ওঠার পর থেকে এই কেন্দ্রে দেশী-বিদেশী বিজ্ঞানীরা বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের প্রজনন ও সংরক্ষণে কাজ করছে।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এইচএম আজাদ কবির জানান, গত বছরের ডিসম্বরে ৪টি প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপ সংগ্রহ করে করমজল কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর গত তিন মাস সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেন বিশেষজ্ঞরা। ডিসেম্বর থেকেই মাত্র ৪টি নারী ও ২টি পুরুষ কচ্ছপ দিয়ে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। এই চারটি কচ্ছপের মধ্যে একটি প্রথমবার গত ৩ মার্চ রাতে পুকুর পড়ে ৩১টি ডিম দেয়। কেন্দ্রের পুকুর পাড় থেকে ওই ৩১টি ডিম সরিয়ে নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটানোর ‘হোলনেসট’ এ রাখা হয়। থার্মোমিটার দিয়ে নিয়মিত ডিম রাখা ‘হোলনেসট’ এ ৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেট এর তাপমাত্রা মধ্যে রাখা হয়। দুই মাসের ব্যবধানে ওই ডিমের মধ্যে থেকে গত ৮ মে ৪টি, ৯ মে ১৯টি ও ১০ মে ৩টিসহ সর্বমোট ২৬টি কচ্ছপরে বাচ্চা ফোটে। বাকি ৫টি ডিমের মধ্যে ৩টি নষ্ট হয়ে গেছে এবং ২টি ডিম থেকে দু’এক দিনের মধ্যে আরো ২টি কচ্ছপের বাচ্চা জন্মাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই দুটি ডিম এখনো নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে।

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক (সিএফ) আমির হোসেন চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ বন বিভাগ, আমেরিকার টারটেল সারভাইভাল এলায়েন্স, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ও হরিণের পাশাপাশি ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় বিরল প্রজাতির ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র। এ প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ ১২৩টি ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ গবেষণার জন্য রয়েছে। এক সময়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ লবণাক্ত পানিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত ‘বাটাগুর বাসকা’ বা বড় কাটালি কচ্ছপ। সময়ের বিবর্তনে ও মানব কর্তৃক সৃষ্ট কর্মকান্ডে এই প্রজাতির কচ্ছপ এখন বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় ঠাঁই নিয়েছে। এই ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ সারাবিশ্বে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। খাদ্য হিসাবেও এর রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। প্রাপ্ত বয়সে একটি কচ্ছপ ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজনের হয়।

এ কচ্ছপ ৭০-৮০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। পৃথিবী থেকে বিলুপ্তপ্রায় ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণ ও প্রজননের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তারের জন্য এই প্রজনন কেন্দ্র থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারী দুইটি বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের পিঠের উপর স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনার আদাচাই এলাকায় অবমুক্ত করা হয়েছে। বন বিভাগ, টারটেল সারভাইভাল এলায়েন্স (আমেরিকা), ভিয়েনা জু (অস্ট্রিয়া) ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন’ কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও পরিবেশগত ছবি সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করেছেন।

এ গবেষণার মধ্য দিয়ে এ প্রজাতির কচ্ছপের স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগেরর গভীর ও না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সে সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। করমজল কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে দেয়া ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর সেগুলো সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে এই কর্মকর্তা।

(একে/এএস/মে ১২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test