E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হারিয়ে যাচ্ছে মেছোবাঘ

২০১৪ জুন ২২ ১৯:৫৪:১৫
হারিয়ে যাচ্ছে মেছোবাঘ

মেহেরপুর প্রতিনিধি : নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে মেছোবাঘ। কারণে-অকারণে হত্যার শিকার হওয়ায় প্রকৃতি থেকে এ প্রাণিটি বিলুপ্ত  হয়ে যাচ্ছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিশ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মেছোবাঘকে বাঘডাসা ভেবে ভুল করে। আবার অঞ্চল ভেদে এদের বাঘুইলা, মেচি বাঘ কিংবা ছোট বাঘ বলেও ডাকা হয়।

হিংস্র হলেও মেছোবাঘ ভীতু প্রাণি। অথচ হিংস্র ভেবেই প্রাণিটি নির্বিচারে হত্যা করছে মানুষ। মেহেরপুর সদর উপজেলার যুগিন্দা, ঝাঁঝা, হরিরামপুর ও কোলা, গাংনী উপজেলার গোপালনগর, বামন্দী, বাগুন্দা ও চিৎলা এবং মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ও বাগোয়ান গ্রামসহ মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মাঝেই হত্যার শিকার হচ্ছে এই মেছোবাঘ।

মেহেরপুর অঞ্চলে এখনও এ প্রাণির অস্তিত্ব আছে বলে জানান দেয়।

মেছোবাঘ নিশাচর প্রাণি। রাতের আঁধারে চলাচলই পছন্দ তার। মানুষ থেকে এরা সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করে। তাই লোকালয়ের বাইরে দিনের বেলা গাছের খোঁড়ল, মাটির গর্তে কিংবা ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

এদের শরীরের গড়ন লম্বাটে। সামান্য হলুদে মেশানো ধূসর রঙের চামড়ায় ছোপ ছোপ কালো কালো দাগ রয়েছে। এদের কান ছোট এবং গোলাকার। মুখমন্ডল বাঘের ন্যায়। এদের চোখের পিছন থেকে গলার শেষ পর্যন্ত ৬ থেকে ৮ টি কাল বর্ণের ডোরাকাটা দাগ থাকে।

পূর্ণ বয়স্ক মেছো বাঘ ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং এর এক ফুট লম্বা লেজ রয়েছে। এদের ওজন ৫ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এরা ১৫ মাস বয়স হলে প্রজনন উপযোগী হয়। সাধারনত মার্চ মাস থেকে জুন মাস এদের প্রজননের সময়। একসাথে এরা ২-৩ টি বাচ্চা প্রসব করে। সাধারণত প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় গড়ে ১৭০ গ্রাম। এরা ১০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

মেছোবাঘ রাতের বেলা খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। এরা মাংশ ও মাছ জাতীয় খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে। মূলত মাছ ও কাঁকড়াভূক প্রাণি।

এ ছাড়াও এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে শামুক, হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেড়া ও গরুর বাছুর। খাদ্য অভাব দেখা দিলে মাঝে মধ্যে এরা মানুষের ঘরে ঢুকে মানুষের শিশু বাচ্চা তুলে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা বা রাতের বেলায় এ কাজটি করার অভ্যাস এদের আছে।

মেছোবাঘ মাছ ধরার জন্য ঠিক পানিতে নামে না। পানির উপরে থাকা গাছের ডালে কিংবা পানির উপর জেগে থাকা কোন পাথরের উপরে বসে থাবা দিয়ে এরা মাছ শিকার করে খায়।

গাংনী সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বিড়াল প্রজাতির বহু প্রাণির মধ্যে মেছোবাঘ একটি। এ প্রাণি পরিবেশের জন্য উপকারি। কোন মাঠে দু’-চারটি মেছোবাঘ থাকলে ধান-গমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিকারক ইঁদুর জাতীয় প্রাণির হাত থেকে ফসল অনেক অংশে রক্ষা পায়।

খুলনা সরকারি ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএল কলেজ) প্রাণি বিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. এ কে এম নজরুল কবীর বলেন, ‘আত্মরক্ষার্থে ছাড়া এরা সহজে মানুষকে কামড়ায় না। অকারণে মেছো বাঘ দেখলে নির্বিচারে আমরা তাদের মেরে ফেলি। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভূমিকা কম নয়। তাই মেছোবাঘ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।’

(ওএস/এস/জুন ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test