E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুখালীতে কথিত স্বপ্নে প্রাপ্ত পাথরের অলৌকিক চিকিৎসা!

২০১৭ জুন ০১ ১৬:০৩:০০
মধুখালীতে কথিত স্বপ্নে প্রাপ্ত পাথরের অলৌকিক চিকিৎসা!

আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর থেকে : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ব্যসদী চরপাড়া গ্রামে কথিত স্বপ্নে পাওয়া পাথরের চিকিৎসা দিচ্ছে আলম মন্ডল (৩৫)। গত প্রায় ৩ বছর যাবত চলছে তার এ কারবার। কবিরাজী চিকিৎসার পাশাপাশি চলছে তার জিনের চিকিৎসার কারবার।

স্বপ্নে পাওয়া এ পাথরের চিকিৎসা নিতে আলম মন্ডলের বাড়িতে ছুটে আসছেন আশেপাশের নানা শ্রেণির মানুষ। এসব রোগীদের সকলেই নিরক্ষর ও হতদরিদ্র। এদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রতিবন্ধী। মাঠে ভ্যান চালায় কিংবা কৃষি কাজ করে, যাদের আসলে রোগব্যাধীর বিপরীতে সুচিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য নেই তারাই আলম মন্ডলের পাথ চিকিৎসার শিকার। আলম মন্ডলের অপচিকিৎসায় এদের অনেকে সর্বস্বান্ত কিংবা প্রতারিত হলেও তাদের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এরইমধ্যে আলম মন্ডল এলাকায় একটি প্রভাব সৃষ্টি করে ফেলেছে। হেনস্থা হওয়ার ভয়ে অনেকেই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।

সরেজমিনে আলম মন্ডলের অপচিকিৎসার কারবার দেখতে গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ব্যসদি গ্রামে যাওয়ার পথে দেখা যায় বেশ কয়েকজন রোগী চিকিৎসা নিয়ে ফিরছেন আলম মন্ডলের বাড়ি থেকে। এরপর আলম মন্ডলের বাড়ি গিয়ে সেখানেও পাওয়া যায় অপেক্ষমান কয়েকজন রোগীকে। যাদের মধ্যে দু’জন ছিল প্রতিবন্দী। এদের একজন ১৫ বছরের রবিউল। হাবাগোবা রবিউল এসেছিল কান পচাঁ রোগ নিয়ে। গত তিন সপ্তাহ যাবত আলম মন্ডল তার চিকিৎসা করছে। একটি সিলভারের গামলায় পাথরটি ডুবিয়ে এরপর পাথরের পানি ঢালা হচ্ছিল রবিউলের কানে। কানের উপর হাত দিয়ে দেখা গেলো সেখানে শ্যাওলার মতো সবুজ আকৃতির দাগ পড়ে গেছে। কান দিয়ে বের হচ্ছে দূর্গন্ধ। জিজ্ঞাসা করতেই রবিউল সোৎসাহে বললো, আগের চেয়ে তার কান পচাঁ রোগ ভাল হয়েছে।

রবিউলের পরে আরো একজন পঞ্চাশোর্ধ মহিলাকেও একইভাবে দেখা গেলো কানের মধ্যে পাথর ভেজা পানির চিকিৎসা নিতে। তার পাশে আরো একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে বসেছিল চিকিৎসা নেয়ার আশায়।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর আগে স্থানীয় আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে আলম মন্ডল এ কারবার শুরু করে। তবে মাঝ পথে অন্যদের সাথে আলম মন্ডলের বিবাদ শুরু হলে তারা সটকে পরে। বর্তমানে আলম মন্ডল একাই এ কারবার চালাচ্ছে। এই চিকিৎসা কারবার শুরুর আগে আলম মন্ডল কৃষি কাজ ও গরু বাছুর লালন পালন করতো।

প্রতি সপ্তাহে দু’দিন শনি ও মঙ্গলবার এ চিকিৎসা দেয় আলম মন্ডল। তার দাবি, স্বপ্নে এ পাথর পেয়েছে সে স্থানীয় চন্দনা নদীর ঘাটে।

আলম মন্ডল জানায়, একরাতে আমি স্বপ্নের মাধ্যমে এই পাথর পাই। স্বপ্নে আমাকে দেখানো হয়, চন্দনা নদীর ঘাটে একটি পাথর রয়েছে। সে পাথর এনে মানুষের রোগ বালাইয়ের চিকিৎসা করালে আল্লাহর রহমতে রোগী সুস্থ্য হয়ে যাবে। এরপর থেকে স্বপ্নে প্রাপ্ত ওই পাথর দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করাচ্ছি। পাথর চিকিৎসার পাশাপাশি জিনের তদবিরের চিকিৎসাও দেন আলম। প্রতি শুক্রবার বাড়ির আঙিনায় রাতে ‘ভাড়ে’ বসেন। তখন তার ঘাড়ে জি¦ন আসে বলে দাবি আলম মন্ডলের। ওই সময় বিয়ে হয়না এমন অনেক যুবতীসহ নানা সমস্যায় আক্রান্তরা এসে ভিড় জমায়। আলম মন্ডলের দাবি, তার এ চিকিৎসায় অনেকেই ভাল হয়েছে। ভাল হয়ে রোগীরা তাকে নগদ টাকাসহ ছাগল, ভেড়া নানাকিছু দিয়েছে। তার নিকট চিকিৎসা পেতে প্রতি সাক্ষাতে সর্বনিম্ন ১০ টাকা দিতে হয়।

আলম মন্ডলের পাথরের ছবি তোলার সময় সে এই প্রতিবেদককে তার পথরের কেরামতি সমন্ধে নানা বর্ণনা দেয়। আলম মন্ডলের দাবি, এই পাথরের ছবি মোবাইলে তুলে রাখলে যেকোন বাস দূর্ঘটনায় অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যার মোবাইলে এই ছবি থাকবে তার কোন ক্ষতি হবে না।

অবশ্য আলম মন্ডলের এ দাবির সাথে একমত নয় স্থানীয় সচেতন অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, আলম মন্ডলের পাথরের অপচিকিৎসায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে হতদরিদ্র ও নিরক্ষর এসব মানুষ পরবর্তীতে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। স্থানীয়দেও চেয়ে বহিরাগত রোগীর সংখ্যাই বেশি। আলম মন্ডলের এই অসাধু কারবারের প্রথম দিকে স্থানীয় যারা তার সহযোগী ছিল এখন তারাও সটকে পরেছে। এখন এই অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরী। অন্যথায় দিনে দিনে এর প্রতারণা বাড়বেই।

এ ব্যাপারে রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন মৃধার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেউ আমার কাছে এ বিষয়টি জানায়নি। আমি নিজেও জানতে পারিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।

(এফএ/এএস/জুন ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test