E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুনামগঞ্জ সীমান্তে চাঁদাবাজিতে মরিয়া মোজাম্মেল-জাহাঙ্গীর

২০১৭ জুন ২১ ১২:৩০:৫৩
সুনামগঞ্জ সীমান্তে চাঁদাবাজিতে মরিয়া মোজাম্মেল-জাহাঙ্গীর

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট : আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ সীমান্তের নিরীহ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেয়ার টার্গেট নিয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের কুখ্যাত এসিড মামলার পলাতক আসামী ও সাইবার সন্ত্রাসীখ্যাত মোজাম্মেল আলম ভুঁইয়া ও জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া চক্র। চাঁদাবজিতে সহায়তা করার জন্য কয়েকটি অনলাইন নিজউ পোর্টাল, কিছু অসৎ বিজিবি সদস্য ও শাসক দলের অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় কয়েকজন পাতি নেতাকে ব্যবহার করে গত কয়েকদিন ধরেই ওই চাঁদাবাজরা বিকাশে চাঁদার টাকা নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।’

সুনামগঞ্জ সীমান্তের ভোক্তভোগী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সুত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ফসলহানির পর জেলার তাহিরপুর সীমান্তের বাদাঘাট উওর ইউনিয়নের লাউড়েরগড় সীমান্তের জাদুকাঁটা নদী, বড়দল উওর ইউনিয়নের মাহারাম নদীতে বালি পাথর উক্তোলন কাজে, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া, টেকেরঘাট কোয়ারী এলাকা,বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের চারাগাঁও, কলাগাঁও ছড়া, বাগলী সীমান্তের লামাকাঁটা রন্দুছড়া, বাগলী ছড়া নদীতে কয়েক হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক বাংলাদেশ অংশে বালি, মরাপাথর ও ওপার থেকে ভেসে আসা চুনাপাথর, বাংলা কয়লা উওোলন করে তা বিক্রির টাকায় গত কয়েকমাস ধরেই হতদরিদ্র শ্রমিকরা কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ’

শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, উপজেলার বাদাঘাটের বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা রব মিয়া ভুঁইয়া ও আয়া আলেনার বড় ছেলে এসিড মামলার পলাতক আসামী মোজাম্মেল আলম ভুঁইয়া (ঢাকায় পালিয়ে থাকা) ও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া (বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিক থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত) যৌথ ভাবে বিজিবি ও পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে হয়রানীর মুখে ফেলে বালি . মরাপাথর, চুনাপাথর ও কয়লা থেকে প্রতি ট্রলি দু’জনের নামে ৪০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদার জন্য মুঠোফোনে চাঁপ দিয়ে সীমান্তে তাদের নিজস্ব লোক নিয়োজিত করে বিকাশে চাঁদার টাকা নিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে কোন কোন ব্যবসায়ী কিংবা শ্রমিকরা চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিজউ পোর্টালে চোরাচালানী, ইয়াবা , মাদক ব্যবসায়ী , গরুচোরাচালানী, চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে ও অন্যান্য সসহযোগীদের দিয়ে শেয়ার লাইক কমেন্ট করিয়ে মানহানি ঘটানোর মত ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটিয়ে যাচ্ছে নির্ব্রিগ্নে।

শুধু এখানেই শেষ নয় কোন কোন পয়েন্ট থেকে চাঁদার টাকা না পেলেই মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সংবাদ পত্রের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার, বিজিবির অধিনায়ক, পুলিশের দায়িত্বশীর অফিসারদেরকের ভলু তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের গণহয়রানী এবং প্রশাসনিকভাবে অদৃশ্য চাঁপে ফেলে কোন কোন সময় চাঁদা দিতে বাধ্য করছে শ্রমিক ও ব্যবসাীয়ীদেরকে।’

এসব চাঁদা আদায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগীতা করছে লাউড়েরগড় সীমান্তের আলম, চাঁনপুরের বারেকটিলার রবিকুল, বাক্কার, টেকেরঘাটের বড়ছড়ার বুরুঙ্গার ফিরোজ , বড়ছড়ার আক্কল আলী, লালঘাটের রহিম উদ্দিন, চারাগাঁওয়ের শফিকুল ভৈরবী, কলাগাঁওর নব্য যুবলীগ নামধারী দু’জন বিতর্কিত কর্মী পরিচয়ধারী ও জামায়ত নেতার গুণধর এক ভাতিজা, লামাকাটার লতিফ ওরফে লতুর ছেলে নজরুল।’

নজরুল মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীরের নামে গত কয়েকদিন আগে শ্রমিক- ব্যবসায়ীদর নিকট থেকে কমপক্ষে ৪ দফায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে। চাঁদা নেয়ার কথা স্থানীয় বাগলী বিজিবি ও এলাকার লোকজনের নিকট স্বীকার করেছে নজরুল ওই দু’জনের জন্য সপ্তাহ খানেক পুর্বে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সে ৪৮’শ টাকা চুনাপাথর মরাপাথরের ট্রলি বাবত আদায় করেছিলো।’

উপজেলার জঙ্গলবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে কয়লা ও চুনাপাথর ব্যবসায়ী আইনাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর তাদের স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে আমার নিকট চাঁদা চেয়ে না পেয়ে গত কয়েদিন পুর্বে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিজউ পোর্টালে আমার কোন রকম বওব্য না নিয়েই মনগড়া মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করার পর তার অপকের্মের চাঁদা আদায়ের সহযোগীদের দিয়ে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে শেয়ার ও লাইক করিয়ে আমার ব্যবসায়ীক সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

একই গ্রামের মৃত আছাদ্দর মিয়ার ছেলে তোতা মিয়া জানান, আমি কৃষি কাজ ও ঠুকঠাক পাথরের ব্যবসা করি। মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর প্রায়ই আমাকে তাদের জন্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদর নিকট থেকে চাঁদা তুলে তাদের বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠানোর জন্য চাঁপ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে আমাকে মামলা দিয়ে জেল খাটানোরও হুমকি প্রদান করে, এরপর দিন কয়েক পুর্বে অহেতুক কয়েকটা অনলাইন পত্রিকায় আমার নামে মিথ্যা সংবাদ করিয়েছে ওই দুই চাঁদাবাজ ভাই ও তাদের সহযোগীরা।’

উপজেলার শ্রীপুর উওর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক স্থানীয় ইউপি সদস্য কয়লা আমদারিকার গ্রপের নেতা হাছান মিয়া একই অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারনে এলাকার কয়েক’ শ একর জমি, ছড়া -নদী জমি বালি, কয়লা, চুনাপাথর. মরা পাথর পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বোরো ফসল ডুবির পর এলাকার ও বহিরাগত কয়েক শত শ্রমিক রাতদিন এসব পাথর, বালি, বাংলা কয়লা ও ভেঁসে আসা চুনাপাথর উওোলন করে বিক্রি করে কোন রকম পেঠ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদর নিকট থেকে চাঁদা তুলে দেয়ার জন্য আমাকে কয়েক মাস ধরেই মোজাম্মেল তার ভাই জাহাঙ্গীর জাতীয় পত্রিকা , টিভি, সিলেট, সুনামগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা আরও কয়েক’ শ আনলাইন পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদেরকে বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে বিরক্ত করে আসছিলো, আমি চাঁদা তুলে দিতে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এলাকায় তাদের দুই ভাইয়ের কয়েক এজেন্টকে দিয়ে আমায় হুমকিও দেয়ায়, তাতেও সারা না দিলে গত কয়েকদিন পুর্বে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে আমাকে জড়িয়ে এসিড মামলার পলাতক আসামী মোজাম্মেল ওরফে ময়ুরী মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর ওরফে কইতরী জাহাঙ্গীর ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়ার বওব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে সে বলে আমাকে মানবজমিন পত্রিকার তাহিরপুর প্রতিনিধির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন কতৃপক্ষ এটা জানতে পেরেছি কিন্তু কোন অফিসিয়াল কাগজপত্র এখানো হাতে পাইনি। সীমান্তে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সে বার বার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলে দেখুন এসব বিষয়ে কথা না বলাই ভালো এ কথা বলেই সে মুঠোফোনের সংযোগ দ্রুত বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

একই অভিযোগ প্রসঙ্গে মোজাম্মেল আলম ভুঁইয়ার বওব্য জানতে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে সে প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নিজেকে টিভি, জাতীয় পত্রিকা ও কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলে, আমিও আপনাদের মত একজন সাংবাদিক ঢাকায় থাকি । অপরদিকে চাঁদা উওোলন ও চাঁদার জন্য নিরীহ ব্যবসায়ী শ্রমিকদের সীমান্তে চাঁপ সৃষ্টির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ফের নিজেকে বড় সাংবাদিক পরিচয় জাহির করতে একতরফা কথা বলতে থাকার এক পর্যায়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।’

থানা পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানায়, ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ রাতে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধির চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ১০ বছরের শিশু সন্তানের মুখে মোজাম্মেল ও তার সহযোগীরা এসিড নিক্ষেপ করে। একই বছরের ৫ এপ্রিল তাহিরপুর থানার মামলা নং ০৬ এসিড অপরাধ দমন আইনে দায়ের করা মামলায় চার্জশীট ভুক্ত ওয়ারেন্টের আসামী হিসাবে মোজাম্মেল সিলেট, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও রাজধানী ঢাকাতে থেকে নিজের মুঠোফোন ও সহোদর ভাই জাহাঙ্গীর সহ একাধিক এজেন্টকে ব্যবহার করে সুনামগঞ্জ সীমান্ত এলাকা সহ অন্যান্য এলাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ প্রকাশ ও না প্রকাশ করার শর্ত জুড়ে দিয়ে নানা কৌশলে চাঁদা আদায় এমনকি চাঁদার জন্য মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দোকান খুলে বসে আছে।’ আর তাদের এ অপকর্মে ব্যবহার করছে বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও তাদের নিয়োজিত সীমান্ত এজেন্টদের।’

তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে এসিড অপরাধ দমন আইনে ওয়ারেন্ট জারির ভিসয়টি স্বীকার করে বলেন, তাকে দ্রæত গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় পুলিশী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(এআর/এসপি/জুন ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test