E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ

২০১৭ জুলাই ০১ ২২:০৪:০২
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলা’র পন্য পরিবহনে নেই রেল যোগাযোগ। সেই দুর্নাম ঘুচতে যাচ্ছে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের। মোলা বন্দরের সাথে যুক্ত হচ্ছে রেল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর লোকসানের ভারে বন্ধ হতে চলা দেশের দ্বিতীয় এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরটিকে সচল করার পাশাপাশি কয়েক বছর ধলে মুখ দেখেছে লাভের। এরই ধারাবাহিকতায় রেলেপথের মাধ্যমে সার্ক ট্রাজিটের আওতায় প্রতিবেশী দেশের সাথে মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগ স্থাপনে ২০১০ সালে খুলনা- মোংলা রেল প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এই রেল প্রকল্পের কাজ চলছে এখন পুরোদমে। দীর্ঘ ৬৪ কিলোমিটার এই রেল পথের বড় বাধা খরস্রোতা রূপসা নদী। একই সাথে রূপসা নদীর উপর রেল সেতু নিমাণের চলছে মহাকর্মযজ্ঞ।

আগামী ২০১৯ সালের মধ্যেই চালু হবে খুলনা-মোংলা রেলপথ। মোংলা বন্দর থেকে এই রেল পথটি ৬৪ কিলোমিটার দুরে খুলনার ফুলতলায় গিয়ে রেল পথের সাথে যুক্ত হবে। এই রেল পথটি চালুর ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ন স্থানসহ সার্ক ট্রানজিটের আওতায় মোংলা বন্দরের সরাসরি পন্য পরিবহন হবে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানে। এমনটি আশা প্রকাশ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খুলনা-মোংলা রেলপথটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৮ শত ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরমধ্যে রূপসা রেল সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। ২০১০ সালে অনুমোদিত এ প্রকল্পটিতে ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহন ও ১৪ কিলোমিটার রেল পথের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট রেল পথের মাটি ভরাটের কাজও শুরু হয়েছে। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লারসন এ্যান্ড টার্বো লিমিটেড ৫ দশমিক ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেল সেতুর কাজ শুরু করে দিয়েছে। খুলনা শহরতলীর লবনচোরা পয়েন্ট দিয়ে রূপসা রেল সেতুর পিলার স্থাপনের কাজ পুরোদমে চলছে। একই সাথে এই রেল পথে ২১টি ছোটবড় ব্রীজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণের কাজও চলছে। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহন ও ঠিকাদার নিয়োগ বিলম্বের কারনে নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হবার আশা করছেন বাংলাদেশ রেলপথ বিভাগ। সরেজমিনে রূপসা রেল সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারিদিকে ঠুনঠান শব্দ। সেতুর পিলার নির্মাণে চলছে ঢালাইয়ের কাজ। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লারসন এ্যান্ড টার্বো লিমিটেডের কন্সট্রাকশন ম্যানেজার জ্যোতিন্দর সিং জানান, আগামী ১ বছরের মধ্যে রূপসা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এজন্য প্রকৌশলীসহ শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের বিষয়ে জানান, খুলনা-মোংলা রেল পথ ও রূপসা রেল সেতু নির্মানের কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যেই ৩১ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে খুলনা-মোংলা রেল পথের টেক-অফ পয়েন্ট খুলনা ফুলতলা দিয়ে রূপসা রেল সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ করে আংশিক উদ্বোধন করা হবে।

তবে আগামী অর্থ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহন ও ঠিকাদার নিয়োগ বিলম্বের কারনে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এই প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের অভ্যন্তরে পন্য পরিবহনের পাশাপাশি সার্ক ট্রানজিটের আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে মোংলা বন্দরে খালাস হওয়া পন্য পরিবহন করবে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে ভারতের সাথে আমাদের পেট্রাপোল-বেনাপোল, গেদে-দর্শনা, সিঙ্গাবাদ-রহনপুর ও রাধিকাপুর-বিরল দিয়ে রেল পথের যোগাযোগ রয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক জানান, মোংলা বন্দরে খালাসকৃত পন্যে পুরাটাই এতোদিন নৌ ও সড়ক পথে পরিবহন করা হতো। বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক সমূদ্র বন্দর যার সাথে ছিলনা কোন রেল যোগাযোগ। মোংলা বন্দরের সাথে রেল যোগাযোগ ছিল স্বপ্ন। এতোদিন মোংলা বন্দরের দুঃখ ছিল রেলপথ না থাকা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী সিদ্ধান্তে লোকসানের ভারে বন্ধ হতে চলা মোংলা বন্দর এখন শুধু সচলই নয় একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় মোংলা বন্দরের সাথে রেল পথের স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হতে চলেছে।

গত অর্থ বছরে মোংলা বন্দরে ৬শ’টি জাহাজ হ্যান্ডেলিং করে লাভ হয়েছে ১ শত ৮৮ কোটি টাকা। মোংলা বন্দরের সাথে রেল পথ চালু হয়ে এই বন্দর বছরে ৬ হাজার জাহাজ হ্যান্ডেলিং করতে পারবে। আর এতে করে বছরে বন্দরের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই বন্দর পরিকল্পনাবিদ।

তিনি আরো জানান, আগে আমাদের পন্য পরিবহনে সড়ক ও নৌ পথের উপর নির্ভর করতে হতো। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করলেও রেল পথ না থাকায় তারা এ বন্দরটি ব্যবহার করতে পারেনি। রেলপথ চালু হলে এই ৩টি দেশে মোংলা বন্দরে খালাসকৃত পন্য পরিবহনে একদিকে যেমন সহজতর হবে অন্যদিকে আমদানী-রপ্তানীকারকরা কোন জাহাজ জট ছাড়াই খুব সহজে এ বন্দর দিয়ে পন্য খালাস ও পরিবহন করতে পারবে। এরফলে বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি জাতিয় অর্থনীতিতে মোংলা বন্দর গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে একদিকে নতুন নতুন শিল্পকারখান স্থাপনসহ জাতীয় অর্থনীতি ও এঅঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।

বাগেরহাট নাগরিক ফোরামের সাধারন সম্পাদক ও বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টির সাবেক সভাপতি সরদার আনসার উদ্দিন বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের সাথে রেল প্রকল্পরে কাজ শুরু করায় বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে শুধু মংলা বন্দর বা এই বন্দরটি ব্যবহারকারী আমদানী-রপ্তানীকারকদেরই লাভ হবে না আমাদের জাতিয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। দেশের পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে শিল্পকারখান স্থাপনসহ বেকার যুবকদের কর্মস্থান হবে। একই সাথে এই নাগরিক ও ব্যবসায়ি নেতা খুলনা-মোংলা রেল পথের বাগেরহাটের কাটাখালী পয়েন্ট দিয়ে গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতু পর্যন্ত আরো একটি নতুন রেলপথ নির্মানের দাবি জানান।

(একে/এএস/জুলাই ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test