E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বদরগঞ্জে ভিজিএফ’র গম কেলেঙ্কারিতে তদন্ত কমিটি গঠণ

২০১৭ জুলাই ০৪ ১৫:২৫:৪৪
বদরগঞ্জে ভিজিএফ’র গম কেলেঙ্কারিতে তদন্ত কমিটি গঠণ

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : রংপুরের বদরগঞ্জে ভিজিএফ’র গম কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইউএনও’র নির্দেশে ২জুলাই পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। পনের কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে এর আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে গুদামের গম। ফলে সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২৯জুন গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে এসিল্যাÐ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি মিলচাতালে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ী নিখিল কুন্ডুর গুদাম থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের সিল মারা ১৪৭বস্তা গম জব্দ করে। খবর পেয়ে পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র উত্তম কুমার সাহা এবং আওয়ামীলীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

এরপর তারা দু’জনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বাধা দেন। ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিখিল কুন্ডুর ১৪৭বস্তা গম জব্দ করলেও একই স্থানে অবস্থিত মানিক রাহার গুদামে অভিযান চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।

এসময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিকদের নানা হুমকি দেন এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেন।

এ ঘটনার তিনদিন পর গত রবিবার ২জুলাই ইউএনও রাশেদুল হক পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেন। যার প্রধান হলেন এসিল্যান্ড আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মকবুল হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী আবু তালেব সরকার ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার রবিউল পারভেজ। কমিটিকে পনের কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে এলাকা ঘুরে জানা গেছে তদন্ত কমিটি গঠণ হওয়ার আগেই রাতের আাঁধারে গুদাম থেকে সব গম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে জনমনে নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা জাসদনেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে বলেই এই তদন্ত কমিটি। তবে এদেশে কোন কমিটিই সুষ্ঠু তদন্ত করেছে বলে মনে পড়েনা।

তিনি বলেন, যেখানে প্রমাণই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে সেখানে সুষ্ঠু তদন্তের আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

জাপানেতা এডভোকেট মোকাম্মেল হক চৌধুরী পৌর মেয়র উত্তম কুমার সাহা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইটকে লুটেরা এবং দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে বলেন, তাদের কাজই হল অনিয়ম আর দুর্নীতি করা। অথচ তারা দু’জনই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন- এবারেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কেননা ওই দুই ব্যবসায়ী পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আশির্বাদপুষ্ট। একারণে তদন্ত হলেও তা আলোর মুখ দেখবেনা।

উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে মানুষটি ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকার পরেও সঠিকভাবে অভিযানই চালাতে পারেননি তাকে করা হয়েছে কমিটির প্রধান।

এছাড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার দু’জনই অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত। আর বাকী দু’জনের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং এমন একটা কমিটিকে দিয়ে কখনোই সুষ্ঠু তদন্তের আশা করা যায়না।

তিনি বলেন, এটা ‘আইওয়াশ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আমরা এমন এক জাতি সবকিছু সহজেই ভুলে যাই। এই পনের দিনের মধ্যে গম কেলেঙ্কারির কথা আমরা সবাই বেমালুম ভুলে যাব। তারপর সব দুর্নীতিবাজ আবারো এক হয়ে লুটপাটে মেতে উঠবে।

তবে ইউএনও রাশেদুল হক তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে বলেন, গম কেলেঙ্কারির সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এবি/এসপি/জুলাই ০৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test