E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরিদপুরের নকশা বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা লাক্সারী প্যালেস বহাল তবিয়তে

২০১৭ জুলাই ০৫ ১৯:৫৪:৪৫
ফরিদপুরের নকশা বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা লাক্সারী প্যালেস বহাল তবিয়তে

আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : শহরের অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত ঝিলটুলী মহল্লার দক্ষিণ কালিবাড়ি সড়কে নকশা বহির্র্ভূতবাবে গড়ে ওঠা ১০ তলাবিশিষ্ট লাক্সারী প্যালেসের কোন নিজস্ব সেফটিক ট্যাংক ও ছোকওয়েল নেই। ভবনের পাশে দিয়ে নির্মিত পৌরসভার ড্রেনের সাথে সংযোগ করে এই মলমূত্র নিস্কাশন করা হচ্ছে। ফলে এই ভবনের ফ্লাটে বসবাসরতদের নিত্যদিনের মলমূত্র ড্রেনের মাধ্যমে কুমার নদের পানিতে মিশছে। এতে বহুতল ভবন ছাড়াও কুমার নদের পরিবেশ দুষণ হচ্ছে মারাত্মক আকারে। ভবনটিতে বসবাসরতরাও দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না। খোদ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে বহুতল ভবনের এ হেন দশা।

১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে। ২০১৫ সালে ফরিদপুর পৌরসভা ভবনটিকে নকশা বহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ফরিদপুরের গণপূর্ত বিভাগকে তারা চিঠিও দেয়। কিন্তু তারপরেও ভবন ও ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। বারবার অভিযোগ জানানো সত্বেও এ ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এহেন অবস্থায় নিরুপায় হয়ে সম্প্রতি লাক্সারী প্যলেসের ২৭ জন ফ্লাট মালিক ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র ও পরিবেশ অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবর এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতিকারের আশায়। এছাড়া ভবনের নকশা পেতে তারা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পৃথকভাবে আরো একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

ফরিদপুরের ১১৮ নং মৌজার আরএস ১০৩ ও এসএ ৯৪ নং খতিয়ানের ১৭৫১ নং দাগে সাড়ে ৮ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে লাক্সারী প্যালেস। প্রতি ফ্লোরে ৪টি ইউনিট করে ১০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনে ৪০টি ফ্লাট রয়েছে। এরমধ্যে এপর্যন্ত ২৭টি ফ্লাট বিক্রি হয়েছে।

ইতিপূর্বে ২০১৫ সালের এপ্রিল মে মাসে ত্রুটিপূর্ণ নকশার মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। গণপুর্ত বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মানিক লাল দাস সাংবাদিকদেও নিকট চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকারও করেছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ লাক্সারী প্যালেসের বহুতল ভবন নিয়ে পৌরসভা থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাহী প্রকৌশলী মানিক লাল দাস সেসময়ে অরো জানিয়েছিলেন, তিনি সরেজমিনে পিডব্লিউডির প্রকৌশলীদের নিয়ে ভবনটি পরিদর্শণ করেছেন। ভবনটি নির্মাণের সময় কোন তদারকি কর্তৃপক্ষের উপস্থিতির তথ্য পাওয়া যায়নি। কতোটুকু নিয়ম মেনে কাজ হয়েছে বলতে পারবো না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু তারপরেও দু’বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু ভবনটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ভবন মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় এসব প্রক্রিয়া বারবার থেকে যায়। এতে ফ্লাট মালিকদের দুর্ভোগেরও অবসান হয়নি। কুমার নদে পয়:বর্জের দুষণ সৃষ্টিও রোধ করা যায়নি।

গত ১ জুলাই লাক্সারী প্যালেসের ফ্লাট মালিকগণ এক লিখিত অভিযোগ পত্রে অভিযোগ করেন, লাক্সারী প্যালেসটির দুষিত পানি ও মলমূত্র নিস্কাশন করার জন্য কোন সেফটিক ট্যাংক ও ছোকওয়েল নেই। বরং পৌরসভার ড্রেনের সাথে পাইপে সংযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দুষিত পানি ও মলমূত্র সঠিকভাবে নিস্কাশন না হওয়ায় দুর্গন্ধে উক্ত ফ্লাটে বসবাস করা দুর্বিষহ হয়ে পরেছে। এব্যাপারে ভবন মালিককে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। ভবন মালিকের নিকট ভবনের প্লান ও নকশার সত্যায়িত কপি চেয়ে বারবার তাগাদা দিলেও তিনি তা দেননি।

ফ্লাট মালিকগণ অভিযোগ করেন, ভবন মালিক ফ্লাট ক্রয়ের শুরু থেকেই তাদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। ক্রয়ের সময় তাদেরকে ভবনের প্লানের সত্যায়িত কপি দেয়ার জন্য এক সম্পাহের সময় চেয়ে নিয়েছিল ভবন মালিক গুলজার আহম্মেদ খান। কিন্তু তারপর বহুদিন পার হলেও অদ্যাবধি প্লানের সত্যায়িত কপি পাননি। ফরিদপুর পৌরসভার মেয়রের নিকট প্লানের কপি চেয়ে সম্প্রতি তারা একটি আবেদন করেছেন। তাদের সে আবেদনও গ্রাহ্য করা হচ্ছে না বলে তারা জানান। বর্তমানে পয়বর্জ্র নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মলমূত্রের দূর্গন্ধ ভেসে আসছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করার তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাদের প্রশ্ন, দুর্ভোগ পোহানের জন্য তো আর তারা টাকা পয়সা খরচ করে ফ্লাট কিনেননি।

ফ্লাট মালিকগণ আরো অভিযোগ করেন, এসব এ ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য না করার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভবন মালিক ফন্দি ও পরিকল্পনা করে তাদের নাজেহাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এর প্রতিকার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাক্সারী প্যালেসের সকল ফ্লাট বাড়ির মলমূত্র পৌরসভার ডেনের সাথে সংযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা শিঘ্রই ব্যবস্থা নেবো।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পৌরসবার নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার সামসুল আলম বলেন, ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে সেফটিক ট্যাংক ও ছোকওয়েলবিহীন ভবন কিভাবে গড়ে উঠলো? বিষয়টি তদন্তপূর্বক এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

এ ব্যাপারে লাক্সারী প্যালেসের মালিক গোলজার আহম্মেদ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন ফ্লাট মালিকগণ সব শর্ত মেনেই তার নিকট থেকে ফ্লাট ক্রয় করেছেন। তবে সেফটিক ট্যাংক ও ছোকওয়েল না থাকা এবং পৌরসভার ড্রেনের সাথে পয়:বর্জের সংযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(এফ/এএস/জুলাই ০৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test