E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোহাগড়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রক্রিয়া

২০১৭ জুলাই ০৬ ২২:০৫:৪৩
লোহাগড়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রক্রিয়া

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ায় ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়ছে। অমর্যাদাকর পেশা ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ভিক্ষার হাতকে কর্মের হাতে রুপান্তর করে তাদের মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনা ও তাদের জীবন মানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হচ্ছে না।

ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফেরাতে সরকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছে। তাদের পুর্নবাসনে নগদ অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণসহ বিনাসুদে ঋণ দিচ্ছে সরকার। শুধু তাই নয়, ভিক্ষুকদেরকে কর্মমুখি করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকানঘর নির্মাণ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। এছাড়া তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ভিজিডি, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও ১০ টাকা চালের কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। ভিক্ষুকদের কর্মকান্ড তদারকির জন্য উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসারদের নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের পুর্নবাসনে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১ দিনের বেতন, বিভিন্ন সংগঠন ও দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে একটি পুণর্বাসন তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে ভিক্ষুকদের নগদ অর্থ, দোকান ঘর, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ব্যবসায়িক উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এত কিছুর পরও ভিক্ষুক পূণর্বাসন প্রক্রিয়া থমকে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত ‘উন্নয়নের স্রোতধারায় ভিক্ষুকমুক্ত নড়াইল জেলা’ বই থেকে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলায় ২২৭ জন ভিক্ষুককে পুর্নবাসন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে।

চাহিদার তুলনায় যোগান কম, ব্যবসা অনুপোযোগী স্থানে দোকানঘর নির্মাণ এবং তদারকির অভাবকে ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রক্রিয়ায় বড় বাধা- বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে পুর্নবাসিত ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সব স্থানে দোকানঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থানে বেচাকেনা হচ্ছে না। দোকানের আয় থেকে তাদের সংসার চলছে না। ফলে তারা সংসার চালাতে দোকানের পুঁজি ভেঙে খাচ্ছে।

১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ও উপজেলা পরিষদের সামনে সরকারের পক্ষ থেকে ভিক্ষুকদের পূণর্বাসনের জন্য বেশ কয়েকটি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকানের অধিকাংশই বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে।

সরকার আপনাদের পূণর্বাসনের জন্য যে সব দোকানঘর নির্মাণ ও উপকরণ দিয়েছে তাতে কতটুকু উপকৃত হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা পরিষদের সামনে নির্মিত দোকানের পূণর্বাসিত ভিক্ষুক তারা মিয়া বলেন, আমরা কোন উপকার পাচ্ছি না। আমাদেরকে যে স্থানে দোকান করে দেওয়া হয়েছে সেখানে লোকজনের পদচারনা খুবই কম। সারাদিন বসে থেকে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ দিয়ে আমাদের কি হবে?” কি করলে আপনাদের বেচাকেনা বৃদ্ধি পাবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এই দোকানঘর গুলি যদি লক্ষীপাশা মাছ বাজারের নিকট অথবা লোহাগড়া গরুর হাটের নিকট নির্মান করে দিত তাহলে আমাদের বেচা কেনা ভালো হতো।

একই স্থানে নির্মিত দোকানের পুর্নবাসিত ভিক্ষুক আব্দুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এখানে ২০ থেকে ৩০ টাকা সর্বোচ্চ ৫০ টাকা বিক্রি হয়, তা দিয়ে সংসার চলাত দুরের কথা পুঁজি ভেঙ্গে ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে।

উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের পুনর্বাসিত ভিক্ষুক মোঃ আকুব্বর এর তদারকি কর্মকর্তা কাশিপুর কে.সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং চরদৌলতপুর গ্রামের পুনর্বাসিত ভিক্ষুক শেফালী রানীর তদারকি কর্মকর্তা দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তসলিম শেখ বলেন, “তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে আমাদেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে’-এ কথাতো আজি শুনলাম।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, দারিদ্র ও ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করি। সে লক্ষ্যে ভিক্ষুকদের সঠিকভাবে পুর্নবাসন করতে হলে তাদের দোকানগুলো হাট-বাজার ও জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা যেতে পারে। এ ছাড়া বাজার কেন্দ্রিক যেসব সরকারি জায়গা অবৈধ দখলে রয়েছে, সেসব দখলমুক্ত করে ভিক্ষুকদের জন্য ব্যবসায়িক স্থাপনা নির্মাণ করলে হয়তো তাদের অভাব অনেকটাই দূর হবে।

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীনের সাথে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে পুর্নবাসিত ভিক্ষুকদেরকে কর্মসংস্থানের জন্য তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়নের হাটবাজার কেন্দ্রিক খাসজমিতে দোকান ঘর নির্মান করে দেওয়া হবে।

(আরএম/এএস/জুলাই ০৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test