E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বোয়ালমারীতে নতুন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা বেশিরভাগ ভুয়া      

২০১৭ জুলাই ১৩ ১৯:৫৫:১৪
বোয়ালমারীতে নতুন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা বেশিরভাগ ভুয়া      

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের মত ফরিদপুরের বোয়ালমারীতেও যাচাই বাছাই শেষে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় বিগত সময়ে যে সমস্ত ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে অথবা দুর্নীতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন মূলত যাচাই-বাছায়ের মাধ্যমে তাদেরকে বাদ দেয়া এবং বাদ পড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অন্তর্ভুক্তির জন্যে সারাদেশের মত বোয়ালমারীতেও বর্তমান সরকার যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়োগ দেয়। যাচাই-বাছাই কমিটি নজীরবিহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে গেজেট প্রকাশের পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়া ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে প্রতিবাদের ঝড় উঠায় তরুণ প্রজন্মের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। বিকল্প গণমাধ্যমে পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েও কথা বলতে শোনা যায় নাই কমিটির কাউকে।

কেউ কেউ অভিযোগ তোলেন প্রায় ৩কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে যাচাই-বাছাই কমিটির বিবেক। স্থানীয় অনেক সাংবাদিক বিষয়টা নিয়ে মুখ খুললেও কেউ কেউ যাচাই-বাছাই কমিটির দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতে তৎপর ছিলেন বেশি।

উপজেলার এগারোটি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌর সভার মধ্যে ময়না ইউনিয়নের চিত্র থেকেই নিরূপণ করা যাবে গোটা উপজেলার দুর্নীতির মাত্রা।

ময়না ইউনিয়নের আমগাছিডাঙ্গি গ্রামের জালাল উদ্দিন আহমেদ, পিতা-মৃত: পিজির উদ্দিন এবার নতুন ভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকা ভূক্ত হয়েছেন। তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো প্রকার শর্ত পূরণ না করেই তিনি যাচাই-বাছাই কমিটির নেক নজরের কারনেই মুক্তিযোদ্ধা হতে পেরেছেন।

জালাল উদ্দিন সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন ?
তিনি উত্তর দেন ১৫ নং সেক্টর। অবাক করা বিষয় , সেক্টর কমান্ডার বা প্রধান কে ছিলেন? এমন প্রশ্নে, তিনি তৎকালীন মুজিব বাহিনীর থানা কমান্ডার নওয়াব উদ্দিন আহমেদ টোকনের নাম বলেন। এ ব্যাপারে একই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন এবং আব্দুস সামাদ শিকদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, এই নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলো না।

জনাব জালাল উদ্দিন অনুসন্ধানরত সাংবাদিক দল কে অনুরোধ করে বলেন– “আমার ছেলে অনেক টাকা পয়সা খরচ করে কাজটি করেছে, আপনারা ক্ষতি করবেন না।”
জালাল উদ্দিন সম্পর্কে তার প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমান এবং পবন শেখ বলেন, জালাল মুক্তিযোদ্ধা ছিলো না। সে একাত্তরে ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে।

একই ইউনিয়নের পাঁচ ময়না গ্রামের অধিবাসী বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য জনাব আব্দুর রহমান সাহেবের আস্থাভাজন, সাংবাদিক নূর ইসলাম মোল্লার পিতা আহেজ মোল্লাও এলাকাবাসীকে অবাক করে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করে ফেলেছেন।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, একাত্তরে এলাকার হিন্দু বাড়িতে লুট হওয়া মালামাল আহেজ মোল্লার বাড়িতে জমা হতো। এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অবঃ: পুলিশ সদস্য জালাল উদ্দিন (কেয়াগ্রাম) এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামা খালুর জোরে সে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। আহেজ মোল্লার ব্যাপারে তার প্রতিবেশী মালেক শেখ বলেন-” আহেজ ফকির(মোল্লা) মুক্তিযোদ্ধা না ঘোড়ার ডিম ছিলো। ওরা আওয়ামী লীগ মরাতো না ! নতুন আওয়ামী লীগ হয়েছে !”

আহেজ মোল্লার অপর প্রতিবেশি ময়না হাই স্কুলের সহকারী প্রাধান শিক্ষক জনাব আবুল হাসেম মৃধা বলেন, আহেজ মোল্লা একজন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা। এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন নুর ইসলাম মোল্লা এমপির প্রভাব খাটিয়ে নিজের পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে ।আহেজ উদ্দিন মোল্লার বক্তব্য নিতে এই প্রতিবেদক তার বাড়িতে গেলে বাড়ি থেকে জানানো হয় তিনি বাড়ি নেই। সাত জুলাই দুপুর বারোটা বিশ মিনিটে বার কয়েক সাংবাদিক নূর ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বোয়ালমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশিদ মোল্লার বন্ধু আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী ড. শফিউদ্দিন আহমেদ (তারেক শফী) ভারতে না গিয়েও, এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেখতে পারলেও যাচাই-বাছাইয়ের তেলেসমাতিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন। একাধিক ব্যক্তি জানান যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে তিনি একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষে তার এলাকার কেউ কে স্বাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারেন নাই।তারপরও তিনি অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে! তার ঘনিষ্ট একজন, রশিকতা করে বললেন- “শফিউদ্দিন যেদিন যুদ্ধ করেছিলো, সেদিন এলাকাবাসী বাড়ি ছিলো না”। ড . শফি উদ্দিন আমেরিকা থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নাই।

উল্লেখিত তিনজন ছাড়াও আরো ৯জন একই ইউনিয়ন থেকে নতুন ভাবে তালিকাভূক্ত হয়েছে। সবার ব্যাপারেই ইউনিয়ন কমান্ডার জালাল উদ্দিন (কেয়াগ্রাম) নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এদের সবার ব্যাপারে আমি আপত্তি জানিয়েছি, কিন্তু যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিবসহ কেউ আমার আপত্তি কানে তোলেন নি।”

যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি অধ্যপক আব্দুর রশিদ স্থানীয় একটি মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে কোন প্রকার দুর্নীতি হয় নাই। লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনর ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার কোনো অর্থ লিপ্সা নেই। অর্থ লিপ্সা থাকলে আমি এবার কোটিপতি হতে পারতাম। সদস্য সচিব ইউ.এন ও রওশন আরা পলিও বলেন, “আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, এ এলাকার সবাই কে চিনিনা, আমি যতদূর জানি যাচাই-বাছাইয়ে কোন প্রকার অস্বচ্ছতা হয় নি।”

বেশ কয়েকজন মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ থেকে জানা যায়,
বেশ কিছু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবার অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রতিযোগিতায় ছিটকে পড়লেও সাবেক তালিকাভূক্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কেউই বাদ পড়ে নাই নতুন যাচাই-বাছাইয়ে ।

(পিএস/এএস/জুলাই ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test