E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চরমপন্থী আতংঙ্ক

বাগেরহাটে সরকারি কর্মকর্তারা চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকি

২০১৭ জুলাই ১৪ ১৪:৫৬:৫৬
বাগেরহাটে সরকারি কর্মকর্তারা চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকি

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারিদের মধ্যে ‘চরমপন্থি আতংঙ্ক’ ছড়িয়ে পড়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ) পরিচয়ে বাগেরহাট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে গতকয়েক দিন ধরে চরমপন্থী সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে দফায়-দফায় মোবাইল ফোন করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিকৃত ওই টাকা না পেলে বাগেরহাট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে ওইসব চরমপন্থীরা নাম ব্যবহারকারী।

এমনকি চরমপন্থীদের হত্যার হুমকির মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও। মোবাইল ফোনে চাঁদা চেয়ে হুমকিপ্রাপ্ত ওই সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভীতসন্ত্র হয়ে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত ভাবে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এসব হুমকিদাতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

বাগেরহাট বিদুৎ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে তার দাপ্তরিক ল্যান্ডফোনে কল এলে তিনি রিসিভ করার পর নিজেকে পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পাটি’র্র (এমএল-জনযুদ্ধ) সদস্য শিমুল পরিচয় দিয়ে ফোনটি তার কথিত বস দাদা তপনের কাছে দিয়ে দেয়। দাদা তপন তার কাছে দলের নেতা-কর্মীদের চিকিৎসা ও বিভিন্ন খরচ বাবদ ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে জীবন নাশের হুমকি দেয়। একই দিন ০১৬৩৬-৬৫৬২০৪ এবং ০১৯৯৭-৫৫১৭১২ মোবাইর নম্বর থেকে বাগেরহাট বিদুৎ অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরমপন্থি পরিচয়ে জীবন নাশের হুমকিসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়। ওই দিনই বিদুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারন ডাইরী করা হয়েছে।

বাগেরহাট বিদুৎ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী প্রকৌশলী তার দায়ের করা সাধারন ডাইরীতে হুমকির কারণে নিরাপত্তার অভার বোধসহ মানুসিক চাপের কারনে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পারন বিঘ্নিত হবার সম্ভবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

গত কয়েকদিন চরমপন্থী সংগঠন জনযুদ্ধের প্রধান দাদা তপন, শিমুল ও হাতকাটা বিল্পব নাম পরিচয় দিয়ে বাগেরহাট বিদুঃ বিভাগ, এলজিইডি, মোল্লাহাট শিক্ষা অফিস, প্রণিসম্পদ বিভাগ এবং কচুয়া শিক্ষা অফিসহ বিভিন্ন উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হচ্ছে। ফোন করে অপর প্রান্ত থেকে জনযুদ্ধের পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়।

হুমকিদাতারা নিজেদের চরমপন্থী পরিচয় দিয়ে বলছে, গোলাগুলিতে তাদের দলের কয়েকজন সদস্য জখম হয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরী ভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণ টাকার প্রয়োজন। ২০ লাখ টাকা থেকে পাঁচহাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।

হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কোন কোন উপজেলার কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে বাগেরহাট এলজিইডি অফিসের পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চরমপন্থী পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে হুমকি দেয়া হয়। এই হুমকির পর বাগেরহাট এলজিইডি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরমপন্থি আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বাগেরহাট এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম রাব্বানী জানান, চরমপন্থী জনযুদ্ধের বিল্পব বাহিনী পরিচয় দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে পোনে ৫টা পর্যন্ত তিন দফায় তার কাছে মোবাইল করে চাঁদা দাবি করা।

প্রথম দফায় ফোন করে ২০ লাখ টাকা দাবি করে হুমকিদাতা। ওই পরিমাণ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় পরবর্তীতে ১০ হাজার টাকা দাবি করে ওই চরমপন্থী পরিচয়দানকারী। হুমকির মুখে সে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। এর পরে ওই হুমকিদাতা একটি বিকাশ নম্বর দিয়েছে টাকা পাঠানোর জন্য। বিষয়টি কাউকে জানালে পরিনতি খারাপ হবে বলে হুমিকদাতা জানিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দেয়। এমনকি স্ত্রী ও সন্তানদেরকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানান।

ওই অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সাহিদ আলম ভুঁইয়া জানান, প্রায় একই সময়ে তাকেও ফোন করে চরমপন্থী পরিচয় দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা না পেলে হত্যার হুমকি দিয়েছে তাকে।

একই ভাবে চরমপন্থী পরিচয় দিয়ে এলজিইডির হিসাব রক্ষক আব্দুল ওহাব, হিসাব সহকারী মো. আলম এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান আসাদুল হকের কাছেও একই ভাবে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কচুয়া উপজেলার একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, তাকে এবং তার অফিসের কয়েকজনকে চরমপন্থী জনযুদ্ধের পরিচয় দিয়ে হাতকাটা বিল্পব বাহিনীর কথা বলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। দাবিকৃত ওই টাকা না পেলে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনম খায়রুল আনাম জানান, মোল্লাহাট উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোন করে চরমপন্থী দলের সদস্য পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। হুমকিদাতা তাদেরকে জানিয়েছে যে, তাদের (চরমপন্থী) দলের বেশ কয়েকজন গোলাগুলিতে আহত হয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের চিকিৎসা করাতে প্রচুর পরিমাণ টাকার প্রয়োজন। সঙ্গীদের চিকিৎসা করানোর জন্য এই টাকা চাওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেছেন, কয়েক দিন ধরে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মোবাইল ফোন করে চরমপন্থী জনযুদ্ধের পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। পুলিশ মোবাইল ট্রাক করে হুমকিদাতার অবস্থান মোটামুটি জানতে পেরেছে। মিথ্যা নাম পরিচয় ব্যবহার করে ওই হুমকি দিয়েছে। পুলিশ তাকে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে। ওই হুমকিতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এক সময়ে চরমপন্থী অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমানে চরমপন্থীদের কোন ধরণের কার্যক্রম নেই বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছে।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test