E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালুয়াঘাটে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণজনিত অপরাধ

২০১৭ জুলাই ১৮ ১৩:৫৫:৫১
হালুয়াঘাটে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণজনিত অপরাধ

জোটন চন্দ্র ঘোষ, ময়মনসিংহ : হালুয়াঘাটে গত ২০১৬ সনের জুন মাস থেকে ২০১৭ সনের জুন মাস পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর ১০টি ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ ও গণধর্ষণ মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন থাকলেও দু একটি মামলা পুলিশ তদন্তে আসামীদের অব্যহতি প্রদান করা হয়েছে।

জানা যায়, পূর্বের বিগত বছরের তুলনায় অত্র থানা এলাকায় গত এক বছরে হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণ জনিত অপরাধ। মানবিক মূল্যবোধের অভাবে এমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি হওয়ায়, আতংকে রয়েছেন সুশীল সামাজের বিজ্ঞ মহল।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের গোপীনগর গ্রামে গত ১৯ জুন সোমবার দিবাগত রাতে ৪ সন্তানের জননীকে একই এলাকার সিরাজ আলীর পুত্র জামাল, ইদ্রিস আলীর পুত্র খাইরুল, জাকুর পুত্র এমদাদুল ও জয়নালের পুত্র ফরহাদ পালাক্রমে র্ধষণ করে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ২১ জুন বুধবার দুপুরে স্থানীয় মৌলবীবাজারে অত্র এলাকার কথিত পুলিশের এস আই দাবীদার আব্দুল মন্নাসের পুত্র রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, আব্দুল লতিফ এর পুত্র মফিদুল, ফুল মাহমুদের পুত্র মফিজুল, আব্দুস সামাদের পুত্র আব্দুল হাই ও ইউপি সদস্য আরফান আলী ও মোস্তফা গণধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সালিশে বসেন।

ধূড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে ৩ সন্তানের জননীকে ২৮ জুন দিবাগত রাতে নিজ বাড়িতে একই গ্রামের চেঙ্গু ভুইয়া এর পুত্র হেলাল ভুইয়া (৪৫) ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় মহিলাটির চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষককে আটকের পর গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় মহিলার স্বামী বাদী হয়ে আটক ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেন।

ধারা ইউনিয়নের উত্তর দড়িনগুয়া গ্রামের ১৪ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি কিশোরিকে ফুঁসলিয়ে নির্জন ঘরে নিয়ে কাজিম উদ্দিন একাধিকবার ধর্ষণ করে। ঘটনাটি তিন মাস পূর্বে ঘটলেও পরে তা প্রকাশ পায়। গত ২৮ মে কিশোরীর পিতা মোঃ চানমিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কাজিম উদ্দিনকে আটক করেন হালুয়াঘাট থানা পুলিশ।

গত ৩ অক্টোবর উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নে কিসমত নড়াইল গ্রামে চার বছরের শিশু কন্যা কে একই গ্রামের আব্দুল খালেকের পুত্র জহুরুল (২৩) টাকা দেওয়ার প্রলোভনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিকেলে পাশ্ববর্তী জঙ্গলে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর পুত্র মোঃ দুলাল মিয়া (৬০) একই গ্রামের ১০ বছরের কন্যা কালিয়ানীকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে টাকা দেওয়ার প্রলোভনে ১৭ অক্টোবর সকালে তার বসত ঘরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

বিলডোরা ইউনিয়নের পূর্ব নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ১৬ বছর বয়সী কন্যাকে একই গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর পুত্র সাদেকুল ইসলাম (২৪) বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার শারীরিক সর্ম্পক স্থাপন করে। এক পর্যায়ে অন্তস্বত্তা হয়ে পড়ে এই ষোড়শী কন্যা। একাধিকবার বিবাহিত দুই সন্তানের জনক সাদেকুল ইসলামকে তৃতীয় বিয়ে করার জন্য তার দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুমতিপত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় শালিসে।

হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোবড়াকুড়া গ্রামে ৭ আগষ্ট দুপুরে যৌতুকের টাকার জন্য ৯ মাসের অন্তস্বত্তা গৃহবধুকে পুঁড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ, স্বামী ও শ্বাশুড়ীকে আটক করে।

নিহতের নানী ফুলেছা বেগম ও স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১ বৎসর পূর্বে একই এলাকার নসিম উদ্দিনের পুত্র আবু সাঈদ (৩০) এর সহিত সোলেমান শেখ-এর কন্যা বিলকিছ (২৮) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের সময় ২ লাখ টাকা যৌতুক সহ স্বর্ণাংলকার প্রদান করে। ৭ আগষ্ট দুপুরে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য বিলকিছকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। যৌতুকের টাকা দিতে অপরাগতা স্বীকার করায় বিলকিছের শরীরে কেরোসিন ঢেলে বসতঘরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় এবং বিলকিছ ৯ মাসের অন্তসত্ত্বা ছিল বলে তারা জানায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শরীরের সম্মুখভাগের অধিকাংশ স্থান আগুনে পুড়ে যায়।

ধারা ইউনিয়নের পূর্বধারা গ্রামে মোঃ রফিকুল ইসলামের কন্যা সুফিয়া আক্তার (২২) এর সহিত বিগত ৭ মাস পূর্ব হতে একই এলাকার উসমান আলীর পুত্র মোঃ শামছুল হক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। অবৈধ মেলামেশার ফলে মেয়েটি ৬ মাসের অন্তস্বত্তা হয়ে পড়ে। পরে প্রেমিক শামছুল হক ২টি বড়ি খানোর মাধ্যমে গত ২২ আগষ্ট সকালে মেয়েটির গর্ভপাত ঘটে এবং ৬ মাসের নবজাতক কন্যা শিশু মৃত প্রসব করেন।

গত ৯ ডিসেম্বর নিজের সন্তানকে দেখার জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সদর ইউপি চেয়ারম্যান পৌরশহরের উত্তর বাজারস্থ বাগান বাড়ি নামকস্থানে আসতে বলেন সহিদা নামক মহিলাকে। পরে মহিলাটিকে একা পেয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় চেয়ারম্যান সালেহ আহম্মদ। পরে ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ আহম্মদকে বিবাদী করে হালুয়াঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন, যাহার নং- ৭।

জানা যায়, পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশের তদন্তে উক্ত চেয়ারম্যানকে অভিযোগ হতে অব্যহতি প্রদান করা হয়।
হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোবরাকুড়া গ্রামের ১৩ বছর বয়সী এক আদিবাসী কিশোরী কন্যাকে একই গ্রামের প্রতিবেশী সুরুজ আলীর পুত্র রমজান আলী (১৮) ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে জব্বার আলীর পুত্র গিয়াস উদ্দিন ওরফে গেসু এর সহযোগিতায় সীমান্ত সংলগ্ন স্থানে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণ মামলাটির আসামীদেরকে ঘটনার ১৪ দিন পর নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানা এলাকা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আটক করেন থানা পুলিশ।

ধর্ষণ ও গণধর্ষণ এর ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সুধিমহল মনে করেন,অভিযোক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করা হলে এই সমস্ত অপকর্ম থেকে দুশচরিত্র ব্যক্তিরাও দূরে অবস্থান করবে। সামাজিক ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন মনে করেন। বিগত বছরের তুলনায় গত এক বছরে গণধর্ষনের মত একাদিক ঘটনা অত্র থানা এলাকায় ঘটেছে। যা পুলিশি নজরদারির অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

(জেসিজি/এসপি/জুলাই ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test