E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা

২০১৪ জুন ২৬ ০৮:৪৩:০৭
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা

চাঁদপুর প্রতিনিধি : কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নিষ্কাশন খাল ও সরকারি খালগুলো লীজের নামে অথবা অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করায় পানি সরতে না পারায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টির মূল কারণ। প্রতি বছর এভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এ সেচ প্রকল্পটি কৃষকের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার কলাকান্দা, মিলারচর, মাথাভাঙ্গা, পাঁচআনী, নাউরী, হলদিয়া, লুধুয়া, একলাশপুর, জোড়খালি, শিকিরচর, ছেংগারচর, কেশাইরকান্দি, জীবগাঁও, পাঠান বাজার, ঝিনাইয়া, মরাদন, ইসলামাবাদ, অলিপুর, নয়াকান্দি, সুজাতপুর ঠাকুরচর, রুহিতার পাড়, হানির পাড়,বদুরপুর, বাগানবাড়ী, নিশ্চিন্তপুর, দুর্গাপুর, লবাইরকান্দি, , ইসলামাবাদ, ফতেপুরসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ধানের বীজতলা ও রোপা ধান, বগি পাট, আখ, ফল ও কাঠ গাছের বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য খামার তলিয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা ফসলি জমিতে আবাদ করতে পারছে না।

বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও আবাদ করতে না পারায় কৃষক পরিবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কৃষকরা প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা না পাওয়ায় এ সেচ প্রকল্পকে তাদের জন্য অভিশাপ মনে করছেন।

হানির পাড় গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, জানি না এহন আমরা কি করুম, হুদিনাকালে পানি পাই না, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিয়ে জইম্মা সব ফসল তলাইয়া যায়। ফসল করতে গিয়া টাকা শেষ হইয়া যায়। ক্ষতির কারণে ফসল পাই না। এমনে আর কত দিন চলুম। হানির পাড় গ্রামের আলী আহম্মদ বলেন, প্রকল্পটি তৈরি হওয়ার পর থেকে আমরা বর্ষা আসলেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে মরি। আমাদের চাষের জমি তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

পাউবো কর্তৃপক্ষকে এ জলাবদ্ধতার ব্যাপারে প্রতি বছর জানালেও এ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয় নাই।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নিষ্কাশন খাল ও সরকারি খালগুলো লীজের নামে অথবা অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করার প্রতিযোগিতা চলে। খালগুলো ভরাট করে অথবা খালের ওপর দোকানপাট নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। পানি সরে যেতে না পারায় অল্প বৃষ্টিতেই মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি বিধান অনুযায়ী খালগুলো লীজ দেয়ার নিয়ম নেই। তাহলে কি করে লীজ দেয়া হচ্ছে। যদি লীজ দেয়া না হয়ে থাকে তাহলে খাল ভরাট ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে কিভাবে? সাধারণ মানুষ লীজের বিষয়টি জানতে চায়।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় ত্রুটি, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নিষ্কাশন খাল ও সরকারি খালগুলো দখল করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা, খালগুলো কচুরিপানা দিয়ে আবদ্ধ থাকায় ও পাম্প দ্বারা দ্রুত গতিতে বৃষ্টির পানি প্রকল্পের বাইরে না সরানোর ফলে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ার কারণ বলে সচেতন মহল মনে করেন।

জলাবদ্ধতা কয়েকদিন যাবৎ স্থায়ী হলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ পানি সরানোর দ্রুত ব্যবস্থা না করায় ফসলহানি ঘটছে। এভাবে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় এ প্রকল্পের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি বলে দাবি কৃষি পরিবারগুলোর। তা না হলে মূলধন হারিয়ে কৃষকরা পথে বসবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ এবার বোরো দানের মৌসুমে সঠিক সময়ে সেচ সুবিধা দিয়েছে। ফলে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এখানে বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতায় কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়। জলাবদ্ধতা রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে প্রকল্পটি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হবে।

(এমজে/জেএ/জুন ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test