E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুরস্কার দেয়া স্যারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় ভীত অদ্রিজা

২০১৭ জুলাই ২৩ ১৪:৪২:৫৮
পুরস্কার দেয়া স্যারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় ভীত অদ্রিজা

বরিশাল প্রতিনিধি : অদ্রিজা কর (১১) আগৈলঝাড়া সদরের শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। উপজেলা বন্দরের শান্তিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী পরিমল কর'র মেয়ে। সে ক্লাস ওয়ান থেকে ছবি আঁকে। এ জন্য বিভিন্ন সময় অনেক পুরস্কারও পেয়েছে সে। বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে তার ভালো লাগে।

এ জন্য স্বাধীনতা দিবসের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সে বঙ্গবন্ধুর ছবি একেছিল। ছবি আঁকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় পুরস্কার পেয়েছিল সে। পুরুস্কার পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছিল সে। অভিভাবকরাও মেয়ের পুরুস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দে ভেসেছিলেন।

তবে তার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি এখন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু অদ্রিজা কর এর মাঝে এখন ভয় কাজ করছে। তবে কিসের জন্য ভীত সে, বিষয়টি ১১ বছর বয়সী অদ্রিজা ভালোভাবে বুঝাতে পারছে না।

অদ্রিজা জানায়, পুরুস্কার দেয়া স্যারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বাবা ফেসবুক থেকে আমার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি সরিয়ে ফেলেছে। কারো সঙ্গে কথাও বলতে দিচ্ছে না বাবা-মা। আর অদ্রিজার পরিবার পড়েছে বিব্রতকর অবস্থায়।

অদ্রিজার বাবা পরিমল কর জানান, এ ঘটনার পর আমরাও বিব্রতরকর অবস্থায় আছি। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে আত্মীয়স্বজনও ফোন দিচ্ছে। এর সঙ্গে এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সংবাদকর্মী সকলেই আসছেন।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। উপজেলা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া ছবি স্বাধীনতা দিবসের কার্ডের প্রথম পেজে এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারীর ছবি কার্ডের পেছনের পেজে দিয়ে ছাপানো হবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম হওয়ার শিশুর ছবি প্রথম পেজে এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অদ্রিজা কর এর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি কার্ডের পিছনে ছাপা হয়। এতেই বিপত্তি দেখা দেয়। ওই ছবি দিয়ে ছাপানো কার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়েছে এবং এতে জাতির মানহানি হয়েছে অভিযোগে গত ৭ জুন আগৈলঝাড়ার তৎকালীন ইউএনও গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করা হয়।

আদালতের সমন পেয়ে ১৯ জুলাই স্বেচ্ছায় বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। জামিন শুনানির সময় বাদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজু ছাড়াও আওয়ামী মনা অর্ধশতাধিক আইনজীবী জামিনের বিরোধীতা করেন। এক পর্যায়ে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইউএনও তারিক সালমনের ডানহাতে একটি হাতকড়া চেপে ধরে দুই পাশে-পেছনে পাহাড়া দিয়ে তাকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যায়। ২ ঘণ্টা পর দুপুর দেড়টার দিকে বিচারক ফের তাকে জামিনের আদেশ দিলে ১০ হাজার টাকা বেলবন্ডে আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্তি পান তিনি।

এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে হাজত বাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা করায় গত শুক্রবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে সাময়িক বহিষ্কার করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিষয়টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হয়।

বরিশালের সাদা মনের মানুষ ও শিশু সংগঠক জীবন কৃষ্ণ দে বলেন, ছবিটি এঁকেছে পঞ্চম শ্রেণির অদ্রিজা কর নামের এক শিক্ষার্থী এবং কার্ডে সেটা বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে উল্লেখ করেও দেয়া আছে। দেশের কচিকাঁচা শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে উৎসাহ দেয়া কি অন্যায়? ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা কি অন্যায়? সেই ছবি কার্ডে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আঁকা ছবির জন্য সেই শিশুকে উৎসাহিত করা কি অবৈধ? এই ইস্যুর পর যদি শিশু-কিশোর, এমনকি বড়রাও ভালোবাসা থেকে কাঁচা হাতে বঙ্গবন্ধুকে আঁকতে গেলে ভয় পায়, অস্বস্তি বোধ করে তার দায়ভার কে নেবে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংগঠনিক কমান্ডার এনায়েত হোসেন চৌধুরি জানান, এ ঘটনাটি নেতিবাচক রাজনীতির অশুভ দিক। তার মতে শিশুদের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে ফেলার অপচেষ্টার প্রকাশ।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test