E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুমতির গর্ভে স্কুল, বাঁশতলায় পলিথিনের নিচে চলছে পাঠদান

২০১৭ জুলাই ২৫ ২০:১৯:৩৯
মধুমতির গর্ভে স্কুল, বাঁশতলায় পলিথিনের নিচে চলছে পাঠদান

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া-করগাতি গ্রামে অবস্থিত টি-করগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় চলতি  বর্ষা মৌসুমে খোলা আকাশের নিচে বাঁশতলায় পলিথিন টানিয়ে  বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে। এতে করে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতাকে দায়ী করেছে এলাকাবাসী।
 

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, এলাকাবাসীর উদ্যোগে ১৯৩০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়। ভবনটি নদীভাঙনের কবলে পড়ায় এর আগের বছর (২০১৪ সালে) চার কক্ষের একটি টিনের ঘর সরকারি বরাদ্দে নির্মিত হয়। এই টিনের ঘরটিও গত ১৫ দিন আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে বাঁশতলায় পলিথিন টানিয়ে ক্লাস হচ্ছে। এ নিয়ে তিনবার বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল।

বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী ২৪৩ জন। ভাঙনের কবলে পড়ায় গত দুই বছরে প্রায় এক’শ শিক্ষার্থী কমেছে। সাতটি পদের মধ্যে কর্মরত শিক্ষক আছেন পাঁচজন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে তেলকাড়া গ্রামে এই বিদ্যালয়টি অবস্থিত। নদীপাড়ে ভাঙনের কবলে এখন আছে বিদ্যালয়ের সামান্য জমি। সেখানে বাঁশঝাড়। এই বাঁশগাছের নিচে চলছে পাঠদান। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একই জায়গায় পাশাপাশি বেঞ্চে বসা। উপরে টাঙানো হয়েছে পলিথিন।

শিক্ষকেরা জানালেন, রোদ ও গরমের কারনে আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বাঁশঝাড়ের তলায়। আর বৃষ্টি ঠেকাতে পলিথিন। এখানে স্যাঁতসেতে পরিবেশ। আশপাশের বাগান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। খোলা জায়গা, তাই প্রায় মলমূত্র পাওয়া যায়। সকালে এসে পরিষ্কার করে ক্লাস নেওয়া হয়। অনেক আগেই শৌচাগার ও নলকূপ নদীতে বিলীন হয়েছে। এক দুর্বিষহ পরিবেশে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল হাসান বলেন, বাঁশগাছ পুরোপুরি রোদ ঠেকায় না। বৃষ্টি জোরে হলে জড়সড় হয়ে সবাই এক জায়গায় বসে। এই পরিবেশে শিক্ষা উপকরণও ব্যবহার করা যায় না। এভাবে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে। এদিকে বিদ্যালয়ে আসার কাঁচা রাস্তাটির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। এছাড়া কাদার জন্যও ওই রাস্তা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলেও দুর্ভোগ হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমান, উর্মি ও ফারহানা বলেন, সামনে সমাপনী পরীক্ষা। এ পরিস্থিতিতে খুব সমস্যা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য ইমরুল মল্লিক বলেন, এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোল্লা মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের কাগজপত্র, ফাইলপত্র, চক-ডাস্টার ইত্যাদি ব্যাগে ভরে প্রতিদিন বাড়িতে নিতে হয়। এতো ছেলেমেয়ে নিয়ে এলাকার কোনো বাড়িতেও উঠতে পারছি না। লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, এই বিদ্যালয়ের টিনসেড নির্মাণ করার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এলাকাবাসী জমি দিলে সেখানে এই টাকায় টিনসেড নির্মাণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লোহাগড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আল জহির বলেন, ওই এলাকাসহ ঘাঘা, মল্ল্কিপুর ও শিয়রবর এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজণীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরএম/এএস/জুলাই ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test