E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দীর্ঘদিনেও আধুনিকায়ন হয়নি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন

২০১৭ জুলাই ২৭ ১৭:৩১:০১
দীর্ঘদিনেও আধুনিকায়ন হয়নি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) : উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলে স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদীর শত বছরের প্রাচীন রেলওয়ে জংশনটির দীর্ঘদিনেও আধুনিকায়ন হয়নি। বারংবার প্রতিশ্র“তি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ফলে সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশীরভাগ মানুষের মনেই এখন একটিই প্রশ্ন ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশনটির উন্নয়ন ও রি-মডেলিং আদৌ হবে কি?

রেলবান্ধব বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রেলওয়ের অভূতপূর্ব উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ঈশ্বরদী রেল জংশন স্টেশন ও ইয়ার্ডে আধুনিকায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিগত জোট সরকার আমলেও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ডটি আধুনিকায়ন করা হবে বলা হলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

বিগত ৯ম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে ঈশ্বরদীর জংশন স্টেশনকে আধুনিকায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া (পাবনা-৪) আসনে টানা চারবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এই বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈশ্বরদী জংশনটি রি-মডেলিংয়ের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন। এই প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

১৮৬২ সালে বাংলাদেশের সাথে ভারতবর্ষের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সে সময় পাকশীস্থ পদ্মা নদীর সাঁড়াঘাটে রেল স্টেশন ছিল । ১৯১০ সালে পাকশীতে পদ্মানদীর উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৫ সালে এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে এবং ভারতের কলকাতার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্থাপিত হয়।

দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ইয়ার্ড ও ১৭টি রেললাইন রয়েছে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে। মূলত ব্রিটিশ আমল হতে দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ওই সময় ঈশ্বরদীর উপর দিয়ে অনেক যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করত। সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সুদীর্ঘ শত বছরের প্রাচীন এই জংশন ষ্টেশনের কোন পরিবর্তন হয়নি ।

বর্তমানে ২৪ ঘণ্টায় এই স্টেশন দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর ২৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও ১২টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে ১৭টি আন্তঃনগর, ৬টি মেইল ট্রেন ও ৭টি লোকাল। ৪ প্লাটফর্ম বিশিষ্ট স্টেশনটি পরিচালনার জন্য বর্তমানে ১৯টি বিভাগে প্রাায় দুই সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। ১৯১০ সাল হতে রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলাচলের জন্য ঈশ্বরদী ও পাকশীর মধ্যে ‘পাইলট’ নামে একটি ট্রেন চালু করা হয়। ঈশ্বরদী স্টেশন এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণকালে পাকশীতে পদ্মানদীর পাদদেশে গড়ে তোলা হয় বিভাগীয় রেলওয়ে অফিস। এই অফিস থেকে সেসময় সারা ভারতবর্ষের রেল চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতো।

নানাবিধ জর্জরিত ঈশ্বরদী রেল স্টেশন। এই স্টেশনে ২৪ ঘণ্টায় ২-৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু স্টেশনের বিশ্রামাগার, টয়লেট ও ফুটপাথ রয়েছে হকার, চোরাচালানী ও বখাটেদের দখলে। বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা প্রকট। আইন-শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন ও ইয়ার্ড জুড়ে। যদিও রেলওয়ে থানা এবং রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। জানা যায়, ঈশ্বরদী স্টেশনের ইয়ার্ড বেশিরভাগ সময় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানীদের দখলেই থাকে । নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত কতিপয় সদস্য এদের সহযোগিতা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন ট্রেনে চোরাচালানীরা পণ্যদ্রব্য ও মাদক নিয়ে যায় বিভিন্ন জেলায়। বিষয়টি রেলের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হওয়ার পরও আন্তঃ বিভাগের সাথে সমন্বয়হীনতার অভাবে সমাধান হচ্ছে না। টিকেট বিক্রির কাউন্টার সংলগ্ন টেম্পুস্ট্যান্ড, মালগুদাম, আইডব্লিউ অফিস, সাউথ কেবিন এলাকা, পিডব্লিউআই অফিস এলাকা, কলাবাগান এলাকা ও লোকোশেড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও চুয়ানি বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন রুটে চোরাচালানের মালামাল ট্রেনযোগে ঈশ্বরদী নিয়ে আসা হয়। চোরাচালানের এসব মালের মধ্যে ফেনসিডিল, সার, গেঞ্জি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের পিস, কসমেটিকস্, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উল্লে¬খযোগ্য। চোরাচালানের এসব মাল ঈশ্বরদী বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজার ও শহরের পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে।

এই জংশনটিকে ঘিরে প্রায় ৯শ রেলওয়ে বাসা রয়েছে। সম্প্রতি বাসাগুলোর বেশিরভাগই ড্যামেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ড্যামেজ বাসাগুলো অর্থের বিনিময়ে হাতবদল হয়। একেেশ্রণীর অসৎ কর্মচারী গোপনে এসব বাসা থেকে ব্যক্তিগত ভাবে মাসিক ভাড়া আদায় করে বলে ভাড়াে দের পক্ষ থেকে জানান হয়। আবার বসবাসকারীদের অনেকেই মাদক ব্যবসাসহ চোরাচালানের সাথে জড়িত।

ঈশ্বরদী রেল জংশন, স্টেশন ও ইয়ার্ড থেকে বৈধভাবে রেল কর্তৃপক্ষের কোটি কোটি টাকা আয় হলেও যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি ।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের কাছে এ ব্যাপারে জান্তে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে ভবিষ্যতে আরও উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। কিন্তু আধুনিক রেল জংশন অর্থাৎ রি-মডেলিং করনের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(এসকেকে/এসপি/জুলাই ২৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test