E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডিমলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় আটক ৩

২০১৭ আগস্ট ০৭ ১২:৫৮:৪১
ডিমলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় আটক ৩

নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারী ডিমলায় মধ্যযুগীয় কায়দায় ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর অভিযুক্ত প্রভাবশালী মহলটি গা ঢাকা দিয়েছে।

রবিবার দিনব্যাপী নীলফামারীর ডিমলায় বাইশপুকুর গ্রামের ঘটনাস্থলে পুলিশ ঘটনাটি দফায় দফায় তদন্ত করেন। এ সময় ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাববাদের জন্য ৩জনকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন দেবারু মামুদের পুত্র রফিকুল ইসলাম (৩৫) তার মাতা অপেয়া বেগম (৫২) ও গ্রাম পুলিশ সদার রশিদুল ইসলাম সরকার। নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (ডোমার সার্কেল) জিয়াউর রহমান জিয়া, ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, ওসি তদন্ত মফিজ উদ্দিন শেখ। সকাল ১০টায় ঘটনাটি প্রথমে তদন্তে যান ডিমলা থানার ওসি (তদন্ত) মফিজ উদ্দিন শেখ। দুপুরে ঘটনাটি তদন্ত যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম।

রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় গ্রামটি পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। নির্যাতিত শেফালী বেগম রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে মর্মে তার ভাই রমজান আলী এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন। গত শুক্রবার শেফালী বেগম (৩২) নামের এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে শারিরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছিল। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলন ঝাড় গ্রামে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে প্রভাবশালী নেতারা দিনদুপুরে শেফালী বেগম গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মর্মে গরুসহ গাছে বেধে পুলিশকে সংবাদ দেয়। নির্যাতনকারীদের হুমকীর কারণে ওই গৃহবধূ ডিমলা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়ে শনিবার সকালে নীলফামারী জেলার বাহিরের এক হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শেফালীর ভাই রমজান বলেন, আমার বোনকে দিনভর যারা অমানবিক নির্যাতন করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। কিন্তু আমার বোনকে প্রকাশ্যে নিলে একদিকে পুলিশের মামলার ভয় ও অন্যদিকে একটি প্রভাবশালী মহল হুমকির কারনে আত্বগোপনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কারণ নির্যাতনকারীরা তার অবস্থান জানান জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ শেফালী বেগম (৩২) উক্ত গ্রামের লালন মিয়ার স্ত্রী ও একই গ্রামের মৃত মবিয়ার রহমানের মেয়ে। এ সময় জীবন রক্ষার্তে শেফালী বেগম খালিশা চাপানি ৪নং ওয়ার্ডের আ. লীগ সভাপতি আব্দুল কাদের বাম হাতে কামর দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উক্ত নেতার নির্দেশে গ্রাম পুলিশের রশিদুল ইসলাম তাকে গাছের সাথে বেধে রাখে বলে শেফালী বেগম অভিযোগ করেন।

জমিজমা সংক্রান্ত এক বিবাদে শেফালীর বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

আগামী ২২ আগষ্ট হত্যার মামলা সাক্ষ্য রয়েছে। প্রভাবশালীরা ওই মামলা মিমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তারা পিতার হত্যা মামলা আপোষ না করায় সম্প্রতি আরেকটি মিথ্যা মামলা করেছে প্রতিপক্ষরা। ফলে শেফালীর একমাত্র ভাই রমজান পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলেই শেফালী ও তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনের খড়ক নেমে আসে।

নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রকাশিত সংবাদে ৭মাসের অন্তঃসত্তা গৃহবধুকে নির্যাতনের ঘটনাটি প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। মামলা চলমান প্রক্রিয়া রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্যাতিতা শেফালীর বিরুদ্ধে ২ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে দিন দুপুরে গরু চুরির ঘটনাটি সাজানো মনে হচ্ছে।

(এমআইএস/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test