E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জামালপুরে শতাধিক রেলওয়ে লেবেলক্রসিং এখন মৃত্যুফাঁদ

২০১৭ আগস্ট ১০ ২০:০০:২৮
জামালপুরে শতাধিক রেলওয়ে লেবেলক্রসিং এখন মৃত্যুফাঁদ

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুর-তারাকান্দি এবং জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ সেকশনে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় শতাধিক রেলওয়ে লেবেলক্রসিং। গেটব্যারিয়ার ও গেটম্যান না থাকায় সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও স্থানীয় সড়কে রেলক্রসিং অতিক্রম করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে ছোটবড় নানা ধরনের যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে হতাহতের ঘটনা।

সবশেষ বুধবার সন্ধ্যায় জামালপুর শহরের বিজিবি-চন্দ্রাঘুন্টি রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ৭ অটোবাইক যাত্রী নিহত হয়। এর আগে মেলান্দহে শ্যামপুর রেলক্রসিং পার হবার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় ৬ অটো রিক্সাযাত্রী। শহরের শেখেরভিটা রেলক্রসিংয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পায় ময়মনসিংহ কৃষি ইউনির্ভাসিটির ৩০ জন শিক্ষার্থী। ঝুঁকিপূর্ণ বেশক’টি রেলক্রসিংয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও প্রতিকারে কোনো উদ্যোগই নেই। ঘুম ভাঙছে না রেল কর্তৃপক্ষের। রেলক্রসিংগুলো যেন এখন আতংকের আরেক নাম। মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে রেলওয়ের এই লেবেলক্রসিংগুলো।

জামালপুর জংশনের এই দুটি সেকশনের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপুর্ণ ক্রসিং ৪টি। এর মধ্যে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কানিল রেলক্রসিং, জামালপুর-মেলান্দহ-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে শ্যামপুর রেলক্রসিং, জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কে শেখের ভিটা রেলক্রসিং ও জামালপুর-সরিষাবাড়ি সড়কে কালিবাড়ি রেলক্রসিং। জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়া অন্য ৩টিতে গেটব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়েই ক্রসিংগুলো দিয়ে চলাচল করছে মানুষজনসহ নানা যানবাহন।

মেলান্দহ-ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে ৩টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ হওয়ায় সব সময় ব্যস্ত থাকে এই সড়ক। ব্যস্ততম সড়কটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বাসট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি ও অটো রিক্সাসহ অসংখ্য যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি। ক্রসিংটিতে নেই গেট ব্যারিয়ার কিংবা গেটম্যান। বছর দুয়েক আগে অটোবাইক ও ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জন নিহতসহ অসংখ্য বার দুর্ঘটনা ঘটলেও গেটব্যারিয়ার স্থাপন এবং গেটম্যান নিয়োগে উদ্যোগ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।

সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপুর্ণ রেলক্রসিং হলো শেখের ভিটা। শেখের ভিটার বাসিন্দারা বলেন, একাধিক দুর্ঘটনায় হতাহতের পর সম্প্রতি অল্পের জন্য রক্ষা পায় শিক্ষা সফরে আসা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষার্থী। এই ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে দ্রুত গেট ব্যরিয়ার নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জামালপুর রেল সেকশনের আওতায় ময়মনসিংহের বিদ্যাগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে জামালপুর জংশন হয়ে তারাকান্দি এবং জামালপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথে অনুমোদিত রেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা মোট ৮৯টি। রেলের অনুমোদন থাকলেও এই ৮৯টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ৭৮টিতেই নেই গেট ব্যারিয়ার ও ৭৭টিতেই নেই কোন গেটম্যান। এছাড়া এই সেকশনে অননুমোদিত অবৈধ ক্রসিং রয়েছে ৪৫টি। প্রতিদিন এসব অরক্ষিত ক্রসিং পারাপার হচ্ছে অসংখ্য যানবহন। ফলে ঝুঁকিপুণ এসব ক্রসিং অতিক্রম করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে জামালপুর রেলওয়ে জংশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবরার হোসেন বলেন, রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যা তুলে ধরে গেটব্যরিয়ার স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগের চাহিদাপত্র একাধিক বার পাঠানো হয়েছে। আইনি জটিলতায় প্রক্রিয়াধীন বিষয়টি ঝুলে থাকায় গেটব্যারিয়ার স্থাপন শুরু করেও বন্ধ রাখা হয়েছে এবং গেটম্যান নিয়োগ হচ্ছে না।

জামালপুর সেকশনে রেলের অনুমোদিত ৮৯টি লেবেল ক্রসিংয়ের অধিকাংশই গুরুত্বপুর্ণ সড়ক-মহাসড়ক অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য যানবহন এসব ক্রসিং অতিক্রম করে চলাচল করে। ফলে যেকোন মুহুর্তে এসব ক্রসিংয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে সব সময়ই। আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠলেই গেট ব্যরিয়ার স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

(আরআর/এএস/আগস্ট ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test