E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজার পৌর সাবেক মেয়রের সময় কাটে এখন সাহিত্যচর্চায়

২০১৭ আগস্ট ১৬ ১৭:১০:৪৪
মৌলভীবাজার পৌর সাবেক মেয়রের সময় কাটে এখন সাহিত্যচর্চায়

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : দীর্ঘ প্রায় একযোগ তিনি মৌলভীবাজার পৌরসভার অত্যান্ত প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন, তার সময়ে পৌর এলাকায় বিভিন্ন অবকাঠামো সহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পাশাপাশি ঐ সময়ে বেড়েছে নাগরিক সেবার মান। পৌরসভার দ্বায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার দুইবারের সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন এর এখন সময় কাটে সাহিত্যচর্চায়।

এর বাহিরে নিজের ব্যবসাবানিজ্য দেখাশোনার পাশাপাশি সময়দেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড সহ মাঝে মধ্যে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতেও নিজের উপস্থিতি জানান দেন। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করার সময়ে এতটাই কর্মব্যস্থ ছিলেন যে, এ দীর্ঘ সময়ে ব্যস্ততার কারণে অনেকটা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাহিত্য চর্চা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন তিনি। ছাত্র জীবন থেকে কর্মজীবন সবসময়ই নিজেকে শিল্প-সাহিত্যের নিরন্তর চর্চার সঙ্গে যুক্ত রেখেছিলেন , জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে। একান্ত আলাপনে খোলামেলা এ প্রতিবেদককে তিনি এসব কথা বলেন।

বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আগের মতো এখন আর রাজনৈতিক ব্যস্ততা তেমন আর নেই । অন্যদিকে বিগত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রথমে আলোচনায় তার নাম থাকলেও পরবর্তিতে নিজ অনুষারী সহ সকলকে হতাশ করে এ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহন করেননি। এর পর থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র দুটিই পদই এখন ইতিহাসের পাতায় অমলিন।

এক সময়ে প্রবন্ধ, নিবন্ধন, ভ্রমনকাহিনী ও সমকালিন বিভিন বিষয়ে লেখালেখি করলেও মাঝে রাজনৈতিক নেতৃত্ত থেকে পৌরসভার মেয়র এ দুটি পদে বিরামহীন কর্মব্যস্ততার কারনে এসবকে আর সময় দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। সব কিছু ছেড়ে দিয়ে নিজেকে আবার জড়াতে চাচ্ছেন শিল্প ও সাহিত্যের সব শাখায়। নিজ বাসায় গড়ে তুলেছেন আত্মজীবনী, রচনা সমগ্র, কবিতা, সমকালিন বিভিন্ন লেখা সমৃদ্ধ দেশবিদেশের নন্দিত সব লেখকের বিশাল সাহিত্য ভান্ডার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তার গড়ে তোলা সাহিত্য ভান্ডার থেকে নিজের পছন্দমতো বই বের করে তা মনদিয়ে পড়ছেন।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দজবালি গ্রামের সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে পিতা আলহাজ আব্দুল মছব্বির ও মাতা সৈয়দা আমিরুননেছার ঘরে ১৯৫৯ সালের ১ জুলাই জন্ম হয় ফয়জুল করিম ময়ুনের । ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে ফয়জুল করিম ময়ূন সবার বড়। ১৯৭৩ সালে সদর উপজেলার রাখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ভর্তি হন মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৭ সালে এস,এস,সি পাশ করে ভর্তি হন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে সেখান থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ,এস,সি পাশ করে ভর্তি হন সিলেটের মদনমোহন কলেজে, ঐ সময় মদনমোহন কলেজের সাহিত্যাঙ্গনেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তিতে তার সম্পাদনায় দিশারী নামে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ম্যাগাজিন বের হয়। একই কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে বিকম পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্থ তৎকালিন জগন্নাথ কলেজে। সেখান থেকে ১৯৮৩ সালে ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ঢাকায় অবস্থানরত সিলেটের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তুলেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি একই সাথে তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবেও দ্বায়িত্ব পালন করেন।

মৌলভীবাজারের এক সময়ের অত্যান্ত প্রতাপশালী ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত¡ ও মৌলভীবাজার সদর পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন ছোটবেলা থেকেই অর্থাৎ ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় না হলেও শিল্প-সাহিত্য, সামাজিক ও সাংকৃতিক অঙ্গনের সাথে ছিলেন অত্যান্ত সক্রিয়। পড়ালেখা শেষ করে ইনকামট্যাক্স উকিল হিসেবে আইন পেশার মাধ্যমে শুরু করেন নিজের কর্মময়জীবন।

দুই ছেলে ও এক মেয়ে সহ ফয়জুল করিম ময়ূনের রয়েছে তিন সন্তান। একমাত্র মেয়ে চিকিৎসা বিষয়ে পড়ছে সিলেটের রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর বড় ছেলে পড়ছে ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সব শেষ ছোট ছেলে পড়ছে স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলে।

শিক্ষা জীবনে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও ছিলেননা এতটা সক্রিয় । ১৯৯২ সালের দিকে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের হাত ধরে জড়িয়ে পরেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) রাজনীতির সঙ্গে। শুরু হয় রাজনৈতিক উত্তানজীবনের নতুন পথচলা। এর পর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে, রাজপথ থেকে রাজনীতির অন্ধরমহল সর্বশেষ ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত করে ফয়জুল করিম ময়ূনকে।

১৯৯৬ সালের পর থেকে আওয়ামীলীগ নেতৃত্তাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুরে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার বিরুধী রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পরেছিল দেশের নানা প্রান্তে । সেসময় বিএনপি,জামাত,খেলাফত মজলিশ ও জাতীয় পার্টি মিলে গঠিত হয় চারদলীয় জোট। তখনকার সময়ে জেলা বিএনপির মূল কান্ডারী ছিলেন, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান, আর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফয়জুল করিম ময়ূন সেই সুবাদে তখনকার সরকার বিরুধী রাজনীতির মাঠ ছিল অনেকটা ফয়জুল করিম ময়ূনের নিয়ন্ত্রনে ।

একটানা দীর্ঘ রাজপথে আন্দোলন শেষে ২০০১ সালে তৎকালিন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারকে নির্বাচনে পরাজিত করে সংখ্যাঘরিষ্টতা অর্জন করে ক্ষমতায় বসে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্তে চারদলীয় জোট সরকার । মন্ত্রীসভা গঠিত হলে তাতে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে সাইফুর রহমান নাম আসলে জেলার রাজনীতিতে আরো ক্ষমতাবান হয়ে জান তখনকার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল করিম ময়ূন।

সেই সুবাধে ২০০৪ সালের মে মাসের দিকে মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে দলের সমর্তন নিয়ে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়লাব করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও তিনি রেডক্রিন্টে সোসাইটির সম্পাদক, সৈয়দ শাহমোস্তফা কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতি, জাতীয় সমাজকল্যাণ সংস্থার সদস্য ও পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক, রোটারী ক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করে গেছেন বিভিন্ন সময়ে।

এছাড়াও তার সময়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার অভূতপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়। যেমন, শহরের আদালত সড়ক এলাকায় ৫তলা বিশিষ্ট আধুনিক মিনি সুপার মার্কেট নির্মান, ৫ তলা বিশিষ্ট টিসি মার্কেট নির্মান, ৫তলা ফাউন্ডেশনে সত্তার মার্কেট নির্মান, মাতারকাপন এলাকায় সুইপার কলোনি নির্মান, কাজিরগাও পুকুরের ঘাট নির্মান, পৌরসভার সামনে মেয়র চত্তর নামে পার্ক নির্মান, ডিসি স্কয়ার নির্মান, আধুনিক পৌর কমিউনিটি সেন্টার নির্মান, জনমিলনকেন্দ্র, আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মান, স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মান ( জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র) টাইলস দিয়ে আধুনিক ফুটপাত নির্মান, মনুনদীর তীরে ঘাট নির্মান, আধুনিক পৌর সম্মেলন কক্ষ স্থাপন,স্টাফ কোয়ার্টার নির্মান, পৌর এলাকায় সড়ক বাতি, টিকরবাড়ী কবরস্থান সংরক্ষণ, শহীদ মিনার স্থাপন, সাত শহীদের গণকবর স্থাপন, পৌর এলাকার সকল মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের ভাতা প্রদান, পৌরসভার আধুনিক আসবাব পত্র ক্রয়, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন।

এর বাহিরে পৌরসভার মেয়র থাকাকালিন সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার আমন্ত্রনে ফিলিপাইন,জাপান, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক,থাইল্যান্ড,কানাডা, মালেশিয়া, ভারত ও ইতালি সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেন ।

ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, দীর্ঘ সময় জুড়ে রাজনীতি ও সমাজের সেবায় আতœনিয়োগ করায় তেমন সাহিত্যচর্চার সুযোগ হয়ে উঠেনি, তাই ভাবছি এখন নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা করবো। তিনি জানান, বর্তমানে আমি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেশবিদেশের প্রখ্যাত লেখকদের বই পড়ছি পাশাপাশি এবিষয়ে উচ্চতর গবেষনা কাজও চালিয়ে যাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে নয় বরং আগামীতে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশ সেবায় নিজেকে আতœনিয়োগ করবো।

(একে/এসপি/আগস্ট ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test