E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘একনা ঝরি আসলে সইগ মোর ভিজি যায়’

২০১৭ আগস্ট ১৯ ১৫:২৯:৪৩
‘একনা ঝরি আসলে সইগ মোর ভিজি যায়’

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : ‘বাহে ২০বছর ধরি আবাসনত পড়ি আছং। আজ পর্যন্ত সরকারী একনা সাহায্য পাং নাই। যে ঘর কোণা দিছে তাও উপর দিয়া পানি ঝড় ঝড় করি পড়ে। কোন রকমে একনা প্লাস্টিক আনি উপরে দিয়া আছং। একনা ঝরি (বৃষ্টি) আসলে সইগ মোর ভিজি যায়। কোন রকমে জড়োসড়ো হয়া থাকং।’

কথাগুলো উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বন্যাদূর্গত এলাকা কালুয়ার চর জয়কুমর সরকারী আবাসন প্রকল্পের ছিন্নমূল ভূমিহীন ষার্টদ্ধো ফাতেমা বেগমের। তার পরিবারের লোকসংখ্যা ৫জন। একটা রুমেই তাদের বসবাস। শুধু ফাতেমা বেগম নয়, এ রকম শতাধিক পরিবারের একই অবস্থা এই আবাসনে।

গত ১৯ আগষ্ট শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বন্যাদূর্গত এলাকার ধরলা নদীর তীরে জয়কুমর আবাসন প্রকল্পটির ঘরগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হলেও অনেকে ঘরের উপর পলিথিন বিছিয়ে দিয়ে কোন রকমে পরিবার-পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছে। এবারে শ^রণকালের বন্যায় প্রবল স্রোতের পানি আবাসন প্রকল্পে উঠে ঘরগুলো নিমর্জ্জিত হয়। এসময় অনেক পরিবার এসব ঘর ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমায়।

জয়কুমর সরকারী আবাসন প্রকল্পের ২০টি লম্বা লম্বা ঘরের ব্লক করে দেয়া হয়েছে। সেখানে আবার প্রতিটি ব্লকে ১০টি করে রুম বের করে সহায় সম্বলহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য একটি করে রুম বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানে ২০০টি পরিবারের বসবাস রয়েছে। আবাসনের মানুষের জন্য খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির গভীর-অগভীর নলকূপ, আলোর জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। নদী তীরবর্তী আবাসন প্রকল্পটি হওয়ায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার পাশেই তিন তলা বিশিষ্ট জয়কুমর কমিউনিটি সেন্টার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে।

জয়কুমর সরকারী আবাসন প্রকল্পটিতে ২০টি ব্লকের ২০০টি রুমের মধ্যে প্রায় ১শ পরিবার বসবাস করছে। আবাসনের টিনগুলো মরিচা ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। আবাসনের বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষ হাসিনা বেগম(৪৫), মর্জিয়া বেগম(৪০), কাজলী বেগম(৩৫), বেগম(৫২), ফাতেমা বেগম (৫৬), শাহিদা বেগম(৪৫), হাসনা বেগম(৪০), মরিয়ম বেগম(৪৫), শাহিদা বেগম(৪২), বিউটি বেগম(৩৫), তাজুল ইসলাম(৪০), শাহিনা বেগম (৩২), আঃ হামিদ(৬০), শাহেব উদ্দিন(৫০) সহ অনেকে জানান, বন্যার সময় ওই প্রকল্পটির উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করে। টানা ৬দিন ওই আবাসনে পানি জমে থাকে। ফলে ছিন্নমূল আবাসনের মানুষের সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বসবাসের একবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বন্যার পানি নেমে যাওয়া সাথে সাথে তারা পূণরায় ওই রুমগুলোতে আশ্রয় নেয়। এখন আবাসনে চারিদিকে পচাঁ-সরার দুর্গন্ধ ছুটছে। গবাদীপশু গরু-ছাগলের খাদ্য চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ৬দিন ধরে আবাসনের ছিন্নমূল মানুষ চুলায় রান্না করতে পারেনি।

তারা আরো জানান, টিউবয়েল না থাকায় বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নাই। আবাসনে সঠিকভাবে তদারকি না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষরা। ফলে অপুষ্টিতে ভূগছে মা ও শিশুরা। আবাসনের ছিন্নমূল মানুষরা অভিযোগ করেন, সরকার ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য ঘর, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা, বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবয়েল, আলোর জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দিয়েছে। কিন্তু সরকারীভাবে কোন তদারকি না থাকায় সবকিছু নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এখানে এখন আর স্বাস্থ্য সম্মত কিছুই নেই। সরকারী কোন সাহায্য পাওয়া যায় নাই। তবে বর্তমান ইউএনও ( উপজেলা নির্বাহী অফিসার) মোঃ রফিকুল ইসলাম যোগদান করার পর ২বার খোঁজ-খবর নিয়েছে।

এই প্রথম ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকদিন আগে ১০কেজি করে চাল দিয়েছে আবাসনের পরিবারগুলোকে। সেখানেও ঘাপলা রয়েছে। আবাসনের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনায় অকালে ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। তারা অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারে না। বছরের বেশীরভাগ সময়েই ছিন্নমূল মানুষরা কর্মহীন হয়ে থাকে। তাই বিশুদ্ধ পানীয় খাদ্যের অভাব তাদের সারা বছরই লেগে থাকে।

এছাড়া আবাসনের ছিন্নমূল মানুষ বেশীরভাগ সময় চিকিৎসার অভাবে এবং অপুষ্টি জনিত কারনে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। সবমিলে সরকারী এই জয়কুমর আবাসনটির পূর্ণ সংষ্কার দাবি করে চাহিদা পূরণের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুজ্জামান হক বুলু জানান, আবাসনের মানুষরা আসলেই অবহেলিত। তারা তেমন সুযোগ সুবিধা পায় না। কারণ যা সরকারীভাবে বরাদ্দ আসে, তাই গোটা ইউনিয়নের অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া হয়। তাই আলাদাভাবে তাদের বরাদ্দ দেয়া উচিত।

(পিএমএস/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test